হোম > সারা দেশ > সিলেট

কোন্দলই বিএনপির বড় সংকট

ইয়াহ্ইয়া মারুফ, সিলেট 

প্রচার জমে ওঠে সিলেটের সংসদীয় আসনগুলোয়। জনসংযোগ, উঠান বৈঠক করতে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন দলের নেতা-কর্মীদের। এক বছর আগে প্রার্থী ঘোষণা করা জামায়াতে ইসলামী প্রচারে খানিকটা এগিয়ে। দলটির সঙ্গে জোটসঙ্গী বাকি ৭ দলকে কোন কোন আসন ছেড়ে দেওয়া হবে, এ নিয়ে খানিকটা ধোঁয়াশা রয়েছে। তবে জোটের স্বার্থে জামায়াত যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত এবং এ নিয়ে কোনো কোন্দলও সৃষ্টি হবে না বলে মনে করছেন নেতারা। অন্যদিকে সিলেটের ৬ সংসদীয় আসনের ৫টিতে প্রাথমিক মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকে কোন্দল সামনে এসেছে বিএনপিতে। তিনটি আসনে বিএনপিতে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।

দুই দফায় ৫টি আসনে বিএনপি প্রাথমিক মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকে মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের অনুসারীরা প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে বিক্ষোভও করেছেন। আর সিলেট-৫ (কানাইঘাট-জকিগঞ্জ) আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেনি দলটি। আলোচনায় আছে, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় সভাপতি উবায়দুল্লাহ ফারুককে আসনটি ছেড়ে দিতে পারে বিএনপি। তবে এই আসনেও বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা ক্ষুব্ধ। তাঁরা প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশে আসনটিতে বিএনপির নিজস্ব প্রার্থী ঘোষণার দাবি জানাচ্ছেন।

এদিকে সিলেটের ৩টি আসনের প্রার্থী ঘোষণা করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এর মধ্যে একটিতে ‌‘কালোটাকার বিনিময়ে’ মনোনয়ন দেওয়ার অভিযোগ করেছেন দলটির মনোনয়নবঞ্চিত নেতা। আর ৮ দলীয় জোটের প্রার্থী চূড়ান্ত না হওয়ায় প্রচারের রয়েছে জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস। এ ছাড়া গণঅধিকার পরিষদ, এবি পার্টির প্রচারও চলছে। প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে জাতীয় পার্টির (কাদের) নেতারা। দলটি বিভাগের ১৯ আসনের প্রার্থী তালিকাও ইতিমধ্যে অনেকটা চূড়ান্ত করেছে।

সিলেট-১ (নগর ও সদর)

দীর্ঘদিন ধরে একটি মিথ প্রচারিত হয়ে আসছে যে এই আসনে যে দলের প্রার্থী জয়ী হন, তারাই সরকার গঠন করে। রাজনৈতিক দলগুলোও এ জন্য এখানে সব সময় হেভিওয়েট প্রার্থী দেয়। তবে এবার তুলনামূলক কম হেভিওয়েটদের এখানে প্রার্থী করা হয়েছে। সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির এখানে ধানের শীষের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। আব্দুল মুক্তাদির মনোনয়ন পাওয়ায় সরে গেছেন সাবেক মেয়র। এই আসনে সিলেট জেলা জামায়াতের আমির ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য হাবিবুর রহমান দলের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন। এ ছাড়া এনসিপির এহতেশাম হক, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাহমুদুল হাসান, গণঅধিকার পরিষদের আকমল হোসেন, এবি পার্টির ওমর ফারুক, খেলাফত মজলিসের তাজুল ইসলাম হাসান ও বাসদের প্রণব জ্যোতি পাল এই আসনে দলের মনোনীত প্রার্থী।

সিলেট-২ (ওসমানীনগর ও বিশ্বনাথ)

