কোনো কিছু খাওয়ার পর বুকের ঠিক মাঝখানে প্রচণ্ড জ্বালাপোড়া হয় অনেকের। এই সমস্যাকে চিকিৎসা পরিভাষায় হার্ট বার্ন বা গ্যাস্ট্রিক রিফ্ল্যাক্স বলে। সমস্যাটা আমাদের দেশে খুব সাধারণ হলেও আসলে এতটা সহজ নয়।
আমাদের খাদ্যনালি ও পাকস্থলীর সংযোগস্থলে এক বিশেষ ধরনের মাংসপেশি বা স্ফিংটার থাকে, যাকে লোয়ার ইসোফিজিয়াল স্ফিংটার বা এলইএস বলে। এই স্ফিংটারের কাজ হচ্ছে খাবার খাদ্যনালি থেকে পাকস্থলীতে পাঠানো এবং সেই খাবার আর যাতে খাদ্যনালিতে ফেরত না আসতে পারে, সেটা নিশ্চিত করা। এই এলইএস যখন দুর্বল হয়ে যায়, তখন পাকস্থলীর অ্যাসিড মিশ্রিত খাবার খাদ্যনালিতে চলে আসে আর বুকে জ্বালাপোড়া শুরু হয়।
- যেসব খাবার খাদ্যনালির স্ফিংটারকে দুর্বল করে দেয়, সেগুলো খাদ্যনালিতে ফেরত এসে হার্ট বার্ন তৈরি করতে পারে। যেমন কফি, চকলেট ইত্যাদি।
- পাকস্থলীতে অনেকক্ষণ থাকে এবং পাকস্থলীর অ্যাসিডিটি বাড়ায় এমন খাবার খাওয়া। যেমন তেলে ভাজা, মসলাযুক্ত খাবার, বিভিন্ন ধরনের টকজাতীয় ফল ও ফলের জুস ইত্যাদি।
- খাবার খাওয়ার পরপরই শুয়ে পড়া।
- ধূমপান ও মদ্যপান।
- অতিরিক্ত ওজন।
- শারীরিক ও মানসিক অবসাদ।
লক্ষণ
- বুকের ঠিক মাঝখানে প্রচণ্ড জ্বালাপোড়া।
- টক ঢেকুর ওঠা।
- গলার স্বর ফ্যাসফেসে হয়ে যাওয়া।
- মুখে দুর্গন্ধ।
- বারবার শুকনো কাশি ও হেঁচকি ওঠা।
হার্ট বার্ন হলে করণীয়
হার্ট বার্ন হলেই গ্যাসের বা অন্যান্য ওষুধ খেয়ে ফেললে সাময়িক আরাম হয়; কিন্তু সমস্যার সমাধান হয় না। অথচ কিছু নিয়মকানুন মেনে চললে এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।
- তৈলাক্ত খাবার অ্যাসিডিটি বাড়ায় এবং অনেকক্ষণ পাকস্থলীতে রয়ে যায়। এ জন্য তৈলাক্ত খাবার নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।
- পাকস্থলীতে বেশি অ্যাসিড তৈরি করা খাবার বাদ দেওয়া।
- একবারে অনেক বেশি না খেয়ে বারবার অল্প অল্প খাওয়া।
- খাবার খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পেট ভরে পানি পান না করা।
- খাবার খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুয়ে না পড়া। শোয়ার সময় পায়ের তুলনায় মাথা ও বুক কিছুটা ওপরে রাখা।
- ওজন নিয়ন্ত্রণ করা।
- শারীরিক ও মানসিক অবসাদ দূর করতে সচেতন হওয়া।
- ধূমপান ও মদ্যপান বাদ দেওয়া।
চিকিৎসকের পরামর্শ যখন
হার্ট বার্ন এমনিতে খুব ক্ষতিকর না হলেও কাছাকাছি লক্ষণে কয়েকটি জটিল রোগ হতে পারে, যেমন গ্যাস্ট্রোইসোফিজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ, হায়াটাস হার্নিয়া ইত্যাদি। তাই নিচের লক্ষণগুলো থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
- নিয়ম মানা ও অ্যান্টাসিড খাওয়ার পরও দুই সপ্তাহের মধ্যে অবস্থার উন্নতি না হওয়া।
- অস্বাভাবিকভাবে ওজন কমে যাওয়া।
- খাবার গিলতে কষ্ট হওয়া বা বুকে খাবার আটকে আছে এমন অনুভব হওয়া।
লেখক: রেসিডেন্ট, নেফ্রোলজি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