এক ব্যক্তির প্রতি অন্যায্য তদন্ত ও অভিযোগ আনার দায় স্বীকার করে তাঁর কবরে গিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করেছে জাপানের টোকিও পুলিশ ও প্রসিকিউশন কর্তৃপক্ষ। ওই ব্যক্তির নাম শিজুও আইশিমা। তিনি ওহকাওয়ারা কাকোহকি নামের একটি যন্ত্রপাতি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা ছিলেন।
যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, আজ সোমবার (২৫ আগস্ট) ইয়োকোহামায় আইশিমার কবরে গিয়ে ফুল অর্পণ ও নতজানু হয়ে ক্ষমা চান টোকিও মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-সুপারিনটেনডেন্ট জেনারেল তেতসুরো কামাতা, সুপ্রিম পাবলিক প্রসিকিউটরস অফিসের তাকাশি কোইকে ও টোকিও ডিস্ট্রিক্ট প্রসিকিউটরস অফিসের হিরোশি ইচিকাওয়া। এ সময় সেখানে আইশিমার স্ত্রী ও দুই সন্তান উপস্থিত ছিলেন।
২০২০ সালে আইশিমাকে সংবেদনশীল যন্ত্রপাতির অবৈধ রপ্তানিতে সম্পৃক্ততার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তিনি বারবার নির্দোষ দাবি করলেও জামিন মেলেনি। টানা ৮ বার জামিন আবেদন ব্যর্থ হওয়ার পর গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসার জন্য সাময়িক মুক্তি পান। তবে তিনি আর সুস্থ হতে পারেননি। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ৭২ বছর বয়সে মারা যান।
পরে তদন্তে প্রকাশ পায়, আইশিমা ছিলেন নির্দোষ এবং অভিযোগ প্রমাণে প্রয়োজনীয় প্রমাণ উপেক্ষা করা হয়েছিল। মামলাটির তদন্তেও শৃঙ্খলাভঙ্গ ঘটেছিল। একই মামলায় প্রতিষ্ঠানটির প্রেসিডেন্ট মাসাকি ওকাওয়ারা ও সাবেক পরিচালক জুনজি শিমাদাকে মুক্তি দেওয়া হলেও জীবিত অবস্থায় ন্যায়বিচার পাননি আইশিমা।
টোকিও হাইকোর্ট পরে এই তিনজনের বিরুদ্ধে আনা গ্রেপ্তার ও অভিযোগকে অবৈধ ঘোষণা করেন এবং রাষ্ট্র ও টোকিও প্রশাসনকে মোট ১৬৬ কোটি ইয়েন ক্ষতিপূরণের আদেশ দেন। আদালত তদন্তকারীদের ‘অবিচার ও বেআইনি প্রক্রিয়া’ ব্যবহারের জন্য কঠোর সমালোচনাও করেন।
আইশিমার কবরে গিয়ে ক্ষমা প্রার্থনার সময় প্রসিকিউটর ইচিকাওয়া বলেন, ‘আমরা অবৈধভাবে আটক ও অভিযোগ এনে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত। জামিন নামঞ্জুরের কারণে তাঁর চিকিৎসার সুযোগও কেড়ে নেওয়া হয়েছিল।’
তবে আইশিমার স্ত্রী বলেছেন, ‘আমি ক্ষমা গ্রহণ করছি, কিন্তু কখনোই ক্ষমা করব না।’
এর আগে ২০২৩ সালে আরেকটি বহুল আলোচিত ঘটনায়, প্রায় ছয় দশক কারাবন্দী থাকার পর নির্দোষ প্রমাণিত ইওয়া হাকামাদার কাছে ব্যক্তিগতভাবে ক্ষমা চেয়েছিলেন শিজুওকা প্রিফেকচার পুলিশের প্রধান। এই ঘটনাকে জাপানের বিচারব্যবস্থায় ভুল স্বীকারের দৃষ্টান্ত হিসেবেই দেখা হয়।