পরিবারে দায়িত্ব কাঁধে তুলতে ভিটামাটি বন্দক রেখে প্রবাসে পাড়ি জমান দিলবার মিয়া (৩২)। বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে চলছিল তাঁর পরিবার। কিছুদিন যেতে না যেতেই ঘটে যায় দুর্ঘটনা। দিলবার দেশে এল তবে জীবিত নয় তাঁর মরদেহ। গত বুধবার লাশ গ্রামে এলে পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়ে।
দিলবার মিয়া সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার চিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়নের কবিরপুর গ্রামের আইবুল মিয়ার ছেলে।
পরিবার ও স্থানীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাবা ক্যানসার রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ায় বড় ছেলে হিসেবে পরিবারের হাল ধরতে দিলবারকে পাড়ি জমাতে হয় উমানে। গত জানুয়ারি মাসে উমানে থাকা চাচা ফারুক মিয়ার সহযোগিতায় সেখানে যান। উমান যেতে ব্যয় হওয়া ২ লাখ টাকার জন্য তাঁকে ভিটামাটি বন্ধক রাখতে হয়। আশা ছিল সেখানে গিয়ে রোজকার করে জমি ফিরিয়ে আনবে। ক্যানসার আক্রান্ত বাবার চিকিৎসা ও সংসারের হাল ধরবেন। উমানে একটি ভবন নির্মাণকাজের শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন।
গত ৯ আগস্ট ভবনের কাজ চলাকালে সাত তলা ভবনের ছাদ থেকে একটি কাঠের টুকরো তাঁর মাথায় পড়লে সে গুরুতর আহত হয়। তাঁকে উমানের একটি হাসপাতালে নিলে সেখানকার চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। পরে তাঁর স্বজন ও যাঁর তত্ত্বাবধানে কাজে ছিলেন সেই মালিক মিলে মরদেহ দেশে পাঠানোর পদক্ষেপ নেন। গত বুধবার মরদেহ বাড়িতে এসে পৌঁছায়। বিকেলে জানাজা শেষে তাঁকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
দিলবার মিয়ার বাবা আইবুল মিয়া বলেন, ‘আমার ছেলের মৃত্যু দেখার আগে কেন আমার মৃত্যু হলো না! আমি কীভাবে এই কষ্ট সইব। পরিবারের অভাব দূর করতে বড় স্বপ্ন নিয়ে বিদেশ গিয়েছিল। সব শেষ হয়ে গেল।’
কবিরপুর গ্রামের বাসিন্দা সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য আহমেদ আলী বলেন, ভিটামাটি বন্ধক রেখে যে টাকায় প্রবাসে গিয়েছিল সেই টাকাও আয় করতে পারেনি দিলবার। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারীকে হারিয়ে গোটা পরিবারে ভেঙে পড়েছে। তাঁর এক বছরের কন্যা সন্তান লাশ দেখে কিছু না বুঝেই কাঁদছে। তার কান্নায় লাশ দেখতে যাওয়া গ্রামবাসীরাও কেঁদেছে।