হোম > স্বাস্থ্য

বসন্তের রোগ থেকে সাবধান

ডা. অদিতি সরকার

বসন্ত এসে গেছে। এই বসন্তে চারদিকে যেমন ফুল আর ফুল, তেমনি প্রকৃতির এ রূপ বদলে রোগব্যাধির প্রকোপ বাড়ারও আশঙ্কা আছে। হাম, জলবসন্ত, ভাইরাস জ্বর, টাইফয়েড, চুলকানিসহ নানান রোগ এ সময় তাড়িয়ে বেড়ায় মানুষকে। শীতের আবহাওয়ায় ঘুমন্ত ভাইরাস গরম পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাতাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে রোগাক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায় মানুষের। এ সময় দরকার কিছু সাধারণ সচেতনতা।

বসন্ত একটি ভাইরাসঘটিত রোগ, যা প্রধানত শীত ও বসন্তকালের সন্ধিক্ষণে সংক্রমিত করে। কিন্তু এখন বসন্ত রোগটি প্রায় সব ঋতুতেই দেখা যায়। রোগটির যথাযথ চিকিৎসা না করালে ফল মারাত্মক হতে পারে। 

বসন্তের ধরন 
সাধারণত বসন্ত দুই ধরনের হয়। একটি জলবসন্ত, অন্যটি গুটিবসন্ত। তবে সাধারণত এখন মানুষ আক্রান্ত হয় জলবসন্তে। টিকাকরণের মাধ্যমে গুটিবসন্ত রোগটি সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৯৮০ সালে গুটিবসন্তকে বিশ্বব্যাপী বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে।

জলবসন্ত 
যে ভাইরাসের মাধ্যমে রোগটি হয় তা হলো ভেরিসেলা ডোস্টার ভাইরাস। এ ধরনের বসন্তে শরীরে জ্বর হয়। এর সঙ্গে তীব্র চুলকানিসহ সারা গায়ে ফুসকুড়ি বেরোয়।

লক্ষণ

  • দুর্বলতা
  • মাথাব্যথা
  • সর্দি
  • জ্বর ভাব
  • ঠান্ডা লাগা
  • সারা শরীরে ব্যথা

ভাইরাস সংক্রমণের কিছুদিনের মধ্যে শরীরে ঘামাচির মতো দানা দেখা দেয়। পরে সেগুলো বড় হয়ে ভেতরে পানি জমে থাকে। এর সঙ্গে বাড়ে জ্বর ও দুর্বলতা। 

জলবসন্তের প্রতিষেধক 
এখন বসন্তের প্রতিষেধক ভ্যাকসিন আছে। যাঁরা ভ্যাকসিন নিয়েছেন, তাঁদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা নেই। 

রোগীর খাবারদাবার
এ সময় রোগীকে পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, শাকসবজি সবকিছুই বেশি করে খেতে হবে।

কিছু পরামর্শ

  • কোনো রকম ওষুধ ছাড়াই ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে জলবসন্ত ভালো হয়ে যায়।
  • এটি ছোঁয়াচে রোগ বলে রোগীকে সুস্থ ব্যক্তিদের থেকে আলাদা রাখুন।
  • পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দিন। রোগীর ব্যবহার্য জিনিসপত্র আলাদা রাখুন এবং নিয়মিত পরিষ্কার করুন।
  • রোগীকে নিয়মিত গোসল করান।
  • কষ্ট হলেও শরীর চুলকানো থেকে বিরত থাকুন। চুলকানি কমানোর জন্য গরম পানি দিয়ে গোসল করা যেতে পারে। 

সর্দি-জ্বর
বসন্তকালে জ্বর হলেই অ্যান্টিবায়োটিক খাবেন না। কুসুম গরম পানিতে গা মুছলে জ্বরের প্রকোপ কমে যাবে। সঙ্গে প্যারাসিটামল খেতে পারেন। সর্দি থাকলে অ্যান্টিহিস্টামিন-জাতীয় ওষুধ খেতে পারেন। তবে জ্বর সাত দিনের বেশি থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এ সময় সর্দি জ্বরের পাশাপাশি হামও হতে পারে।

