হোম > বিশ্ব > আফ্রিকা

নাইজেরিয়ায় শত শত স্কুলছাত্রীকে অপহরণ করে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­

২০১৪ সালে চিবুক শহরের একটি স্কুল থেকে ২৭৬ স্কুলছাত্রীকে অপহরণ করে বিশ্বব্যাপী আলোচনায় আসে বোকো হারাম। ছবি: এএফপি

নাইজেরিয়ার সংঘাতকবলিত উত্তরাঞ্চলে চলতি সপ্তাহে দ্বিতীয়বারের মতো গণ-অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার দেশটির নাইজার অঙ্গরাজ্যের পাপিরি এলাকার সেন্ট মেরিস ক্যাথলিক স্কুলে হামলার ঘটনা ঘটে। এর কিছুক্ষণ পর অপহরণের বিষয়টি নিশ্চিত করে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। তবে হামলাকারীরা কারা, কিংবা কতজন শিক্ষার্থীকে অপহরণ করা হয়—সেটি তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

স্থানীয় টিভি চ্যানেল অ্যারাইস টিভি জানিয়েছে, ৫২ জন স্কুলছাত্রীকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পুলিশ বলছে, শিশুদের উদ্ধারে বিশেষ দল মোতায়েন করা হয়েছে।

এই হামলা ও অপহরণের ঘটনাটি ঘটেছে নাইজেরিয়ার কেব্বি অঙ্গরাজ্যের একটি স্কুল থেকে ২৫ ছাত্রীকে অপহরণের মাত্র চার দিন পর। এরপরই প্রশ্ন উঠেছে, নাইজেরিয়ায় কেন বারবার স্কুলগুলো লক্ষ্যবস্তু হয় এবং স্কুলছাত্রীদের অপহরণ করে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়।

আফ্রিকার সবচেয়ে জনবহুল দেশ নাইজেরিয়ায় স্কুলছাত্রী অপহরণ এখন নিরাপত্তাহীনতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয়দের মতে, সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর কাছে স্কুল হলো কৌশলগত লক্ষ্যবস্তু—যেখানে হামলা করলে বেশি মনোযোগ পাওয়া যায়।

ইউনিসেফ গত বছর বলেছিল, সংঘাত প্রবণ ১০টি অঙ্গরাজ্যের মাত্র ৩৭ শতাংশ স্কুলে হুমকি শনাক্তের প্রাথমিক সতর্কতা ব্যবস্থা রয়েছে। এদিকে এমন সময়ে এসব অপহরণের ঘটনা ঘটছে, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করছেন নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর গণহত্যা চলছে।

বাস্তবে দেশটিতে হামলার শিকার হন মুসলিম ও খ্রিষ্টান উভয়ই। চলতি সপ্তাহে কেব্বি রাজ্যের যে স্কুলে হামলা হয়েছে, সেটি মুসলিমপ্রধান মাগা শহরে অবস্থিত।

১০ বছর আগে বোকো হারাম নাইজেরিয়ার চিবুক শহরের একটি স্কুল থেকে ২৭৬ ছাত্রীকে অপহরণ করে আন্তর্জাতিক মনোযোগ কাড়ে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উত্তরাঞ্চলে ডজন-ডজন ‘ব্যান্ডিট’ বা ডাকাত গোষ্ঠী সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা সাধারণত নিরাপত্তাহীন, দূরবর্তী গ্রামগুলোতে হামলা চালায়।

চিবুক শহরে বোকো হারামের ওই ঘটনার পর থেকে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ১ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থীকে (বেশির ভাগই ছাত্রী) অপহরণ করা হয়। তাদের অনেককে মুক্তি দেওয়া হয় মুক্তিপণের বিনিময়ে।

বোকো হারাম ও আইএস-সংযুক্ত গোষ্ঠীগুলো

বোকো হারাম বহু বছর ধরে উত্তর নাইজেরিয়ার বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে, বিশেষত উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং পার্শ্ববর্তী ক্যামেরুন, নাইজার ও চাদে ত্রাস সৃষ্টি করে আসছে। সক্রিয় এই জিহাদি জঙ্গি সংগঠনটির আসল নাম ‘জামায়াতু আহলিস সুন্নাহ লিদ্দাওয়াতি ওয়াল জিহাদ’। এদের মূল লক্ষ্য হলো পশ্চিমা শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিরোধিতা করা এবং নাইজেরিয়ায় শরিয়াহ আইনভিত্তিক একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। এটি ২০০১ সালে মোহাম্মদ ইউসুফ প্রতিষ্ঠা করেন এবং ২০০৯ সালে নাইজেরিয়া সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করে।

