হোম > বিশ্ব > মধ্যপ্রাচ্য

নারীকে অপহরণ ও দীর্ঘদিন নির্যাতন করা ব্যক্তি এখন সিরিয়ার সেনা কর্মকর্তা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­

গত বছর দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে সিরিয়ার নেতৃত্বে আসেন অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমাদ আল-শারাআ। নতুন অধ্যায়ে তিনি মানবাধিকার রক্ষার অঙ্গীকার করেন এবং ইউরোপ-আমেরিকার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের উদ্যোগ নেন। কিন্তু এসব প্রতিশ্রুতির পেছনে এক ভয়াবহ বাস্তবতা লুকিয়ে আছে। সিএনএন জানিয়েছে, একজন কুখ্যাত কমান্ডারকে তিনি সামরিক বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে বসিয়েছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়—সাইফ বোলাদ আবু বকর নামের ওই কমান্ডারের নেতৃত্বাধীন হামজা ডিভিশনের বিরুদ্ধে অপহরণ, যৌন নির্যাতন ও নির্যাতনের অভিযোগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

সিএনএনের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে ভিডিও, ছবি এবং ভুক্তভোগীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে বোলাদের অধীনে সংঘটিত নারকীয় নির্যাতনের নতুন প্রমাণ তুলে ধরা হয়েছে। তিনি বর্তমানে সিরিয়ার সবচেয়ে জনবহুল প্রদেশ আলেপ্পোর একটি সামরিক ইউনিটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

২৯ বছর বয়সী সিরীয় অধিকারকর্মী লনজিন আবদো বলেন, ‘এই নিয়োগ আমাদের যন্ত্রণার প্রতি এক নির্মম অবহেলা।’ হামজা ডিভিশনের হাতে তিনি ও তাঁর বোন দুজনই অপহরণ ও নির্যাতনের শিকার হন। দীর্ঘ তিন বছর ধরে একের পর এক গোপন বন্দিশালায় ঘুরে বেড়ানো তাঁদের জীবন ছিল ক্ষুধা, নিপীড়ন আর ভয়াবহ অপমানের এক দৃষ্টান্ত।

আবদোর ভাষ্যমতে, তাঁদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয় ২০১৮ সালে আফরিন শহর থেকে। তুরস্ক-সমর্থিত সিরিয়ান ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স (এসএনএ) ওই সময় কুর্দি অধ্যুষিত এলাকায় অভিযান চালাচ্ছিল। অপহৃত হওয়ার পর সাত মাস হুওয়ার কিলিসের ঘাঁটিতে এককভাবে বন্দী ছিলেন আবদো। পরে তাঁকে বিভিন্ন গোপন বন্দিশালায় স্থানান্তর করা হয়। এসব বন্দীশালায় ছিল তাঁর ছোট বোন, আরও কয়েক নারী এবং দুটি শিশু।

সাক্ষাৎকারে আবদো বলেন, ‘আমাদের খাবারে থাকত পোকা, টয়লেট ঘিঞ্জি আর অন্ধকার, গায়ে জোঁক, বিছানায় উকুন আর চিকিৎসাহীনতায় শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ত।’ তাঁরা দিনে দিনে বেঁচে থাকার আশা হারিয়ে ফেলেছিল। অনেক নারী আত্মহত্যার চেষ্টাও করে।

একাধিক ভুক্তভোগী জানিয়েছেন, এই নির্যাতনের মূল হোতা সাইফ বোলাদ নিজেই বেশ কয়েকবার ওই বন্দীশালায় গিয়েছিলেন এবং অধীনস্থদের নির্যাতন চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলেন।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন গত মে মাসে বোলাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এবং তাঁকে আলাওয়ি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত করে।

