নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করলে প্রথম যে স্থাপত্য নজর কাড়ে, তা হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। এটি শুধু একটি স্থাপনা নয়; এটি শিল্প ও নান্দনিকতার প্রতীক। পাশাপাশি ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতার ইতিহাসের এক জীবন্ত স্মারক।
দেশের প্রায় প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজস্ব শহীদ মিনার রয়েছে, যা ওই প্রতিষ্ঠানের ঐতিহ্য, ইতিহাস এবং শিক্ষার্থীদের আত্মত্যাগের চেতনাকে বহন করে। ঠিক তেমনি, নোবিপ্রবির কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটি শহীদদের আত্মত্যাগকে স্মরণীয় করার উদ্দেশ্যে নির্মিত।
নোবিপ্রবি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় ২০১৪ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি, মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে। মিনারটির মূল বেদি থেকে উচ্চতা ২৬ ফুট এবং এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরকে দৃষ্টিনন্দনভাবে শোভিত করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের নকশাটি অনন্য। শিক্ষার্থীরা বলছেন, দিনের আলোয় মিনারটি তাদের চোখে অনুপ্রেরণার প্রতীক, আর রাতের আলোকসজ্জায় এটি দাঁড়ায় অন্ধকারে আলোর দিশারির মতো। ২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ ও ১৬ ডিসেম্বরের মতো জাতীয় দিবসগুলোতে তারা এখানে জড়ো হয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
নোবিপ্রবির শহীদ মিনারের সামনে দাঁড়ালে কেউ শুধু স্থাপত্য দেখেন না; তিনি দেখেন ইতিহাস, আত্মত্যাগ এবং শিক্ষার চিরন্তন শক্তিকে। বিশেষ করে ভাষার জন্য যারা জীবন দিয়েছেন, তাদের উত্তরসূরি হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হলো—সত্য, ন্যায় ও স্বাধীন চিন্তার পথে অটল থাকা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ওশানোগ্রাফি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. শফিউল্লাহ বলেন, নোবিপ্রবি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটি সবসময় মনে করিয়ে দেয় একজন শিক্ষার্থীর সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র হলো তার কলম, তার জ্ঞান এবং তার যুক্তিবোধ। গোলচত্বরে হাঁটতে হাঁটতে কিংবা শিশিরভেজা সকালে সূর্যোদয় অবলোকনের সময় যখন এই শহীদ মিনারে চোখ পড়ে, তখন মনে হয় জ্ঞানের আলো যেন নীরবে আমাদের পথ দেখিয়ে দিচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, শহীদদের ত্যাগ যেমন চিরন্তন, তেমনি এই মিনারও আমাদের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ করে। শহীদ মিনারের মাথায় লাল বলটি দেখলেই মনে হয়, সত্যের আলোই অন্ধকার দূর করবে, আর জ্ঞানই আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার দিশা দেবে। এই মিনার আমাদের শেখায়, সত্য লেখার সাহসই আসল সাহস আর জ্ঞানের আলোয় আলোকিত মনই পারে জাতিকে এগিয়ে নিতে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মনির হোসেন বলেন, নোবিপ্রবির শহীদ মিনার বাঙালির ভাষা, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক সংগ্রামের এক অনন্য প্রতীক। এটি মনে করিয়ে দেয় কলম, জ্ঞান ও প্রতিবাদী চেতনা সবসময় মুক্তির পথে শক্তিশালী হাতিয়ার ছিল। ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধ, সামরিক শাসনবিরোধী প্রতিরোধ থেকে সাম্প্রতিক আন্দোলন—সব সংগ্রামের অনুপ্রেরণা বহন করে এই স্থাপত্য।