২০১৪ সালে চিবুক শহরের একটি স্কুল থেকে ২৭৬ স্কুলছাত্রী অপহরণের মাধ্যমে তারা বিশ্বব্যাপী আলোচনায় আসে। এরপর ২০১৮ সালে তারা ইয়োবে অঙ্গরাজ্যের একটি কলেজ থেকে আরও ১১০ ছাত্রীকে অপহরণ করে।

বছরের শুরু থেকে গোষ্ঠীটি নতুন করে শক্তি সঞ্চয় করেছে। আগে বিভক্ত থাকলেও এখন অনেক যোদ্ধা স্থানীয় আইএস-সংযুক্ত সংগঠনের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়েছে। উভয় গোষ্ঠীতে কতজন যোদ্ধা আছে জানা যায় না, তবে ধারণা করা হয় সংখ্যা কয়েক হাজার।

এরা তরুণদের জোর করে দলে টেনে নিয়ে যাচ্ছে—বিশেষত সেসব তরুণকে, যারা সুরক্ষিত এলাকাগুলোতে মানবিক সহায়তা পাচ্ছে না। এদিকে, ট্রাম্প প্রশাসন চলতি বছর বিদেশি সহায়তায় বড় আকারে কাটছাঁট করায় নাইজেরিয়ার পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়েছে।

বোকো হারাম অপহরণ করে মূলত তাদের উদ্দেশ্য পূরণের জন্য, যার মধ্যে রয়েছে পশ্চিমা শিক্ষাব্যবস্থার বিরোধিতা এবং নাইজেরিয়ায় শরিয়াহভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। অপহৃতদের মধ্যে অনেককেই তারা নিজেদের সংগঠনে যোগ দিতে বাধ্য করে অথবা মুক্তিপণ আদায়ে ব্যবহার করে।

তবে বোকো হারামের প্রধান লক্ষ্য হলো পশ্চিমা ধাঁচের শিক্ষাব্যবস্থার বিরোধিতা করা এবং এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। তারা বিশ্বাস করে যে এই ধরনের শিক্ষা তাদের ‘ইসলামিক’ আদর্শের পরিপন্থী।

তাদের আরেকটি লক্ষ্য হলো নাইজেরিয়ায় ইসলামিক শরিয়াহভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য তারা সহিংসতা ও অপহরণের মতো কর্মকাণ্ডকে ব্যবহার করে।

এর বাইরে অপহৃতদের (মেয়ে) মাধ্যমে মুক্তিপণ আদায় করে তারা তাদের সামরিক ও অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অর্থ সংগ্রহ করে। অনেক ক্ষেত্রে, অপহৃতদের (ছেলে) তাদের নিজেদের দলে যোগ দিতে বাধ্য করা হয়।

উত্তরের অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীও মূলত মুক্তিপণের জন্যই অপহরণ করে। কর্তৃপক্ষ বলছে, এদের অনেকেই আগে গবাদিপশু পালন বা কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত ছিল। দীর্ঘদিনের সংঘাতের পর তারা অস্ত্র হাতে নিয়েছে।

তাদের কাছে স্কুল একটি ‘লাভজনক’ লক্ষ্যবস্তু। এগুলোতে হামলা সাধারণত রাতে ঘটে। কখনো হামলাকারীরা মোটরসাইকেলে আসে, কখনো আবার সামরিক পোশাক পরে। ব্যান্ডিট বা ডাকাতদের এসব কর্মকাণ্ড ক্রমেই জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে যোগসূত্র তৈরি করছে—বিশেষত উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে।

