রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের বার্তা নিয়ে আমাদের মাঝে ফিরে এসেছে মহিমান্বিত মাস রমজান। এ মাসে অন্যদের পাশাপাশি ডায়াবেটিসের রোগীরাও রোজা রাখেন। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সারা বিশ্বের প্রায় ৫ কোটি ডায়াবেটিসের রোগী রোজা রাখেন। ডায়াবেটিসের রোগীদের মধ্য়ে যাঁরা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া রোজা রাখেন, তাঁরা বেশি জটিলতার সম্মুখীন হন।
- রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যাওয়া বা হাইপোগ্লাইসেমিয়া
- রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়া বা হাইপারগ্লাইসেমিয়া
- ডায়াবেটিস কিটোএসিডোসিস
- পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন
হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণ
- বেশি ক্ষুধা লাগা
- শরীর কাঁপা, বুক ধড়ফড় করা
- মাথা ঘোরানো, অস্বাভাবিক আচরণ করা
- চোখে ঝাপসা দেখা, খিঁচুনি হওয়া, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
এ রকম লক্ষণ দেখা দিলে ব্লাড সুগার পরীক্ষা করতে হবে এবং ৩ দশমিক ৯ মিলিমোল/লি.-এর কম হলে রোজা ভেঙে ফেলা ভালো।
রোজায় খাবার নিয়ম কেমন হবে
- সাহ্রি যত সম্ভব দেরিতে খেতে হবে। সাহ্রি না করে রোজা রাখা যাবে না।
- ইফতারে প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে। ভাজাপোড়া এড়িয়ে চলতে হবে।
- মিষ্টিজাতীয় খাবার ইফতারে এড়িয়ে যাওয়া ভালো। যেমন চিনিযুক্ত শরবত, মিষ্টি ফল ইত্যাদি। কম মিষ্টি ফল, যেমন সবুজ আপেল, পেয়ারা, বরই, নাশপাতি ও এসব দিয়ে ফ্রুট সালাদ বেশি পরিমাণে খাওয়া যাবে।
- চিনি ছাড়া লেবুর শরবত খাওয়া যাবে।
- রাতের খাবার বাদ দেওয়া যাবে না।
- ইফতারে একসঙ্গে অতিরিক্ত না খেয়ে অল্প অল্প করে দুই ঘণ্টা পরপর খাবার খাওয়া ভালো।
রোজায় ব্যায়াম বা হাঁটা
- দিনের বেলায় ব্যায়াম করা বা না হাঁটাই ভালো।
- ইফতারের দুই ঘণ্টা পর চাইলে হাঁটা বা ব্যায়াম করা যায়। তবে তারাবির নামাজ আদায় করলে অতিরিক্ত ব্যায়াম বা হাঁটার দরকার নেই। এই নামাজই ব্যায়ামের কাজ করবে।
কখন ব্লাড সুগার পরীক্ষা
- ইফতারের দুই ঘণ্টা আগে ও দুই ঘণ্টা পরে ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা ভালো। এতে ইফতারের আগে ব্লাড সুগার কমে যাচ্ছে কি না, বা ইফতারের পরে ব্লাড সুগার বেড়ে যাচ্ছে কি না, বোঝা যাবে।
ইনসুলিন ও ওষুধের ডোজ
- যাঁরা সকালে খাওয়ার আগে গ্লিক্লাজাইড-জাতীয় ওষুধ খাচ্ছিলেন, তাঁরা ইফতারের শুরুতে খাওয়ার আগে খাবেন।
- যাঁরা দুই বেলা মেটফরমিন-জাতীয় ওষুধ খাচ্ছিলেন, তাঁরা সেটা ইফতার ও সাহ্রির পর খাবেন। যাঁরা মেটফরমিন ও ভিলডাগ্লিপটিন-জাতীয় ওষুধ দুই বেলা খাচ্ছিলেন, তাঁরা তা ইফতার ও সাহ্রির পর খাবেন।
- যাঁরা দুইবেলা ইনসুলিন নিচ্ছিলেন, তাঁরা সকালের পূর্ণ ডোজ ইফতারের আগে ও রাতের ডোজের অর্ধেক সাহ্রির আগে নেবেন।
- যাঁরা শুধু এক বেলা ইনসুলিন নিতেন, তাঁরা সেটি ইফতারের পর একটি নির্ধারিত সময়ে নেবেন। ইনসুলিনের মাত্রা কমাতে হবে কি না, তা আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নেবেন।
- অসুস্থ অবস্থায় ডায়াবেটিস রোগীদের রোজা রাখা ঠিক হবে না। তাই হাইপোগ্লাইসেমিয়ার কোনো লক্ষ্মণ দেখা দিলে এবং ব্লাড সুগার অনেক বেশি বেড়ে গেলে প্রয়োজনে রোজা ভেঙে ফেলাটাই স্বাস্থ্যের জন্য ইতিবাচক।
লেখক: ডায়াবেটিস ও হরমোন রোগ বিশেষজ্ঞ, ডাক্তার সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা