প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাব্যবস্থা না থাকায় ছিনতাইকারীদের দাপট বেড়েছে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার জামতৈল রেলওয়ে স্টেশন। চলন্ত ট্রেন থেকে শুরু করে প্ল্যাটফর্মের দুই প্রান্ত সবখানেই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস ও ঢাকা থেকে পঞ্চগড়গামী দ্রুতযান আন্তনগর এক্সপ্রেসেই বেশি ঘটে এমন ঘটনা। তবে এর বাইরেও রাত সাড়ে ১০টার পর থেকে যেসব ট্রেন স্টেশন থেকে ক্রসিং হয়, সেসব ট্রেনেও ছিনতাই হয় বলেও জানিয়েছেন স্টেশনের কর্মচারীরা।
স্টেশন কর্তৃপক্ষের ভাষ্যমতে, গত ১০ মাসে এখানে অন্তত ১০০টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। সপ্তাহে তিন-চার দিনই কোনো না কোনো ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, ৮-১০ মাস ধরে দুটি ট্রেনকে ঘিরে জামতৈল এলাকায় ছিনতাইকারীদের উপদ্রব দেখা গেছে আশঙ্কাজনক হারে। ট্রেন ছাড়ার আগমুহূর্তে ৭-৮ জনের দল যাত্রীদের মালপত্র ছিনিয়ে নেয়। তাদের বয়স ১৭ থেকে ২৭ বছরের মধ্যে। বেশির ভাগ সময় যাত্রীরা মোবাইল ফোনে কথা বলার সময় বা জানালার পাশে দাঁড়ালে মুহূর্তেই জিনিসপত্র টেনে নেয় তারা।
জামতৈল রেলওয়ের স্টেশনমাস্টার (ইনচার্জ) আবু হান্নান আজকের পত্রিকাকে বলেন, প্রায় দিনই রাতে ট্রেন ছাড়ার সময় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। তবে যাত্রীরা রানিং (চলন্ত ট্রেন) হওয়ায় কেউ মৌখিক বা লিখিত অভিযোগ দেয় না। তিনি আরও বলেন, আগস্ট মাসে উপজেলার তাজুরপাড়া ব্রিজসংলগ্ন এলাকায় সিগন্যাল লাইটে খড়কুটা বা বস্তা জাতীয় কিছু একটা ঢুকিয়ে লাইট বন্ধ করে দিয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল ট্রেন থামিয়ে ছিনতাই করা। তবে চালক বিষয়টি বুঝতে পেরে ট্রেন থামাননি।
স্টেশনমাস্টার আবু হান্নান বলেন, ‘ক্যামেরার মান খুবই খারাপ, তাই ছিনতাইকারীদের চেহারা বোঝা যায় না। বিষয়টি জিআরপি ও কামারখন্দ থানা-পুলিশকে জানিয়েছি। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও অবগত করেছি।’
সরেজমিনে স্টেশন কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্টেশনের দুই প্রান্তেই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। দক্ষিণ পাশে কামারের গলির পাশে থাকা দোকানসংলগ্ন এলাকায় সুযোগ বুঝে ছিনতাইকারীরা সক্রিয় থাকে। অন্যদিকে উত্তর পাশেও ছিনতাই করে অন্ধকার গলির দিকে পালিয়ে যায়। স্টেশনের দ্বিতীয় লাইনে যথাযথ আলোর ব্যবস্থা না থাকায় ছিনতাইকারীরা আরও সুযোগ পেয়ে যায় বলে জানান তাঁরা।
রুহুল নামের এক যাত্রী বলেন, ‘ট্রেনে ওঠার সময় মোবাইল হাতে থাকলে মনে হয় এক মিনিটেই হয়তো ছিনতাই হয়ে যাবে। নিরাপত্তার তেমন ব্যবস্থা নেই। রাতে ভয় লাগে।’
সিরাজগঞ্জ বাজার স্টেশন রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা আমাদের জায়গা থেকে কাজ করে যাচ্ছি।’
পশ্চিম রেলের মহাব্যবস্থাপক ফরিদ আহমেদের বলেন, জামতৈলে কোনো পুলিশ ফাঁড়ি নেই। তবে নতুন করে ফাঁড়ির অনুমোদন পাওয়া গেছে। মাসদুয়েকের মধ্যেই কার্যক্রম শুরু হবে। তখন নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা দূর হবে। তিনি বলেন, ‘সিসি ক্যামেরার বিষয়টিও আমরা দেখব।’