হোম > বিশ্ব > ভারত

তিনটি সন্তানের কম হলে নিশ্চিহ্ন হওয়ার আশঙ্কা—আরএসএস নেতার মন্তব্যে বিতর্ক

কলকাতা প্রতিনিধি  

মোহন ভাগবত। ছবি: সংগৃহীত

রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) প্রধান মোহন ভাগবতের বক্তব্যের জেরে ভারতের জনসংখ্যা নীতি নিয়ে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে আরএসএসের শতবর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত বক্তৃতা সিরিজের সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘ভারতের প্রতিটি পরিবারে অন্তত তিনটি করে সন্তান থাকা উচিত।’ তাঁর যুক্তি, ‘দুটি সন্তান কোনো পরিবারকে দীর্ঘ মেয়াদে টিকিয়ে রাখার জন্য যথেষ্ট নয়, সমাজ ও বংশধারা রক্ষার জন্য অন্তত তিনজন প্রয়োজন।’

ভাগবতের এই মন্তব্য সামনে আসতেই তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে। এনডিটিভি, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ইন্ডিয়া টুডে, টাইমস অব ইন্ডিয়া—সবাই শিরোনাম করে এই খবর প্রকাশ করে। মন্তব্যের মূল ভিত্তি তিনি ব্যাখ্যা করেছেন সংখ্যাতত্ত্ব দিয়ে। তিনি বলেন, ‘ভারতের জনসংখ্যা নীতি অনুসারে পূর্ণ স্তরে পৌঁছাতে গড়ে ২ দশমিক ১ জন সন্তান প্রয়োজন। কিন্তু বাস্তবে ২ দশমিক ১ মানে দাঁড়ায় তিনজন। তাই তিন সন্তানই হওয়া উচিত।’

এখানেই থেমে থাকেননি ভাগবত। তিনি বলেন, ‘চিকিৎসক ও সমাজবিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, তিন সন্তান হলে মা ও সন্তানের স্বাস্থ্য ভালো থাকে, পরিবারে বোঝা সুষমভাবে ভাগ হয় এবং সন্তানেরা একে অপরের সঙ্গে মেলামেশা শেখে। তাঁর মতে, ‘দুই সন্তানের পরিবারে সন্তানরা প্রায়ই একাকিত্বে ভোগে, কিন্তু তিনজন থাকলে তারা দায়িত্বশীলতা ও সহনশীলতা শেখে।’

ভাগবতের বক্তব্যে আরেকটি প্রসঙ্গ বিশেষভাবে আলোচনায় এসেছে। তিনি বলেন, বিভিন্ন সম্প্রদায়ে জন্মহার দ্রুত কমছে। বিশেষত হিন্দু পরিবারে সন্তান সংখ্যা নেমে যাচ্ছে আশঙ্কাজনকভাবে। অন্য সম্প্রদায়েও কমছে জন্মহার। ‘শাস্ত্রে বলা আছে, যে সম্প্রদায় বংশবিস্তার করে না, তারা ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যায়।’ যোগ করেন আরএসএস নেতা।

তাঁর এই বক্তব্যকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা সরাসরি একধরনের সতর্কবার্তা হিসেবেই দেখছেন।

ভারতের পরিবার পরিকল্পনা নীতির দিকে তাকালে দেখা যায়, ষাট ও সত্তরের দশক থেকে দেশজুড়ে প্রচার চালানো হয়েছিল—ছোট পরিবার, সুখী পরিবার। বিশেষ করে জরুরি অবস্থার সময় (১৯৭৫-৭৭) জোর করে জন্মনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি চালানোর পর ‘দুই সন্তান নীতি’ কার্যত সরকারি অবস্থান হয়ে দাঁড়ায়। ভাগবতের বক্তব্য সেই দীর্ঘ প্রচলিত অবস্থান থেকে একেবারে ভিন্ন।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়াও এসেছে দ্রুত। কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বলেছেন, ‘যখন সারা পৃথিবী জলবায়ু সংকট, খাদ্যঘাটতি ও সীমিত সম্পদের ব্যবহার নিয়ে চিন্তিত, তখন ভাগবতের মতো প্রভাবশালী নেতা তিন সন্তানের কথা বলে দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করেছেন।’ বামপন্থী নেতারাও সমালোচনা করেছেন এই বক্তব্যের। তাঁদের মতে, এটি ভারতের সংবিধান-সম্মত পরিবার পরিকল্পনা নীতির পরিপন্থী।

