সিলেটের প্রতীকখ্যাত সুরমা নদীতে ব্রিটিশ ঐতিহ্যের কিনব্রিজ রেলওয়ের মাধ্যমে প্রায় ৪৩ বছর পর সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর আগে মুক্তিযুদ্ধের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ব্রিজটি ১৯৭৭ সালে রেলওয়ে প্রথম দফা সংস্কার করেছিল। সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) সংস্কারের জন্য চলতি অর্থ বছরের শুরুতে রেলওয়ে বিভাগকে দুই কোটি ১৫ লাখ টাকা অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে। সংস্কার কাজ শুরু হলে এটিই হবে মুক্তিযুদ্ধের পর রেলওয়ের মাধ্যমে কিনব্রিজের দ্বিতীয় দফা সংস্কার।
জানা যায়, ব্রিটিশ আমলে লোহার কাঠামোয় ব্রিজটি দৃষ্টিনন্দন ধনুক আকৃতিতে নির্মাণ করেছিল রেলওয়ে বিভাগ। একটানা দুই বছর নির্মাণকাজ শেষে ১৯৩৬ সালে ব্রিজটি চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল। তৎকালীন আসাম প্রদেশের গভর্নর মাইকেল কিনের নামে এই সেতুর নামকরণ হয় ‘কিনব্রিজ’। আট দশকের বেশি সময় ধরে সচল ব্রিজটি বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন এবং সিলেট অঞ্চলে সুরমা নদীর ওপর প্রথম ব্রিজ। দৈর্ঘ্য ১ হাজার ১৫০ ফুট এবং প্রস্থ ১৮ ফুট।
কিনব্রিজটির মূল কর্তৃপক্ষ সড়ক ও জনপথ বিভাগ। দেখভাল করে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ। ২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর ব্রিজটি নড়বড়ে হয়ে পড়লে দুই দিকে লোহার বেষ্টনী দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে প্রয়োজনীয় সংস্কার করেছিল সিটি করপোরেশন। এ জন্য যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছিল ৫২ দিন।
সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানায়, সর্বশেষ সংস্কার কাজ শেষে কিনব্রিজকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে ওভারব্রিজে (পদচারী-সেতু) রূপান্তর করার জন্য একটি প্রস্তাব ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সওজকে দেওয়া হয়েছিল। সম্প্রতি কিনব্রিজটি আবার যান চলাচলের ঝুঁকির মুখে পড়ায় গত ২৯ জুলাই ভারী যান চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে ব্রিজের প্রবেশ মুখে সাইনবোর্ড সাঁটানো হয়েছে।
সওজের প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, কিনব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছিল রেলওয়ের মাধ্যমে। লোহার কাঠামোর কাজ রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগ যথাযথভাবে করে বলে কিনব্রিজটি সংস্কার ও কিছু মেরামত কাজের জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
গত জুন মাসে এ কাজের জন্য সওজ থেকে প্রায় ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা অর্থ বরাদ্দ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করা হয়েছে জানিয়ে সওজ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কিনব্রিজটি নির্মাণ করা হয়েছিল রেলওয়ের মাধ্যমে। মুক্তিযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরও রেল কর্তৃপক্ষ সংস্কার করেছে। ব্রিজটির কাঠামো যাতে যথাযথ থাকে, এ জন্য রেলকেই সংস্কার করতে দেওয়া হয়েছে। তবে সংস্কারের মূল কাজ এখনো শুরু হয়নি। কারণ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন এখনো তারা টেন্ডার করতে পারেননি। পাশাপাশি নদীতে এখন পানি বেশি তাই কাজ শুরু করতে পারছেন না। মাস দু-একের মধ্যে এই টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হবে এবং এরই মধ্যে নদীর পানিও কমে যাবে। তখন মূল সংস্কার কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি।