হোম > ফ্যাক্টচেক > আজকের ফ্যাক্ট

বাংলাদেশে বেশ কিছু জঙ্গি সংগঠনের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ভুয়া খবর ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে গত সোমবার (৫ আগস্ট)। এর পর থেকে গত বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) সন্ধ্যা পর্যন্ত সরকারবিহীন ছিল বাংলাদেশ। ওই দিন রাত ৮টায় শপথ নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিষিদ্ধ ঘোষিত বেশ কিছু জঙ্গি সংগঠনের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে—এমন দাবি করে সংবাদ প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জি নিউজ

৭ আগস্ট সংবাদমাধ্যমটি ‘জেএমবি, হুজিসহ একঝাঁক জঙ্গি সংগঠনের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিল বাংলাদেশ’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করে, হরকাতুল জিহাদ (হুজি), জেএমবি, আনসারুল্লাহ বাংলা, জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ, শাহাদত–ই–আল হিকমা, হিজবুত তাহরীরসহ একাধিক নিষিদ্ধ সংগঠনের ওপর থেকে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে! এই নিষেধাজ্ঞা তোলার পরপরই সংগঠনগুলো সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

জি নিউজ ছাড়াও ভারতীয় বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমও এই সংবাদ প্রকাশ করেছে। 

আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের অনুসন্ধানে দেখা যায়, জি নিউজসহ ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো প্রতিবেদনে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার দাবিটির পক্ষে কোনো সূত্র উল্লেখ করেনি। বরং দাবি করা হয়েছে, এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কেউ কিছু বলতে চাননি!

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট ঘুরেও এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ৭ আগস্ট ওয়েবসাইটের নোটিশ বোর্ডে দুটি নোটিশ যুক্ত করা হয়। এর মধ্যে একটি নোটিশ বাংলাদেশ পুলিশের নতুন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ময়নুল ইসলামের নিয়োগ–সংক্রান্ত এবং আরেকটি বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের কর্মকর্তাদের বদলি বা পদায়ন–সংক্রান্ত। দেশীয় কোনো সংবাদমাধ্যমেও এ সম্পর্কে কোনো প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়নি। আইন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট ঘুরেও নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার দাবিটির পক্ষে কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, ১ আগস্ট সন্ত্রাসবিরোধী আইনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, দলটির সহযোগী ছাত্রসংগঠন হিসেবে পরিচিত ইসলামী ছাত্রশিবির ও সংশ্লিষ্ট সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। ওই দিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ–সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এ নিষেধাজ্ঞা এখনো বহাল।
 
জামায়াতে ইসলামীর ওপর থেকে এ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে কি না–আজ সোমবার সাংবাদিকদের এ প্রশ্নে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘এটা আইন মন্ত্রণালয়ের কাজ। আইন মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিয়ে গেজেট নোটিফিকেশনের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।’

এ ছাড়া জি নিউজের প্রতিবেদনটিতে ২০০৯ সালে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিজবুত তাহরীর সদস্যদের সংসদ ভবনের সামনে মানববন্ধন করার তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে দাবি করা হয়েছে, রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে সংগঠনের ব্যানার হাতে মানববন্ধনে অংশ নেন তাঁরা।

বাংলাদেশের একাধিক সংবাদমাধ্যমেও এ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

জি নিউজের প্রতিবেদনটিতে আরও দাবি করা হয়, বিভিন্ন সময়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত এসব সংগঠনের প্রায় ১ হাজার ৮১৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কিন্তু সেনাপ্রধানের নির্দেশের পরই তাদের ছেড়ে দেওয়া শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই জইশের ১২ জন, লস্কর ই তৈবার ৪, হিজবুত তাওহিদের ১৫, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ১৮, আসিফ রেজা কমান্ডো ফোর্সের ৪, আল হিকমার ১২, জেএমবির ২৮, হুজির ২২ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এসব তথ্যের কোনো সূত্র উল্লেখ করেনি জি নিউজ। এ নিয়ে অনুসন্ধানেও এসব তথ্যের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।

বরং বাংলাদেশের সরকারি সম্প্রচার মাধ্যম বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের বৈঠকের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ৬ আগস্ট মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে গত ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আটক এবং রাজনৈতিক মামলায় আটকদের জামিন দেওয়া শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে অনেকে মুক্তিও পেয়েছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা factcheck@ajkerpatrika.com

আজকের পত্রিকার নামে ছড়িয়ে পড়া এই ফটোকার্ডটি ভুয়া

মধ্যরাতে মাঝরাস্তায় বাঘকে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে মাতাল—ভাইরাল ভিডিওটি ফেক

পাকিস্তানি জেনারেলকে ‘ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলযুক্ত বাংলাদেশের পতাকা উপহারে’র দাবি নিয়ে যা বলল সিএ ফ্যাক্ট চেক

অরকার আক্রমণে তরুণী প্রশিক্ষকের মৃত্যু, ভাইরাল ভিডিওটি সম্পর্কে যা জানা গেল

গোপালগঞ্জ সহিংসতা নিয়ে অসম্পর্কিত ভুয়া তথ্য ছড়াচ্ছে আ. লীগ: প্রেস উইং

নিহত সোহাগকে হিন্দু দাবি করে মিথ্যা প্রতিবেদন করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম: প্রেস উইং

নাটকের দৃশ্যকে ধর্ষণের পর হত্যা দাবিতে প্রচার

পটুয়াখালীতে তরুণীকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার ভাইরাল ভিডিও সম্পর্কে যা জানা গেল

ইন্দুরকানীতে দেবর-ভাবিকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনাটি কি রাজনৈতিক

ইটভাটায় যুবক ও চিতাবাঘের লড়াইয়ের ভিডিও বাংলাদেশের নয়, ভারতের