হোম > স্বাস্থ্য

শিশুর ডায়াবেটিস

ডা. নূরজাহান বেগম 

ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র শব্দটির সঙ্গে একসময় ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিলেন শুধু বয়স্করা। কিন্তু বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশেই বড়দের পাশাপাশি শিশুদের মধ্যেও ডায়াবেটিসের ভয়াবহতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমনকি নবজাতকও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারে। 
শিশুদের ডায়াবেটিস সাধারণত টাইপ-১ ও টাইপ-২—এই দুই ধরনের। 

টাইপ-১ ডায়াবেটিস
অগ্ন্যাশয়ের বিটা কোষ যখন পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না, তখন খুব অল্প সময়ের মধ্যে টাইপ-১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয় শিশু। বলা হয়ে থাকে, একটি শিশু যখন টাইপ-১ ডায়াবেটিসের উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসে, ততক্ষণে তার অগ্ন্যাশয়ের ৮০ শতাংশ বিটা কোষ নষ্ট হয়ে যায়। সুতরাং এ ধরনের শিশু ইনসুলিন ছাড়া বাঁচতে পারে না। উপসর্গ প্রকাশ পাওয়ার পরপরই রোগ নির্ণয় করে ইনসুলিন দিয়ে চিকিৎসা শুরু না করলে এদের অবস্থা খুব দ্রুত অবনতির দিকে যেতে থাকে। 
শরীর যখন ইনসুলিনের অভাবে গ্লুকোজ ব্যবহার করতে পারে না, তখন শক্তির জন্য চর্বি ও আমিষকে ভাঙতে থাকে। এতে বিভিন্ন বর্জ্য পদার্থ, বিশেষ করে অ্যাসিড-জাতীয় বস্তু রক্তে জমতে থাকে। অন্যদিকে আগে থেকেই রক্তে প্রচুর পরিমাণে অব্যবহৃত গ্লুকোজ থাকে। শরীর প্রস্রাবের মাধ্যমে এই গ্লুকোজ ও অ্যাসিড বের করার চেষ্টা করে। সে জন্যই ঘন ঘন পিপাসা লাগে এবং প্রস্রাব হয়। শরীরের ওজন কমতে থাকে। একপর্যায়ে মাত্রাতিরিক্ত অ্যাসিড বের করার জন্য শিশু ঘন ঘন লম্বা শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে থাকে। এতে রক্তচাপ কমে যায় এবং খুব দ্রুত অবস্থার অবনতি হয়। এই পরিস্থিতিকে চিকিৎসা পরিভাষায় বলে ডায়াবেটিক কিটোএসিডোসিস। এটি স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থা।

টোএসিডোসিসের প্রথম ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা খুবই জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ। আইসিইউ সাপোর্টসহ আরও বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধার প্রয়োজন হয় এ সময়। এর জন্য প্রয়োজন হয় অভিজ্ঞতাসম্পন্ন চিকিৎসক ও হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা। দেশের জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে ডায়াবেটিক কিটোএসিডোসিসের পরিপূর্ণ চিকিৎসাব্যবস্থাপনা নেই। তাই বেশির ভাগ শিশুকেই প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রেফার করা হয় উন্নত হাসপাতালে, যেটি আরও সময়ক্ষেপণ করে। আবার অনেক শিশুই ডায়াবেটিক কিটোএসিডোসিসের সঙ্গে সঙ্গে কিডনি ফেইলর কিংবা মস্তিষ্কের কোষ ফুলে যাওয়ার মতো জটিলতা নিয়ে চিকিৎসার জন্য আসে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।
টাইপ-১ ডায়াবেটিস রোগটি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এইসব জটিলতার মাধ্যমেই প্রকাশ পায়। তাই শিশুদের অতিরিক্ত পানি পান করা, অতিরিক্ত প্রস্রাব করা, রাতে ঘুম থেকে উঠে উঠে প্রস্রাব করা, ওজন কমে যাওয়ার মতো উপসর্গগুলো অবহেলা করা যাবে না। তাহলে শিশুদের এই জটিল ও প্রাণহানির মতো পরিস্থিতি থেকে বাঁচানো সম্ভব। 

টাইপ-২ ডায়াবেটিস
বয়ঃসন্ধির সময়, ওজন বেশি এবং যারা শারীরিক কাজকর্মহীন জীবনে অভ্যস্ত, তাদের মধ্যে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের আশঙ্কা বেশি। এ ধরনের শিশুদের গলা, ঘাড় ও বগলের চামড়া কালো ও মোটা হয়ে যায়, যেটি ইনসুলিন কাজ না করার পূর্বলক্ষণ। টাইপ-২ ডায়াবেটিসে শিশুদের ইনসুলিন তৈরিতে সাধারণত সমস্যা থাকে না। তাই তাদের মুখে খাওয়ার ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা সম্ভব। তবে অনেক ক্ষেত্রে ইনসুলিনেরও প্রয়োজন হয়। 
ডায়াবেটিস মানেই জীবন শেষ হয়ে যাওয়া নয়। ইনসুলিন কিংবা মুখের ওষুধ, শৃঙ্খলাপূর্ণ জীবনব্যবস্থা এবং নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার মধ্য দিয়ে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত একটি শিশু সম্পূর্ণ স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে সক্ষম।

লেখক: স্পেশালিস্ট, পেডিয়াট্রিক আইসিইউ, এভারকেয়ার হাসপাতাল, ঢাকা 

ভারতে চিকিৎসকদের জন্য হাতে প্রেসক্রিপশন লেখার নতুন নিয়ম

জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি: অর্থায়ন বন্ধে যক্ষ্মা বিস্তারের শঙ্কা

এমবিবিএস ও বিডিএস ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাসের হার ৬৬.৫৭ শতাংশ

শীতে যেসব খাবার মন শান্ত রাখবে

পুরুষ বন্ধ্যত্ব: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

শীতকালীন নানা রোগ থেকে মুক্ত থাকবেন যেভাবে

রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে করণীয়

থাইরয়েড হরমোন কম থাকার লক্ষণ

ওষুধকে ফাঁকি দিতে মরার ভান করে ক্যানসার কোষ—গবেষণায় চমকপ্রদ তথ্য

সাধারণের স্বাস্থ্যসেবা: মিলিয়ে যাচ্ছে ‘সূর্যের হাসি’