হোম > স্বাস্থ্য

৩০ বছরেও হালনাগাদ হয়নি ওষুধের তালিকা

আয়নাল হোসেন, ঢাকা

প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় ব্যবহৃত ওষুধগুলো দেশের মানুষ যাতে সুলভ মূল্যে কিনতে পারে, সে জন্য ১৯৯৩ সালে প্রাইমারি হেলথ কেয়ার ওষুধের তালিকা করেছিল সরকার। ৩০ বছর আগে তৈরি করা ওই তালিকার অনেক ওষুধই এখন উৎপাদন করে না কোম্পানিগুলো। এ ছাড়া চিকিৎসকেরাও ব্যবস্থাপত্রে আরও উন্নত ও কার্যকর ওষুধ লেখেন। কিন্তু তালিকাভুক্ত না হওয়ায় এসব ওষুধ বেশি দামে কিনতে হচ্ছে রোগীদের। এই অবস্থায় ওষুধের তালিকা হালনাগাদ করা জরুরি বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে প্রাইমারি, সেকেন্ডারি ও টারশিয়ারি—এই তিন ভাগ করা আছে। সে অনুযায়ী, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় চিকিৎসকেরা প্রাইমারি হেলথ কেয়ার তালিকাভুক্ত ওষুধ লিখবেন। সেকেন্ডারি পর্যায়ের চিকিৎসায় আরও একধাপ ওপরের ওষুধ লিখবেন। আর টারশিয়ারি পর্যায়ে চিকিৎসায় উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ওষুধ লেখা যাবে।

রোগের ধরন অনুযায়ী প্রাইমারি হেলথ কেয়ার তালিকার ১১৭টি ওষুধকে ১৩টি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। এসব জেনেরিক ওষুধের দাম সরকার নির্ধারণ করবে। অন্যান্য ওষুধের দাম নির্ধারণ করবে নিজ নিজ কোম্পানি। তালিকাভুক্ত ওষুধের কমপক্ষে ৬০ শতাংশ তৈরির বাধ্যবাধকতা রয়েছে কোম্পানিগুলোর ওপর। কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠান এসব ওষুধ তৈরি করছে না। ফলে তালিকার বাইরের ওষুধ কিনতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে রোগী ও স্বজনদের।

হৃদ্‌রোগ-সংক্রান্ত চিকিৎসার জন্য ওষুধের আটটি জেনেরিকের নাম লেখা আছে প্রাইমারি হেলথ কেয়ার তালিকায়, এগুলোর একটি হলো নিফিডিপিন। এখন এর পরিবর্তে চিকিৎসাপত্রে অ্যামলোডিপিন জেনেরিকের ওষুধ লেখেন চিকিৎসকেরা। এ ছাড়া অ্যাটেনোলোলের পরিবর্তে বিসোপ্রোলোল ও নেবিভোললের ব্যবহার হচ্ছে।

সংক্রমণ প্রতিরোধে ক্লক্সাসিলিন অ্যান্টিবায়োটিক ট্যাবলেটের পরিবর্তে ফ্লুক্লক্সাসিলিন ব্যবহৃত হয় এখন। আর সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমের সমস্যায় ডায়াজিপাম ওষুধের পরিবর্তে ক্লোনাজিপাম, থায়োপেনটাল ওষুধের পরিবর্তে প্রোপফল ইনজেকশন ব্যবহার করা হচ্ছে। এই ওষুধগুলো প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় ব্যবহার হলেও তালিকা হালনাগাদ না হওয়ায় তা অন্তর্ভুক্ত হয়নি।

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আবু আজহার বলেন, সময়ের প্রয়োজনে উন্নত ও নতুন নতুন অনেক ওষুধ বের হয়েছে। এ কারণে প্রাইমারি হেলথ কেয়ারের ওষুধ অনেকে লিখছেন না। এই তালিকা হালনাগাদ করতে হবে। এটি করা না হলে ভুল ওষুধ প্রয়োগের ঝুঁকি তৈরি হবে।

দেশে বর্তমানে অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ তৈরি করছে ২৫০টির বেশি প্রতিষ্ঠান। ১৯৯৪ সালে দেশে জেনেরিক ওষুধ ছিল ৩৫০-৪০০টি। বর্তমানে এর সংখ্যা বেড়ে হাজারে পৌঁছেছে। কিন্তু সরকার কর্তৃক দাম নির্ধারণের ওষুধের তালিকা আর বাড়েনি।

সম্প্রতি দেশের সর্ববৃহৎ ওষুধের পাইকারি বাজার পুরান ঢাকার মিটফোর্ড, বাবুবাজার ও বাদামতলী এলাকার ওষুধ ব্যবসায়ী এবং ফার্মাসিস্টদের সঙ্গে তালিকাভুক্ত ওষুধ নিয়ে কথা হলে তাঁরা বলেন, দেশে এখন নতুন নতুন ওষুধ তৈরি হচ্ছে। এ কারণে চিকিৎসকেরাও এসব ওষুধ আর ব্যবস্থাপত্রে লিখছেন না। ব্যবস্থাপত্রে না থাকায় কেউ ওসব ওষুধ দোকানে তুলছেন না।

২৫০ শয্যা টিবি হাসপাতালের উপপরিচালক আয়েশা আক্তার বলেন, ‘প্রাইমারি হেলথ কেয়ারের অ্যামক্সোসিলিন, অ্যাম্পিসিলিন, টেট্রাসাইক্লিন ওসব ওষুধের কার্যকারিতা থাকলেও এখন থার্ড ও ফোর্থ জেনারেশনের ওষুধ দেশে এসেছে। এ কারণে অনেকে আগের ওষুধ লিখছেন না। তবে প্রাইমারি হেলথ কেয়ারের তালিকা আপডেট করা উচিত।’

বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির কোষাধ্যক্ষ ও হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হালিমুজ্জামান বলেন, ১১৭টি তালিকাভুক্ত ওষুধই দরকারি। এসব ওষুধের দাম না বাড়ানোয় কোম্পানিগুলো উৎপাদন করছে না। যারা করেছে, তাদের ৭০-৮০ শতাংশ লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে হয়েছে। এ কারণে এসব দরকারি ওষুধ ভারত থেকে পাচার হয়ে দেশে আসছে। ওষুধের তালিকা হালনাগাদ করার বিষয়ে গত ২১ এপ্রিল স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে শিল্পমালিকদের বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রী হালনাগাদ করার বিষয়ে তাগিদ দেন।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, তালিকাটি হালনাগাদ করতে খুব শিগগির সবার সঙ্গে বসে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ভারতে চিকিৎসকদের জন্য হাতে প্রেসক্রিপশন লেখার নতুন নিয়ম

জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি: অর্থায়ন বন্ধে যক্ষ্মা বিস্তারের শঙ্কা

এমবিবিএস ও বিডিএস ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাসের হার ৬৬.৫৭ শতাংশ

শীতে যেসব খাবার মন শান্ত রাখবে

পুরুষ বন্ধ্যত্ব: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

শীতকালীন নানা রোগ থেকে মুক্ত থাকবেন যেভাবে

রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে করণীয়

থাইরয়েড হরমোন কম থাকার লক্ষণ

ওষুধকে ফাঁকি দিতে মরার ভান করে ক্যানসার কোষ—গবেষণায় চমকপ্রদ তথ্য

সাধারণের স্বাস্থ্যসেবা: মিলিয়ে যাচ্ছে ‘সূর্যের হাসি’