ডিস্ক প্রলেপস ব্যথার একটি অতি পরিচিত নাম। আমাদের দেশে দিনে দিনে এ রোগে আক্রান্তের হার বেড়েই চলেছে। তাই ব্যথাজনিত ডিস্ক প্রলেপস সম্পর্কে আমাদের সাধারণ ধারণা থাকা প্রয়োজন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই ব্যথা কোমর থেকে শরীরের অন্য জায়গায় ছড়ায়। তবে অন্য জায়গায় আক্রান্ত হলেও এ ব্যথা ছড়িয়ে থাকে।
মেরুদণ্ডের দুটি কশেরুকার মাঝের ফাঁকা জায়গায় এক ধরনের ডিস্ক বা জেলির মতো বস্তু থাকে। এই সন্ধিস্থলটিকে ইন্টার ভার্টিব্রাল ডিস্ক বলা হয়। এই ডিস্ক জায়গা থেকে সরে গেলে তাকে ডিস্ক প্রলেপস বলে। সাধারণ ডিস্ক প্রলেপস ঘাড় বা সারভাইক্যাল স্পাইন ও কোমর বা লাম্বার স্পাইনে বেশি হয়ে থাকে। ডিস্ক প্রলেপস নারী ও পুরুষ উভয়েরই হয়। তবে পুরুষের তুলনায় নারীদের মধ্যে এই রোগে ভোগার হার বেশি।
- মেরুদণ্ডের স্পাইনাল লিগামেন্ট ও মাংসপেশি দুর্বল হয়ে যাওয়া।
- সামনের দিকে ঝুঁকে ভারী কিছু ওঠানো। এমনকি সামনের দিকে ঝুঁকে জুতার ফিতা বাঁধতে গেলে, দীর্ঘক্ষণ নিচে বসে কাজ করলেও এ রোগ হতে পারে। উঁচু জুতা পরাও এ রোগের অন্যতম কারণ। অনেক সময় বেসিনে মুখ ধুতে গেলেও ডিস্ক প্রলেপস হতে পারে।
- শরীরের ওপরের অংশের ভার পুরোটাই মেরুদণ্ডের নিচের অংশে থাকা। এ কারণে মেরুদণ্ডের ডিস্ক স্লিপ করে পেছনের দিকে যেতে থাকে। কখনো হঠাৎ স্লিপ করে, কখনো বা ধীরে ধীরে।
- টেবিলে ঝুঁকে কম্পিউটারে দীর্ঘ সময় কাজ করা।
- বেশি উচ্চতা থেকে লাফ দেওয়া বা পড়ে যাওয়া।
- দীর্ঘ বা বড় কশেরুকা। এমন কশেরুকা রোগে আক্রান্তের আশঙ্কা বাড়ায়।
- পা সমান না হওয়া। যাদের এক পা ছোট, এক পা বড় তারাও এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়।
- হঠাৎ আঘাত। মারামারি বা আকস্মিক আঘাতেও ডিস্ক সরে গিয়ে এ রোগ হতে পারে।
লক্ষণ:
- ঘাড় বা সারভাইক্যাল স্পাইন আক্রান্ত হলে ব্যথা ঘাড় থেকে হাতের দিকে নামে। এমনকি হাতের আঙুলেও ব্যথা ছড়াতে পারে।
- হাত ঝুলিয়ে রাখলে বা বিছানায় শুয়ে থাকলে ব্যথা বেশি অনুভূত হবে।
- হাত বা হাতের অংশবিশেষ ঝিনঝিন বোধ বা অনুভূতিহীন হয়ে পড়তে পারে।
- হাতের শক্তি কমে যায় বা হাত দুর্বল হয়ে আসতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে হাতের মাংসপেশি শুকিয়ে যায়।
- কোমর বা লাম্বার স্পাইন আক্রান্ত হলে ব্যথা কোমর থেকে পায়ের দিকে ছড়ায়।
- অল্প সময় দাঁড়িয়ে থাকলে কিংবা হাঁটলে আর হাঁটার ক্ষমতা থাকে না। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলে, কিছুটা হাঁটার পর শক্তি ফিরে আসে। পায়ের শক্তি কমে যায় এবং অনেক ক্ষেত্রে পায়ের মাংসপেশি শুকিয়ে যায়।
- আক্রান্ত ব্যক্তির প্রস্রাব ও পায়খানায় নিয়ন্ত্রণ থাকে না।
লেখক: জনস্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষক, খাজা বদরুদদোজা মডার্ন হাসপাতাল, সফিপুর, কালিয়াকৈর, গাজীপুর