এদিকে, নির্যাতনের শিকার আবদো বর্তমানে ফ্রান্সে অবস্থান করছেন। তিনি ‘লেলুন’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তুলেছেন, যা অপহৃত সিরীয় নারীদের সহায়তা প্রদান করে। তাঁর সংগ্রাম থেমে নেই। তিনি চান, যারা নির্যাতনের নেতৃত্ব দিয়েছে, তারা যেন ন্যায়বিচারের মুখোমুখি হয়।

২০২০ সালের ডিসেম্বরে তিনি মুক্তি পান আবদো। মুক্তির পরও নির্যাতনের স্মৃতি তাঁকে তাড়া করে বেড়ায়। ২০২২ সালে জেলখানায় ধারণ করা ভিডিও ও চুলের ছবি পাঠিয়ে তাঁকে হুমকিও দেওয়া হয়েছিল।

সিরিয়ার নতুন সেনা কাঠামোতে আরও কয়েকজন অভিযুক্ত কমান্ডার আছেন—যেমন মোহাম্মদ হুসেইন আল-জাসিম (আবু আমশা) ও আহমাদ ইহসান ফায়াদ আল-হায়েস। তাঁরা এখন যথাক্রমে হামা ও সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলে দায়িত্বপ্রাপ্ত। এদের বিরুদ্ধেও অপহরণ, চাঁদাবাজি ও হত্যার অভিযোগ আছে।

সিএনএন–এর হাতে আসা ভুক্তভোগীদের কিছু ছবি ও নমুনা

মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ ব্রায়ান কার্টার বলেছেন, ‘আল-শারাআ এমন এক রাজনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করতে চাচ্ছেন, যেখানে এই মিলিশিয়াগুলোকে বাইরে রাখলে নতুন সংঘর্ষের সম্ভাবনা তৈরি হতো।’

তবে যারা নির্যাতনের শিকার, তাঁদের কাছে এসব ব্যাখ্যার কোনো মূল্য নেই। আবদো বলেন, ‘এই সব নির্যাতনকারী যখন ক্ষমতায় আসে, তখন আমাদের মনে হয়, আমাদের কষ্ট কেউই বুঝছে না। আমরা সেই দেশে আর ফিরতে পারি না, যেখানে আমাদের নির্যাতকেরা এখন শাসক হয়ে গেছে।’

প্যারিস সফরে গিয়ে আল-শারাআ সিরীয় অধিকারকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করলেও আবদোকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। যদি সুযোগ পেতেন, তিনি প্রেসিডেন্টকে বলতেন—‘আপনি আমাদের হয়ে কথা বলার কথা, আমাদের অধিকারের রক্ষক হওয়ার কথা, অথচ আপনি উল্টো কাজ করছেন।’

পারমাণবিক সাবমেরিন থেকে ৩৫০০ কিমি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা ভারতের

চীনে এক সন্তান নীতির প্রবক্তার মৃত্যু, শ্রদ্ধার চেয়ে সমালোচনাই বেশি

কম্বোডিয়ায় বিষ্ণুমূর্তি গুঁড়িয়ে দিল থাই সেনারা, ভারতের তীব্র নিন্দা

৮০ হাজার অবৈধ অভিবাসীকে গুদামে রাখার পরিকল্পনা ট্রাম্পের

ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসনকে ‘অপরাধ’ গণ্য করে আলজেরিয়ায় আইন পাস

ভেনেজুয়েলার আশপাশে ১৫ হাজার সেনা, ‘কোয়ারেন্টিন’ আরোপের নির্দেশ যুক্তরাষ্ট্রের

ভারতে বাসে আগুন, জীবন্ত দগ্ধ হয়ে ৯ জনের মৃত্যু

থাই-কম্বোডিয়া সীমান্তে গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো বিষ্ণু মূর্তি, নিন্দা জানাল ভারত

গাজায় ধ্বংসস্তূপের মাঝেই বড়দিনের আনন্দ খুঁজছে ক্ষুদ্র খ্রিষ্টান সম্প্রদায়

মস্কোতে বিস্ফোরণ, দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ নিহত তিন