এই আসনে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও নিখোঁজ এম ইলিয়াছ আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা। আসনটিতে জামায়াতের প্রার্থী আবদুল হান্নানও নেতা-কর্মীদের নিয়ে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের হোসাইন আহমদ, গণঅধিকার পরিষদের জামান আহমেদ সিদ্দিকী, খেলাফত মজলিসের মুহাম্মদ মুনতাসির আলী ও ইসলামী আন্দোলনের আমীর উদ্দিন দলীয় প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন।

সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা, বালাগঞ্জ ও সিটির ৬টি ওয়ার্ড)

এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও যুক্তরাজ্য শাখার সভাপতি মোহাম্মদ আবদুল মালিক। প্রার্থী বদলের দাবিতে মাঠে আছেন দুই মনোনয়নপ্রত্যাশী দলটির কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এম এ সালাম ও জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরীর অনুসারীরা।

এই আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী লোকমান আহমদ ভোটের মাঠে আছেন। এনসিপির নুরুল হুদা জুনেদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে রেদওয়ানুল হক চৌধুরী, এবি পার্টি থেকে নাজমুল ইসলাম, খেলাফত মজলিস থেকে দিলওয়ার হোসাইন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের নজরুল ইসলাম মনোনয়ন পেয়েছেন। তাঁরা প্রত্যেকে মাঠে সরব। স্থানীয় সূত্র বলছে, এই আসনে বিএনপিকে ভোগাতে পারে দলীয় কোন্দল। এ ছাড়া প্রচারে এগিয়ে রয়েছে জামায়াত।

সিলেট-৪ (কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর)

বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তাঁকে ‘বহিরাগত’ উল্লেখ করে প্রার্থী বদলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে মনোনয়নবঞ্চিত আবদুল হেকিম চৌধুরী (সাবেক গোয়াইনঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান) ও হেলাল আহমদের অনুসারীরা। এতে বিএনপির নেতা-কর্মীরাও দ্বিধাবিভক্ত। স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে আলোচনা রয়েছে, এই আসনে প্রার্থী পরিবর্তন কিংবা বিদ্রোহী প্রার্থীর স্বতন্ত্র নির্বাচন—যেকোনো কিছুই হতে পারে। এই আসনে জামায়াতের প্রার্থী মো. জয়নাল আবেদিন। এ ছাড়া এনসিপির মো. রাশেল উল আলম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে সাঈদ আহমদ, খেলাফত মজলিস থেকে আলী হাসান উসামা, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মুহাম্মদ আলী, গণঅধিকার পরিষদের জহিরুল ইসলাম মনোনয়ন পেয়েছেন। তাঁরাও রয়েছেন প্রচারে।

সিলেট-৫ (কানাইঘাট-জকিগঞ্জ)

এই আসনে এখনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিএনপি। স্থানীয়ভাবে প্রচার আছে, বিএনপির সঙ্গে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের জোট হলে দলটির কেন্দ্রীয় সভাপতি উবায়দুল্লাহ ফারুককে আসনটি ছেড়ে দেওয়া হতে পারে। এমন অবস্থায় ‘অসন্তুষ্ট ও ক্ষুব্ধ’ বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। তাঁরা প্রকাশ্যে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে আসনটিতে বিএনপির নিজস্ব প্রার্থী ঘোষণার দাবি জানাচ্ছেন। বিএনপির নেতা-কর্মীর দাবি, আসনটিতে ইসলামপন্থী দলগুলো বিভাজিত থাকায় পৃথকভাবে সেই অর্থে কারও ভোটব্যাংক নেই। এখানে বিএনপির ভোটারই বেশি। আসনটিতে এবার বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে আছেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি মামুনুর রশিদ (চাকসু মামুন), যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান (পাপলু), জেলা বিএনপির উপদেষ্টা আশিক উদ্দিন চৌধুরী, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মাহবুবুল হক চৌধুরী, সংযুক্ত আরব আমিরাত বিএনপির আহ্বায়ক মো. জাকির হোসাইন, যুক্তরাজ্যপ্রবাসী ফাহিম আলম ইসহাক চৌধুরী, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সহসভাপতি শরীফ আহমদ লস্কর প্রমুখ। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীর মেয়ে সামিরা তানজিন চৌধুরীর নামও প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় আছে।

এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে মাঠে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন জেলার নায়েবে আমির আনোয়ার হোসেন খান। এখানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রেজাউল করিম আবরার, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের রেজাউল করিম জালালী, খেলাফত মজলিসের সিলেট জেলার উপদেষ্টা আবুল হাসান, এবি পার্টির আলতাফ হোসেন ও ইসলামী ঐক্যজোটের ফয়জুল হক জালালাবাদী প্রার্থী হিসেবে কাজ করছেন।

সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ)

এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন দলটির জেলা সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমেদ চৌধুরী। মনোনয়নপ্রাপ্তির দৌড়ে তাঁর সঙ্গে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ফয়সল আহমদ চৌধুরী। ‘রাতের ভোট’ হিসেবে আলোচিত ওই নির্বাচনে ফয়সল চৌধুরী লক্ষাধিক ভোট পেয়েছিলেন। এবার তিনি মনোনয়ন না পাওয়ায় অনুসারীরা হতাশ। তাঁরা প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিও জানিয়েছেন।

গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার বিএনপির একাধিক নেতা-কর্মী জানান, আসন্ন নির্বাচনে এমরান চৌধুরীর সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হবে, তাঁর ঘর সামলানো। ফয়সল চৌধুরীর অনুসারীসহ বিএনপির বিভিন্ন পক্ষকে তাঁর পক্ষে টেনে আনতে পারলে ভোটের লড়াইয়ের পথ সহজ হয়ে যাবে। অন্যথায় তাঁকে ভুগতে হবে।

আসনটিতে জামায়াতের প্রার্থী দলটির ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন। এ ছাড়া খেলাফত মজলিসের সাদিকুর রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আজমল হোসেন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের ফখরুল ইসলাম ও গণঅধিকার পরিষদের অ্যাডভোকেট জাহিদুর রহমান ভোটের মাঠে আছেন।

সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‌‘কানাইঘাট-জকিগঞ্জ নিয়ে গঠিত সিলেট-৫ আসনে দলীয় সিদ্ধান্ত দ্রুততম সময়ের মধ্যে জানানো উচিত। নেতা-কর্মীদের দলীয় প্রার্থী চাওয়া যৌক্তিক। আশা করি দলের নীতিনির্ধারকেরা তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মতামতকে গুরুত্ব দেবেন। আর বাকি যে তিনটি নির্বাচনী এলাকার কথা বলেছেন, সেগুলোর বিষয় হলো এটা প্রাথমিক তালিকা। ওই তিন এলাকায় ধানের শীষের পক্ষে কাজ চলছে। শিগগিরই চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হবে, তখন এসব সমস্যা থাকবে না।’

সিলেটে দুই মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে নিহত তিন

হত্যা মামলায় বিয়ানীবাজার পৌর আ. লীগ সভাপতি গ্রেপ্তার

সিলেটে যেসব এলাকায় ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকবে না বুধবার

চবি উপ-উপাচার্যের পদে থাকার নৈতিক অধিকার নেই: নাছির উদ্দীন

শাকসু নির্বাচন: ছাত্রদলের ২২ সদস্যের প্যানেল ঘোষণা, নারী প্রার্থী একজন ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পাদক পদ ফাঁকা

বেড়িবাঁধের মাটি কাটার সময় মাটিচাপায় শ্রমিকের মৃত্যু

সিলেটে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ছিনতাইয়ের জন্য চালককে হত্যা

মৌলভীবাজারের ৪টি আসন: নজরে চা-বাগান ও নতুন ভোটার

সিলেটে নিখোঁজ যুবকের হাত-পা ও মুখ বাঁধা লাশ উদ্ধার

নবীগঞ্জে ইটভাটার মালিককে ৩ লাখ টাকা জরিমানা