বরিশালে মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা কাজে আসছে না। গত ১৫ দিনে বিভাগের ছয় জেলায় ৫৭৪ জেলেকে কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এর মধ্যে বরিশাল জেলায় সর্বোচ্চ ৩৬২ জন জেলের জেল হয়েছে।
জেলার হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জ, মুলাদীতে মেঘনা, আড়িয়াল খা, তেতুলিয়া নদী অরক্ষিত থাকায় দেদারছে মা ইলিশ নিধন চলছে। মৎস্য অধিদপ্তরও অভিযানের এই পরিণতিতে হতাশা প্রকাশ করেছেন।
এদিকে মা ইলিশ রক্ষায় আজ শনিবার বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে যৌথ অভিযান চালানো হয় মেঘনাসহ বিভিন্ন নদীতে।
বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১২ অক্টোবর থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত মা ইলিশ রক্ষায় বরিশালের ছয় জেলায় ১ হাজার ৮৫টি অভিযান পরিচালনা করেছে মৎস্য অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্টরা। অভিযানে এ পর্যন্ত মা ইলিশ উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় ১২ টন। ওই সময়ের মধ্যে বিভাগে নিষিদ্ধ জাল জব্দ করা হয় ৩৪ লাখ মিটার। এ ছাড়া জেল দেওয়া হয়েছে ৫৭৪ জনকে।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ছয় জেলার মধ্যে জেল জরিমানা অর্ধেকেরও বেশি হয়েছে বরিশাল জেলায়। হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জে মেঘনাসহ বিভিন্ন নদী তীরে মাছ বিক্রি চলছে প্রকাশ্যে। মেঘনাসহ আশপাশের নদী তীরবর্তী এলাকা এবার অরক্ষিত থাকায় বরিশালের ১০টি উপজেলায় জেল, জরিমানা বেশি হচ্ছে।
জানতে চাইলে মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামাল হোসেন বলেন, এবারের অভিযানে তারা একের পর এক হামলার শিকার হচ্ছেন। নিজেদের রক্ষায় গুলিবর্ষণ করা হয়েছে। নদীতীরবর্তী প্রভাশালীদের কাছ থেকে সহযোগিতা হতাশাজনক।
হিজলা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এম এম পারভেজ বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত সহযোগিতা না পাওয়ায় মা ইলিশ ধরা থামানো যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক নৃপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, জনপ্রতিনিধিসহ সাধারণ জনগণ মা ইলিশ রক্ষায় এভাবে অসহযোগিতা করলে সরকার এক সময়ে এমন অভিযান বন্ধ করে দেবে। কারণ এত টাকা খরচ করে যদি সফলতা না আসে তাহলে কেন সরকার নিষেধাজ্ঞা দেবে।
এদিকে ইলিশ রক্ষায় আজ শনিবার সকালে বরিশাল বিভাগীয় প্রশাসন, জেলা প্রশাসন ও জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের আয়োজনে বরিশাল-হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার কীর্তনখোলা, মেঘনাসহ অন্যান্য নদীতে বিভিন্ন দপ্তরের সমন্বয়ে অভিযান অনুষ্ঠিত হয়।
অভিযানে নেতৃত্ব দেন বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মো. শওকত আলী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বরিশাল জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম, অতিরিক্ত ডিআইজি ফারুক উল হক, মৎস্য অধিদপ্তর বিভাগীয় উপপরিচালক নৃপেন্দ্র নাথ বিশ্বাস প্রমুখ। অভিযানে ৮০ কেজি ইলিশ এবং ১ লাখ ২০ হাজার মিটার জাল জব্দ করা হয়।