প্রাকৃতিক দুর্যোগের কাছে সব সময়ই আমরা পরাজিত হয়ে যাই কোনো না কোনোভাবে। চরম ভোগান্তি আর সংকটের মধ্যে জীবন পার করতে হয় সমাজের একটি অংশকে। এ সময় আমাদের কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, বিশেষ করে শিশুদের ব্যাপারে। শিশুরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় যেকোনো দুর্যোগ পরিস্থিতি এবং দুর্যোগ-পরবর্তী সময়ে। চলমান বন্যায় একদিকে খাদ্য ও পানীয়ের সংকটের মধ্যে বেঁচে থাকার চেষ্টা করে যেতে হচ্ছে লাখো মানুষকে, অন্যদিকে যুদ্ধ করতে হচ্ছে পানিবাহিত রোগ, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ এবং চর্মরোগের মতো অসুখের সঙ্গে।
শিশুদের প্রতি খেয়াল রাখুন
- বন্যা-পরবর্তী সময়ে শিশুদের জ্বর-সর্দি, ডায়রিয়া, কলেরা, রক্ত আমাশয়, টাইফয়েড, প্যারাটাইফয়েড, ভাইরাল হেপাটাইটিস, পেটের অসুখ, কৃমির সংক্রমণ, চর্মরোগ, চোখের অসুখ প্রভৃতির প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়। তাই নিরাপদ পানি ছাড়া অন্য পানি দিয়ে গোসল, থালাবাসন ও কাপড় ধোয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। বারবার শিশুর হাত ধুয়ে দিতে হবে।
- বন্যা-পরবর্তী সময়ে আসবাব, জামাকাপড়, বিছানা-বালিশ এবং শিশুদের খেলনায় ছত্রাকের সংক্রমণ হয়েছে কি না খেয়াল করতে হবে। ভেজা বা ছত্রাকের সংক্রমণ হয়েছে, এমন খেলনা শিশুদের দেওয়া যাবে না। খাবারের বেলায়ও এটা প্রযোজ্য।
- দুই বছরের বেশি বয়সী শিশুদের কৃমিনাশক ওষুধ দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। দুই বছরের নিচের শিশুর কৃমির সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কৃমিনাশক দিতে হবে।
- বন্যার কারণে যেসব শিশু ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খেতে পারেনি, তাদের জন্য নিকটস্থ টিকাদান কেন্দ্রে যোগাযোগ করতে হবে কিংবা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়াতে হবে।
- যেসব শিশু নিয়মিত টিকা থেকে বাদ পড়ে গেছে, কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করে সেগুলো দিয়ে নিতে হবে।
- স্কুলে পাঠানোর আগে সড়ক মেরামত হয়েছে কি না, স্কুলঘর পরিষ্কার এবং নিরাপদ হয়েছে কি না, এ ব্যাপারগুলো খেয়াল করতে হবে।
- বাসাবাড়ির মেরামতে শিশুদের কাজে লাগানো থেকে বিরত রাখতে হবে।
- বিদ্যুতের তার, সকেট এগুলো থেকে শিশুদের দূরে রাখতে হবে।
লেখক: স্পেশালিস্ট, পেডিয়াট্রিক আইসিইউ, এভারকেয়ার হাসপাতাল, ঢাকা