দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমার মেয়ে ও এমপি দুদুজিলে জুমা-সামবুদলা তাঁর এমপি পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। অভিযোগ উঠেছে, তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার ১৭ জন যুবককে রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ভাড়াটে যোদ্ধা হিসেবে পাঠাতে প্রতারিত করেছিলেন। গত বছর তিনি নতুন বিরোধী দল উমখন্তো উই সিজওর (এমকে) হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। সামবুদলা দাবি করেছেন—তিনি ভেবেছিলেন, ওই যুবকেরা বৈধভাবে প্রশিক্ষণ নিতে রাশিয়ায় যাচ্ছেন।
বিষয়টিকে সামবুদলার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত বলে উল্লেখ করেছে তাঁর দল এমকে। দলের পক্ষ থেকে এটাও জানানো হয়েছে, তিনি এখন ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত দনবাস অঞ্চলে আটকে থাকা তরুণদের দেশে ফেরাতে মনোযোগ দিয়েছেন।
এদিকে দনবাসে আটকে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকার যুবকদের একজন ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে ভয়েস নোট পাঠিয়ে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘সিনেমায় যা দেখি, তা আমরা বাস্তবে দেখছি।’ ওই যুবকের ভাই জানিয়েছেন, বিপদাপন্ন ভাইকে তাঁর পরিবার শুধু নিরাপদে ফেরত পেতে চায়।
ভয়েস নোটে সিফো (ছদ্মনাম) দাবি করেছেন, তাঁকে দুজন মানুষ রাশিয়ায় নিয়ে যেতে রাজি করান, এর মধ্যে একজন হলেন জ্যাকব জুমার মেয়ে সামবুদলা। কিন্তু সামবুদলা দাবি করছেন—তিনি কাউকে ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল পথে পাঠাননি, তিনিও প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
সিফোর ভাই জোলানি জানান, তাঁর ভাই গত ৮ জুলাই দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়েন। তিনি ভেবেছিলেন, এমকে পার্টির জন্য বডিগার্ডের প্রশিক্ষণ নিতে যাচ্ছেন। কিন্তু রাশিয়ায় পৌঁছানোর পর রুশ ভাষায় লেখা একটি চুক্তিতে সিফোসহ দক্ষিণ আফ্রিকার অন্য যুবকেরা সই করতে বাধ্য হন। পরে বিপদ বুঝে সাহায্যের জন্য সামবুদলা ও অপর নিয়োগকারীর কাছে তাঁরা সহযোগিতার আবেদন করেন। সামবুদলা ও কথিত অপর ব্যক্তি রাশিয়ায় গিয়ে যুবকদের সঙ্গে দেখাও করেন এবং কোনো বিপদ নেই বলে আশ্বস্ত করেন।
কিন্তু গত আগস্টের শুরুর দিকে সিফোসহ দক্ষিণ আফ্রিকার অন্য যুবকদের ইউক্রেনে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাঁদের গোলযোগপূর্ণ দনবাস অঞ্চলের দোনেৎস্কে পাঠানো হয়। ফ্রন্টলাইনের মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরেই এখন অবস্থান করছেন বলে দাবি করেছেন সিফো। তাঁদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে একজন লিখেছেন, ‘বলা হয়েছিল নিরাপদ জায়গায় নেওয়া হবে, কিন্তু আমাদের আরও ভয়াবহ স্থানে আনা হলো। এখানে ড্রোন হামলাও হচ্ছে।’
এই অবস্থায় ওই গ্রুপে সামবুদলার নামে একটি কন্টাক্ট যোগ হয়, যিনি সবাইকে ধৈর্য ধরতে বলেন। বিবিসি ওই নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পায়নি।
এদিকে সামবুদলার সৎবোন নকসাজানা জুমা-মনকুবি অভিযোগ করেছেন, সামবুদলা ও আরও দুই ব্যক্তি ১৭ দক্ষিণ আফ্রিকানকে প্রতারণা করে রাশিয়ায় পাঠিয়ে একটি ভাড়াটে বাহিনীর হাতে তুলে দেন। দক্ষিণ আফ্রিকার পুলিশ বিভাগ জানিয়েছে, অভিযোগ দুটি একসঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে—মানব পাচার, বেআইনি নিয়োগ বা প্রতারণার মতো অপরাধ হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে।
বিষয়টি নিয়ে সামবুদলার হলফনামায় বলা হয়েছে—তিনি নিজেও রাশিয়ায় নন-কমব্যাট প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন এবং একই ধরনের প্রশিক্ষণের সুযোগ ভেবে অন্যদেরও উৎসাহ দিয়েছিলেন। তিনি লিখেছেন, ‘আমি কখনো ইচ্ছে করে কাউকে বিপদে ফেলতাম না। আমিও প্রতারণার শিকার।’
দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার জানিয়েছে, মোট ১৭ জন নাগরিক দনবাস থেকে সাহায্যের অনুরোধ করেছেন। সরকার আরও জানিয়েছে, তাঁরা কূটনৈতিক পথে বিষয়টি সমাধান করবে, যদিও এখন পর্যন্ত কেউ দেশে ফিরতে পারেননি।