ভারতের নিষেধাজ্ঞা
ভারতের একের পর এক নিষেধাজ্ঞায় স্থলপথে রপ্তানি বাণিজ্যে ধস নেমেছে। বেনাপোল বন্দরে স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন গড়ে ২৫০ ট্রাক পণ্য রপ্তানি হলেও বর্তমানে তা নেমে এসেছে ৩০ ট্রাকের নিচে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ প্রবণতা অব্যাহত থাকলে রপ্তানিতে বড় ধরনের সংকট তৈরি হবে। ১৩ আগস্ট বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে মাত্র ২৯ ট্রাক পণ্য ভারতে গেছে। বিপরীতে ভারত থেকে এসেছে ২২২ ট্রাক পণ্য।
সর্বশেষ ১১ আগস্ট ভারত সরকার পাট ও পাটজাতীয় পণ্যের কাপড়, পাটের দড়ি বা রশি, পাটজাতীয় পণ্য দিয়ে তৈরি দড়ি বা রশি এবং পাটের বস্তা বা ব্যাগ আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এই সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর করা হয় বন্দরে। এর আগে গত ২৭ জুন আরেক প্রজ্ঞাপনে ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তর (ডিজিএফটি) বাংলাদেশ থেকে স্থলবন্দর দিয়ে কাঁচা পাট, পাটের রোল, পাটের সুতা ও বিশেষ ধরনের কাপড় আমদানি বন্ধ করে। এ ছাড়া গত ১৭ মে তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক, কাঠের আসবাব, সুতা ও কোমল পানীয়র মতো পণ্যে নিষেধাজ্ঞা দেয় দেশটি। তার আগে ৯ এপ্রিল কলকাতা বিমানবন্দর ব্যবহার করে বিশ্বের অন্যান্য দেশে পণ্য রপ্তানির সুবিধাও বন্ধ করে দেওয়া হয়।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের দপ্তর সম্পাদক মোস্তাফিজ্জোহা সেলিম বলেন, বাণিজ্যে নিষেধাজ্ঞা দুই দেশের জন্যই ক্ষতিকর, তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশ।
বেনাপোল আমদানি-রপ্তানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক জানান, বছরে ভারতের সঙ্গে প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলারের আমদানি ও ২ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি বাণিজ্য হয়। বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয় পাট ও পাটজাত পণ্য। কিন্তু ভারত সরকার নানা অজুহাত দেখিয়ে এসব পণ্য স্থলপথে রপ্তানি বন্ধ করে সমুদ্রপথ ব্যবহার করতে বলছে। যেসব পণ্য ভারতে রপ্তানি হয়, তার ১ শতাংশের কাছাকাছি যায় সমুদ্রপথে। ফলে বিধিনিষেধের কারণে মূলত এসব পণ্য রপ্তানির সহজ পথটি বন্ধ করে দিয়েছে ভারত।
রপ্তানিকারক ইদ্রিস আলী বলেন, ‘ভারতে সরকার পরিবর্তনে আমাদের বাণিজ্যে প্রভাব পড়ে না। অথচ বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের পর থেকে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে ভারত। এতে সম্পর্কও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।’
বেনাপোল বন্দরের পরিচালক শামিম হোসেন বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারত থেকে ৯৫ হাজার ৮৯৯ ট্রাকে ২০ লাখ টনের বেশি পণ্য এসেছে। এ সময় বাংলাদেশি ৪৭ হাজার ৪৩৭টি ট্রাকে ভারতে রপ্তানি হয় ৪ লাখ ২১ হাজার টন পণ্য। তবে গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে নিষেধাজ্ঞার কারণে রপ্তানি কমে যাচ্ছে।