দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে টানা বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসে ৯ শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন কয়েক শ জন। মালাক্কা প্রণালীতে গঠিত বিরল ক্রান্তীয় ঝড় ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডজুড়ে বৃষ্টি ঝরিয়েছে। আলাদা আরেকটি ঝড় আঘাত হেনেছে শ্রীলঙ্কায়, যার প্রভাবে ভারী বৃষ্টি এবার ভারতের দক্ষিণ উপকূলে পৌঁছাচ্ছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও এএফপির হিসাবে—ইন্দোনেশিয়ায় অন্তত ৪৩৫, শ্রীলঙ্কায় ৩৩৪, থাইল্যান্ডে ১৬২ এবং মালয়েশিয়ায় ২ জন মারা গেছেন। ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপে সাইক্লোন সেনইয়ার ব্যাপক ভূমিধস ও বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। সরকারি হিসাব বলছে, মৃত্যুর সংখ্যা রোববার বেড়ে পৌঁছেছে ৪৩৫ জনে। শনিবার এই সংখ্যা ছিল ৩০৩। নিখোঁজ রয়েছেন আরও ৪০৬ জন।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় উদ্ধারকাজে হিমশিম খাচ্ছে দলগুলো। হেলিকপ্টারে করে খাদ্য ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী পাঠানো হচ্ছে। স্থানীয়দের কেউ কেউ জানাচ্ছেন, পানির তোড়ে ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে, সবকিছু কাদায় ডুবে আছে। উত্তর আচেহ প্রদেশে খাদ্যাভাব দেখা দেওয়ায় কিছু এলাকায় ত্রাণ পৌঁছানোর আগেই মানুষ খাবার-পানীয় লুট করে নিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
থাইল্যান্ডের দক্ষিণ অঞ্চলে প্রচণ্ড বর্ষণে অন্তত ১৬২ জনের মৃত্যু হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রায় ৩৫ লাখ মানুষ। কোথাও কোথাও রোগীকে পৌঁছাতে এবং জরুরি সরঞ্জাম দিতে হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হয়েছে। হ্যাত ইয়াই শহরে ৩০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। গত মঙ্গলবার সেখানে পানির উচ্চতা আট ফুট ছাড়িয়ে যায়, বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে ৩০ নবজাতকসহ একটি মাতৃসদন।
এদিকে, সাইক্লোন ডিটওয়ার আঘাতে শ্রীলঙ্কায় অন্তত ৩৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ১১ লাখের বেশি মানুষ। ২৫ হাজার ঘরবাড়ি ধ্বংস এবং অন্তত ১ লক্ষ ৪৭ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন সরকারি কেন্দ্রগুলোতে। রাজধানী কলম্বোর নিম্নাঞ্চল ডুবে গেছে। ১৯১ জন এখনো নিখোঁজ। বহু মানুষ ঘরের ওপরতলায় আশ্রয় নিয়ে টিকে আছেন, মালপত্র বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে এখনো খাবার-ওষুধের চাপ বাড়ছে।
মালাক্কা প্রণালী থেকেই উঠে আসা ঝড় সেনইয়ার মালয়েশিয়ায় আঘাত হানার পর অন্তত ২ জন মারা গেছে। ঝড়ের আগে ৩৪ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হলেও উত্তরের পেলিস অঙ্গরাজ্যে কয়েকজন আটকা পড়ে যান। নৌকা ও উদ্ধার দলের সহায়তায় তাঁদের বের করে আনা হয়। ৭৩ বছরের গন কাসিম বলেন, ‘পানিটা এমন ছিল যেন সমুদ্র। কোথাও যাওয়ার জায়গাই ছিল না।’