তবে আরএসএস নেতার এই অবস্থানের বিষয়ে বিজেপির ভেতরে দ্বিধা দেখা গেছে। কেউ কেউ ভাগবতের বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে বলেছেন, এটি আসলে জন্মহারের ভারসাম্য রক্ষার যুক্তি। অন্যদিকে সরকারি পর্যায় থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসেনি। বিশ্লেষকেরা বলছেন, আরএসএসের বক্তব্য সরাসরি সরকারের নীতি নির্ধারণ করে না, তবে বিজেপির রাজনীতিতে এই সংগঠনের প্রভাব অনস্বীকার্য। ফলে ভাগবতের মন্তব্যকে একেবারে হালকাভাবে নেওয়া যাবে না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের মোট প্রজনন হার এখন প্রায় ২ দশমিক ০১, অর্থাৎ প্রতিস্থাপন স্তরের কাছাকাছি। দক্ষিণ ভারতের অনেক রাজ্যে এই হার আরও নিচে নেমে গেছে—১ দশমিক ৬ বা ১ দশমিক ৭। দীর্ঘ মেয়াদে এর প্রভাব পড়বে সমাজে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর ওপর। ভাগবতের বক্তব্যকে এই প্রেক্ষাপটেই বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।

সমাজবিজ্ঞানীদের একাংশের মতে, ভাগবতের যুক্তিতে কিছু বাস্তবতা আছে। জনসংখ্যার ভারসাম্য নষ্ট হলে অর্থনীতি ও শ্রমবাজারে প্রভাব পড়বে। আবার অন্যরা বলছেন, এই বক্তব্যের অন্তরালে ভোটের রাজনীতির হিসাবও আছে। কারণ সম্প্রদায়ভিত্তিক জন্মহার নিয়ে বিতর্ক ভারতীয় রাজনীতিতে বরাবরই বড় ইস্যু। ভাগবতের সাম্প্রতিক মন্তব্য সেই বিতর্ককে উসকে দিয়েছে।

ফিলিস্তিনসহ ৬ দেশের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্রের

ট্রাম্পের ১০ বিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ মামলা প্রতিহতের ঘোষণা দিল বিবিসি

টান দিয়ে নারীর মুখের নিকাব সরিয়ে তোপের মুখে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার

বন্ডাই বিচে হামলাকারীকে থামাতে গিয়ে প্রাণ হারান এক বৃদ্ধ দম্পতিও!

৩০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন ভারতীয় নারী, গ্রিন কার্ড সাক্ষাৎকারে গিয়ে আটক

পাকিস্তানি বলে গুঞ্জন—বন্ডাই বিচের হামলাকারীরা আসলে ভারতীয়

বিশ্বজুড়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের বীজ বুনেছেন ট্রাম্প—ইয়েল বিশেষজ্ঞের সতর্কতা

ব্রাজিলে ধসে পড়ল ‘স্ট্যাচু অব লিবার্টির’ ১১০ ফুট উঁচু রেপ্লিকা

ক্যানসার আক্রান্ত শিশুদের সঙ্গে প্রতারণা, ৪০ লাখ ডলার আত্মসাতের নেপথ্যে এক ইসরায়েলি

বিজয় দিবসে রাহুলের পোস্টেও বাংলাদেশ নেই, একাত্তরে সীমান্ত রক্ষায় ‘ভারতীয় বীর’দের শ্রদ্ধা