মার্কিন-সমর্থিত আফ্রিকা সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ বলেছে, ব্যান্ডিটরা যদিও অনেক সময় জঙ্গিদের সঙ্গে একাকার হয়ে যায়, তবে তারা উত্তরের অস্থিতিশীলতার স্বতন্ত্র উৎস। তাদের কারণে যতজন মারা যাচ্ছে, তা উত্তর-পূর্বে বোকো হারাম ও আইএস-সংযুক্ত গোষ্ঠীর হাতে নিহত মানুষের সংখ্যার প্রায় সমান।

নাইজেরিয়া বহু বছর ধরে বোকো হারাম ও অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে। কখনো ভুলবশত বেসামরিক লোকজন সামরিক হামলার শিকার হয়েছে। সশস্ত্র ব্যান্ডিট বা ডাকাতদের ঘাঁটির ওপরও অভিযান চালিয়েছে সেনাবাহিনী।

তবুও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে জঙ্গিরা বারবার সামরিক চৌকি দখল করেছে, রাস্তায় বোমা পেতেছে, বিভিন্ন গ্রাম আক্রমণ করেছে। তবে সরকার দাবি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসছে। এর ফলে উত্তরাঞ্চলে নিরাপত্তা জোরদারের প্রচেষ্টা আরও দুর্বল হয়ে পড়েছে।

গত মাসে প্রেসিডেন্ট বোলা তিনুবু পুরোনো নিরাপত্তা প্রধানদের বদলে নতুন কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিয়েছেন। চলতি বছরের শুরুতে সন্ত্রাস ও অপরাধী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াই জোরদার করতে মার্কিন সরকার নাইজেরিয়ার কাছে ৩৪৬ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দেয়। তবে সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার ও সব ধরনের সাহায্য বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টান নির্যাতন ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে। তবে নাইজেরিয়া এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।

বছরভিত্তিক উল্লেখযোগ্য হামলা

২০২০ সালে কাতসিনা অঙ্গরাজ্যের এক মাধ্যমিক স্কুলে মোটরসাইকেলযোগে হামলা চালিয়ে ৩০০-এর বেশি ছাত্রকে অপহরণ করা হয়েছিল। এক সপ্তাহ পর তাদের মুক্তি দেওয়া হয়। এরপর ২০২১ সালে জামফারা অঙ্গরাজ্যের একটি স্কুল থেকে ৩০০ এর বেশি ছাত্রীকে অপহরণ করা হয়। কিছু সপ্তাহ পরে মুক্তিপণের বিনিময়ে সবাইকে ছেড়ে দেয় অপহরণকারীরা। ২০২৪ সালে কাদুনা অঙ্গরাজ্যের একটি সরকারি স্কুল থেকে ২৮৭ ছাত্রছাত্রী অপহরণ হয়। এদের মধ্যে ছাত্রী ছিল ১৫৭ জন, ছাত্র ১৩০ জন।

মুসলিম ব্রাদারহুড নিষিদ্ধের নির্দেশ ট্রাম্পের, নেপথ্যে সুদানকেন্দ্রিক আরব বিশ্বের নয়া ভূরাজনীতি

নামিবিয়ার নির্বাচনে আবারও জয়ী ‘অ্যাডলফ হিটলার’

রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধে ১৭ যুবককে প্ররোচনার অভিযোগ—জ্যাকব জুমার মেয়ের পদত্যাগ

ভোটে পরাজয় টের পেয়ে গিনি বিসাউয়ের প্রেসিডেন্টই কি ঘটালেন সামরিক অভ্যুত্থান

গিনি বিসাউয়ে সামরিক অভ্যুত্থান, সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখল, প্রেসিডেন্ট বন্দী

এল-ফাশেরে ৩ দিনে ২৭ হাজার মানুষকে হত্যা করেছে আরএসএফ: দারফুরের গভর্নর

১০ হাজার বছর পর জেগেছে ইথিওপিয়ার আগ্নেয়গিরি, ভারতের দিকে ধেয়ে আসছে ছাই

সিয়েরা লিওনে কালো জাদুর নামে নরবলি, নেপথ্যে ক্ষমতার নেশা

দারফুরের করদোফানে আরএসএফকে ঠেলে এগিয়ে যাচ্ছে সুদানি সেনাবাহিনী

নাইজেরিয়ায় ক্যাথলিক স্কুলের ৩ শতাধিক শিক্ষার্থীকে অপহরণ