মুক্তিযুদ্ধে নিজের অবস্থানের কথা জানিয়ে টাঙ্গাইল-৮ (বাসাইল-সখীপুর) আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ও দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান বলেছেন, ‘আমি নিজে যেহেতু মুক্তিযোদ্ধা, সারা জীবন আমি মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান করব।’ গতকাল রোববার রাতে সখীপুর সরকারি কলেজ মোড় এলাকায় এক নির্বাচনী সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
তাঁর বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। ফেসবুকে কয়েকটি আইডি থেকে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) দিয়ে তৈরি করা ভিডিও শেয়ার করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সখীপুর উপজেলার একাধিক ব্যক্তি জানান, আহমেদ আযম খান দীর্ঘদিন ধরে সখীপুর-বাসাইলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। কিন্তু তিনি যে মুক্তিযোদ্ধা, এর আগে তাঁরা কখনো শোনেননি। এ সময় তাঁরা যোগ করেন, হয়তো তাঁদের জানার মধ্যে ভুল থাকতে পারে।
তবে আজ সোমবার সখীপুর উপজেলার একটি অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান বলেন, ‘একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে আমি সক্রিয় আঞ্চলিক (বাসাইল অঞ্চলের) সংগঠকদের মধ্যে একজন ছিলাম। আমি মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সম্পৃক্ত হই তখনকার আমাদের যিনি ছাত্রনেতা ছিলেন, খন্দকার আব্দুল বাতেনের সঙ্গে।
‘আমরা যাঁরা খন্দকার আব্দুল বাতেনের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে সম্পৃক্ত ছিলাম, তাঁদের কেউই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভাতাপ্রাপ্ত নই এবং তালিকাভুক্তও নই। কারণ উনি (আব্দুল বাতেন) কোনো স্বীকৃত সাবসেক্টর কমান্ডার ছিলেন না। আমরা তখন তুখোড় ছাত্ররাজনীতি করেছি, এই দেশ স্বাধীনের জন্য ভূমিকা পালন করেছি। কোনো ভাতার জন্য চিন্তা করে এসব করিনি।’
আযম খান আরও বলেন, ‘এর আগে আওয়ামী লীগের সময়েও আমি টক শোতে অনেকবার নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা বলাতে ডিজিএফআইয়ের কথা শুনেছি—তাঁরা বাসাইলে ও সখীপুরে তদন্ত করতে এসেছে যে—আমি মুক্তিযুদ্ধ করেছি কি-না। কিন্তু আমি মুক্তিযুদ্ধ করেছি এবং মুক্তিযুদ্ধের একজন আঞ্চলিক সংগঠকও ছিলাম।’
অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান বলেন, ‘যাঁরা এই প্রজন্মের, তাঁরা অনেকেই হয়তো চেনেন না। আজকে এই কথা বলতে হচ্ছে আমার মুখ থেকে, এটা অনেক কষ্টের, কারণ, মুক্তিযোদ্ধা হয়ে কোনো দিন ভাতা নিইনি। পত্রপত্রিকায় দেখি লাখ-লাখ ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ভাতা নিচ্ছে।
‘আর আমি জেনুইন (প্রকৃত) মুক্তিযোদ্ধা হয়েও অনেক টক শোতে বলেছি—আমি ভাতাপ্রাপ্ত নই, কারণ, আমি তালিকাভুক্ত নই। আমরা যাঁরা বাতেন ভাইয়ের সঙ্গে যুদ্ধ করেছি, অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা, তাঁরা কেউই ভাতাপ্রাপ্ত নই।’
কোন এলাকায় যুদ্ধ করেছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এ ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি মুক্তিযুদ্ধের সময় টাঙ্গাইলের পশ্চিম এলাকা, বাতেন ভাইয়ের যেহেতু সামরিক প্রশিক্ষণ ছিল না, আমরা বিচ্ছিন্নভাবেই কিছু যুদ্ধ করেছি।
‘কারণ, আমরা মূলত রাজনৈতিক কর্মী, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ট্রেনিং নিতে আমরা ভারতে যাইনি, আমাদের ওই রকম প্রশিক্ষণ ছিল না, আমাদের যিনি নেতা, বাতেন ভাই, উনারও ছিল না, আমরা মূলত বিচ্ছিন্ন কিছু যুদ্ধ করেছি। শেষ দিকে অবশ্যই, শেষ তিন মাসে বাসাইলে সামাদ গামা নামের একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, ভূঞাপুরে তাঁর বাড়ি ছিল, তাঁর সঙ্গেও কিছুদিন যুদ্ধ করেছি।’
আযম খান আরও বলেন, ‘এগুলো সবই করেছি দেশপ্রেম থেকে। মুক্তিযুদ্ধের পরে কোথাও আমি কারও সঙ্গে মুক্তিবার্তায় আমার নামটা থাকুক, আমি ভাতা পাই—এমন কথা বলি নাই, এই চিন্তায় মুক্তিযুদ্ধ করি নাই।’
এর আগে গত বুধবার বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আযম খানের বিরুদ্ধে মোবাইল ফোনে টাঙ্গাইল জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক খালেক মণ্ডলকে হুমকি ও আপত্তিকর ভাষায় কথা বলার অভিযোগ ওঠে।
৩ মিনিট ৩৫ সেকেন্ডের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল রোববার ভূঞাপুরসহ টাঙ্গাইল সদর ও সখীপুরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন মুক্তিযোদ্ধারা।
ওই অডিওতে আহমেদ আযম খানকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনি আমার নির্বাচনী এলাকায় কমিটি করবেন আর আমাকে জিজ্ঞেস করবেন না? আপনার বাড়ি কোথায়? আপনার সিএস আরএস কী। আপনি আমার নির্বাচন ক্ষতিগ্রস্ত করবেন, এটা করতে দেওয়া হবে না। খামোশ। আপনার পিঠের চামড়া থাকবে না। কীভাবে আপনি বাসাইল আসেন দেখব। ফাজিলের বাচ্চা।’
তবে ছড়িয়ে পড়া অডিওটি এডিট বলে দাবি করেছেন বিএনপি নেতা আযম খান। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘অডিওটি এআই দিয়ে এডিট করে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। একটি মহল আমার নির্বাচনী প্রচারণাকে বাধাগ্রস্ত করতে চাচ্ছে।’