হোম > স্বাস্থ্য > স্বাস্থ্য-গবেষণা

স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে চিড় ধরা নন–স্টিক প্যান ব্যবহার বন্ধ করুন

রান্নাঘরে রাঁধুনিদের পছন্দের এক অনুষঙ্গ হলো নন–স্টিক ফ্রাই পেন। কারণ এতে রান্নার সময় কোনো কিছু আটকে থাকে না বা জড়িয়ে যায় না। ফলে তেল খরচ কম হয়, সেই সঙ্গে কোনো ঝামেলা ছাড়াই ধোয়া যায়। বিজ্ঞানীরা ১৯৫৪ সালে প্রথম ননস্টিক প্যান আবিষ্কারের পর এটি দ্রুত বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

বিজ্ঞান ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম পপুলার সায়েন্সের এক প্রতিবেদন অনুসারে, করোনা মহামারির সময় থেকে নন–স্টিক রান্নার পাত্রের জনপ্রিয়তা আরও বেড়েছে। ২০২০ সালে নন–স্টিক রান্নার পাত্রের চাহিদা বেড়ে ২০ কোটি ৬১ লাখ ইউনিটে পৌঁছায়। এর চাহিদা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

রান্নার পাত্রের নন–স্টিক প্রলেপটি সিনথেটিক ফ্লুরোপলিমার দিয়ে তৈরি, যাকে বলা হয় পলিটেট্রাফ্লুরোইথিলিন (পিটিএফই)। এটি টেফলন নামেই বেশি পরিচিত। ২০২২ সালে অলাভজনক সংস্থা ইকোলজি সেন্টারের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুসারে, ৭৯ শতাংশ নন–স্টিক রান্নার পাত্র এবং ২০ শতাংশ নন–স্টিক বেকিং প্যানের মধ্যেই পিটিএফইর প্রলেপ ব্যবহার করা হয়।

সায়েন্স অব দ্য টোটাল এনভায়রনমেন্টের এক নতুন গবেষণায় বিভিন্ন ধরনের নন–স্টিক পাত্র নিয়ে পরীক্ষা করা হয়। এ ক্ষেত্রে গবেষকেরা রান্নার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পাত্রগুলো পরীক্ষা করেন। রান্নার প্রক্রিয়ায় তাঁরা স্টিল এবং কাঠের খুন্তি ব্যবহার করেছেন।

ওই গবেষণায় দেখা গেছে, টেফলনের প্রলেপ দেওয়া নন–স্টিক পাত্রে কোনো ছোটখাটো চিড় ধরলেই রান্নার সময় ৯ হাজার ১০০টি প্লাস্টিক কণা উঠে আসে। প্রলেপটি উঠে গেলে প্রায় ২৩ লাখ মাইক্রোপ্লাস্টিক এবং ন্যানো প্লাস্টিক কণা খাবারের সঙ্গে মিশে যেতে পারে।

এ ধরনের চিড়গুলো বিপজ্জনক। কারণ পিটিএফই এক ধরনের পার ও পলি ফ্লুওরিনেটেড পদার্থ (পিএফএএস)। এটি এমন এক ধরনের রাসায়নিক যৌগ যা পরিবেশের সঙ্গে মিশে যায় না, ফলে মাটি এবং পানি দূষিত করে এবং জীবিত প্রাণীর দেহে জমা হতে থাকে। পিএফএএসের লাখখানেক কণা একবার ছড়িয়ে পড়লে তা বাস্তুতন্ত্রে দীর্ঘসময় অক্ষত থাকে। এ জন্য এদের ‘ফরএভার কেমিক্যাল’ বা ‘চিরস্থায়ী রাসায়নিক’ বলা হয়।

পরিবেশে এ রাসায়নিক ছড়িয়ে পড়লে মানবদেহে পিএফএএস আরও বেশি পরিমাণে জমতে থাকবে। এর ফলে মানুষের বিপাকীয় কাজে পরিবর্তন আসবে, ওজন বাড়ার ঝুঁকি বাড়বে এবং কোনো সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা কমে যাবে।

তথ্য সংগ্রহের জন্য গবেষকেরা বিভিন্ন নন–স্টিক পাত্রের উপরিতল পরীক্ষা করেন এবং নন–স্টিক পাত্র থেকে প্লাস্টিক কণা ছড়িয়ে পড়ার পরিমাণ বের করেন।

অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব নিউক্যাসলের গ্লোবাল সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল রেমেডিয়েশনের জ্যেষ্ঠ গবেষক চেঙ ফ্যাং বলেন, মাইক্রোপ্লাস্টিক এবং ন্যানো প্লাস্টিক সরাসরি দৃশ্যমান করতে পরীক্ষা থেকে প্রাপ্ত ডেটা তিনটি অ্যালগরিদম ব্যবহার করে একটি ছবিতে পরিণত করা হয়। তাতে তাঁরা বিপজ্জনক পরিমাণে প্লাস্টিক কণা দেখেছেন।

ইউনিভার্সিটি অব নটর ড্যামের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক গ্রাহাম পিসলি বলেন, ‘পিএফএএস হলো এমন এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ যেগুলো বেশ দীর্ঘ সময় ধরে পরিবেশে টিকে থাকে। তুলনামূলক ক্ষুদ্র পিএফএএসে সূর্যের আলোর প্রভাবে মাইক্রোঅর্গানিজমে বা অন্য কোনো নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভাঙনের সৃষ্টি হয় না। এর মানে হলো, একবার তৈরি করার পর এগুলো প্রকৃতিতে শত শত বছর ধরে টিকে থাকতে সক্ষম।’ গ্রাহাম পিসলি অবশ্য এ গবেষণার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।

বিপদ এড়াতে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা—খাবারে বা পরিবেশে পিটিএফই পাত্র থেকে প্লাস্টিক কণা ছড়িয়ে পড়া রোধ করার জন্য রাধুনীকে অবশ্যই নরম খুন্তি ব্যবহার করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, রান্নার সময় এবং পরিষ্কার করার সময় যেন নন–স্টিক পাত্রের উপরিতলে কোনো ধরনের আঁচড় না পড়ে। গবেষক ফ্যাং বলেন, পাত্রে কোনো ধরনের আঁচড় পড়লে পাত্রটি অবশ্যই বদলে ফেলতে হবে।

টেফলনের পাত্রে রান্না করলে শুধু চিড় বা আঁচড় খেয়াল করলেই চলবে না; অতিরিক্ত তাপমাত্রার সংস্পর্শে এলে এর প্রলেপ থেকে বাতাসে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ ছড়িয়ে পড়তে পারে। এর কারণে অনেকের মধ্যে পলিমার ধোঁয়া থেকে সৃষ্ট অস্থায়ী ফ্লুর (সর্দি–জ্বর) লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

পিসলি বলেন, ১৯৫০–এর দশকে টেফলনকে যুগান্তকারী নতুন প্রযুক্তি হিসেবে প্রচার করা হলেও এ ক্ষেত্রে ঢালাই লোহাও একই রকম কার্যকর। অর্থাৎ ঢালাই লোহার পাত্রও নন–স্টিক প্যানের বিকল্প হতে পারে।

পিসলি আরও বলেন, পরিবেশ এবং মানবস্বাস্থ্যের জন্য ফ্লুরোপলিমার ক্ষতিকর কারণ এটি তৈরির সময়, প্রক্রিয়াজাত করার সময়, ব্যবহারের সময় এবং ব্যবহার শেষে পিএফএএস নিঃসরণ হয়। এর আরও অনেক সাশ্রয়ী বিকল্প আছে, যেগুলো পরিবেশের তুলনামূলক কম ক্ষতি করবে।

পুরুষ বন্ধ্যত্ব: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

ওষুধকে ফাঁকি দিতে মরার ভান করে ক্যানসার কোষ—গবেষণায় চমকপ্রদ তথ্য

পুরুষদের টাক সমস্যার সমাধান মিলল ৫ বছর আগের এক ব্রণের ওষুধে

চোখের যেসব রোগ পুরুষদের বেশি হয়

বিশ্বে প্রথমবারের মতো জিন থেরাপিতে সুস্থ বিরল রোগে আক্রান্ত অলিভার

সংগীত ওষুধের কাজ করে—দাবি মস্তিষ্ক বিজ্ঞানীদের

প্রজনন স্বাস্থ্যের ক্ষতির কারণ হতে পারে শহুরে জীবন, বলছেন বিজ্ঞানীরা

মানসিক স্বাস্থ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ডা. ফাহিমা

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ডুবে ঘুম হারাচ্ছেন বাংলাদেশি তরুণেরা: গবেষণা

শিশু-কিশোরদের মধ্যেও বাড়ছে উচ্চ রক্তচাপ