  • রোগীকে বেশি করে পানি খাওয়াতে হবে। দুই বছরের কম বয়সীদের কিছুক্ষণ পর পর মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে।

ফুল থেকে অ্যালার্জি
ফুলের ঋতু বসন্তে অ্যালার্জির সমস্যা বেড়ে যায়। ফুল থেকে পোলেন বা রেণু বাতাসে ভেসে বেড়ায় উদ্ভিদের বংশবৃদ্ধির জন্য। এই রেণু চোখ, নাক, ত্বক ও নিশ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসে প্রবেশ করে অ্যালার্জি তৈরি করে।

উপসর্গ

  • সর্দি
  • হাঁচি
  • নাক বা চোখের চুলকানি
  • নাক বন্ধ থাকা
  • চোখ ফুলে যাওয়া
  • চোখ থেকে ক্রমাগত পানি পড়া
  • ক্ষেত্রবিশেষে জ্বর
  • অ্যাজমা ইত্যাদি 

যা করবেন

  • পোলেনযুক্ত বাতাস থেকে দূরে থাকতে কিছু পন্থা অবলম্বন করতে পারেন।
  • বাসার জানালা-দরজা বন্ধ রাখুন
  • ভ্রমণের সময় গাড়ির জানালা বন্ধ রাখুন
  • ঘাসের লন বা ফুলের বাগান এড়িয়ে চলুন
  • ভেজা কাপড় ওয়াশিং মেশিনে শুকিয়ে ফেলুন বা ঘরের ভেতর মেলে দিয়ে শুকান
  • বাইরে বের হলে সানগ্লাস ব্যবহার করতে হবে
  • যাদের সিজনাল অ্যালার্জির সমস্যা আছে, তাদের আরও কিছু অ্যালার্জির প্রকোপ দেখা দিতে পারে। যেমন ডাস্ট বা পোষা প্রাণীতে অ্যালার্জি।
  • ঘরের ভেতরে থাকা মাইট নামে পরিচিত একটি ক্ষুদ্র জীবাণু অ্যালার্জি সৃষ্টি করে। তাই অ্যালার্জির ব্যাপারে সচেতন থাকলে ভোগান্তি কমবে।
  • এই ঋতুতে প্রচুর ফল ও সবজি পাওয়া যায়। পর্যাপ্ত পরিমাণে মৌসুমি ফল ও সবজি খেলে মৌসুমি রোগগুলো থেকে সহজেই মুক্ত থাকা যায়।

বসন্ত প্রকৃতিতে সুন্দর ঋতু। এ ঋতুতে কোকিলের কুহু ডাক শুনে আনমনা হলে ক্ষতি নেই। কিন্তু এ সময়ে রোগব্যাধি থেকে মুক্ত থাকার জন্য সচেতনতা বিষয়ে উদাসীন থাকা চলবে না।

লেখক: রেসিডেন্ট চিকিৎসক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা 

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

শীতে যেসব খাবার মন শান্ত রাখবে

পুরুষ বন্ধ্যত্ব: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

শীতকালীন নানা রোগ থেকে মুক্ত থাকবেন যেভাবে

রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে করণীয়

থাইরয়েড হরমোন কম থাকার লক্ষণ

ওষুধকে ফাঁকি দিতে মরার ভান করে ক্যানসার কোষ—গবেষণায় চমকপ্রদ তথ্য

সাধারণের স্বাস্থ্যসেবা: মিলিয়ে যাচ্ছে ‘সূর্যের হাসি’

ব্লাড ক্যানসার আর মরণব্যাধি নয়, জিন থেরাপিতে অভাবনীয় সাফল্য

অনেক গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টিবায়োটিক আর তেমন কাজ করছে না: গবেষণা