ঈদুল আজহার পর সাভারের চামড়াশিল্প নগরীতে কাঁচা চামড়া ঢুকতে শুরু করেছে। গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত এখানে প্রায় ৪ লাখ লবণ ছাড়া কাঁচা চামড়া এসেছে। চামড়া বিক্রেতারা অভিযোগ করছেন, তাঁরা সরকার নির্ধারিত ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। ট্যানারিগুলো নানা অজুহাতে নির্ধারিত দামে চামড়া কিনছে না। যার ফলে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে সরবরাহকারীদের মধ্যে।
সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, এ বছর ঢাকায় গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার মূল্য নির্ধারিত হয়েছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। ঢাকার বাইরে এর দর ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। সর্বনিম্ন দর ঢাকায় ১ হাজার ৩৫০ টাকা ও ঢাকার বাইরে ১ হাজার ১৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু মাঠপর্যায়ে এসব দাম কার্যকর হয়নি।
অভিযোগ রয়েছে, চামড়াশিল্প নগরীর ট্যানারিগুলো সরকার নির্ধারিত মূল্য মানছে না। তারা সরবরাহকারীদের কাছ থেকে লবণ ছাড়া কাঁচা চামড়া কিনেছে ৭০০ থেকে ৯০০ টাকায়। যার ফলে সরবরাহকারীরা ক্ষুব্ধ ও হতাশ।
চামড়াশিল্প নগরীর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে গত সোমবার এলাকা পরিদর্শনে যান শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত সাভারের ট্যানারিগুলোয় প্রায় ৩ লাখ ৭৮ হাজার চামড়া ঢুকেছে। ঢাকাসহ সারা দেশে আরও ৭ লাখ ৫০ হাজারের বেশি চামড়া রয়েছে, যেগুলো কয়েক দিনের মধ্যে কারখানাগুলোতে পৌঁছাবে। তাঁর ভাষায়, ‘সরকার চেষ্টা করেছে যেন চামড়া সংগ্রহের প্রক্রিয়া শৃঙ্খলার মধ্যে থাকে এবং বিক্রেতারা নির্ধারিত দাম পান।’
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত ট্যানারিগুলোয় কোনো লবণযুক্ত চামড়া আসেনি। গতকাল পর্যন্ত নগরীর ১৪০টি কারখানায় ঢুকেছে লবণ ছাড়া কাঁচা চামড়া, যেগুলোর উৎস মূলত রাজধানী ও আশপাশ এলাকা। এগুলোর জন্য দাম দেওয়া হয়েছে গড়ে ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা।
স্বাধীন ও সালমা ট্যানারির মালিক সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, ‘দেশে চামড়াশিল্পে বড় সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু পরিবেশগত কারণে আমরা ক্রমাগত পিছিয়ে পড়ছি। আন্তর্জাতিক বাজারে কমপ্লায়েন্স মানতে ব্যর্থ হওয়ায় সঠিক দাম পাচ্ছি না। তাই চামড়ার উপযুক্ত মূল্য দিতে পারছি না।’
চামড়া খাতের কাঠামোগত দুর্বলতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিটিএর সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, চামড়াশিল্প নগরীর কারখানাগুলো যদি আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী উৎপাদন প্রক্রিয়া না মানে, তাহলে বিদেশে রপ্তানি বাড়বে না এবং দেশেও চামড়ার দাম বাড়বে না।