জ্বালানি তেলের সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধির ফলে করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের চলমান গতিকে ব্যাহত করবে বলে মনে করছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)। প্রতিষ্ঠানটির মতে, করোনার ক্ষতি কাটিয়ে পুনরুদ্ধারের পথে থাকা দেশের বড় ছোট সব ধরনের ব্যবসায়ী জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
আজ বুধবার কোভিড-১৯ উত্তরণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আত্মবিশ্বাস যাচাইয়ে ৬ষ্ঠ পর্যায়ের জরিপের ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে সানেমের পক্ষ থেকে এ শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
জরিপের ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিষয়ের অধ্যাপক ও সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন—আমরা জরিপে দেখেছি, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় দেশের প্রায় সব উৎপাদন শিল্প প্রবৃদ্ধির পথে রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ের ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি, রেমিট্যান্সে প্রবাহে ভাটা এবং জ্বালানি তেলের সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধি এ প্রবৃদ্ধিকে ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত করবে।
তিনি বলেন, বাজারে নিত্যপণ্যের দামের সঙ্গে পরিবহন ও উৎপাদন ব্যয় মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং ভোক্তা সবাইকে বিপদে ফেলবে। মানুষ ব্যয় কমে যাবে এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার (রিকভারি) বাধাগ্রস্ত হবে।
সানেমের জরিপের ফলাফলে বলা হয়, গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত করোনার ধাক্কা অনেকটা সামলিয়ে দেশের প্রায় ২১ শতাংশ প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী পুনরুদ্ধারের পথে রয়েছে। আর ৫২ শতাংশ প্রতিষ্ঠান রয়েছে মাঝারি মাত্রার পুনরুদ্ধারের পথে। অন্যদিকে এখনো দুর্বল পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে ২৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠান।
এর তিন মাস আগে ৫ম পর্যায়ের এই জরিপে সানেম জানিয়েছে, জুলাই পর্যন্ত মাত্র ৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী পুনরুদ্ধারের দিকে পৌঁছাতে পেরেছে। তখনো দুর্বল পুনরুদ্ধারের মধ্যে ছিল ৬৪ শতাংশ প্রতিষ্ঠান।
ড. সেলিম রায়হান বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থ যারা পেয়েছেন তাঁরা কিছুটা ভালো অবস্থায় আছেন। তবে যারা এই প্রণোদনা পাননি, তাঁরা অনেক পিছিয়ে পড়েছেন। আর ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা এ ক্ষেত্রে মাঝারি ও বৃহৎ উদ্যোক্তাদের তুলনায় বেশি পিছিয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন, সরকারের এই প্রণোদনা প্যাকেজ পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক উদ্যোক্তা ঘুষের অভিযোগ করেছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
প্রসঙ্গত, ৫০২টি শিল্প ও সেবা প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা অথবা তাঁদের প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে গত অক্টোবর মাসে এই জরিপটি পরিচালনা করা হয়েছে।