প্রেমের টানে রাতের অন্ধকারে সীমানা পেরিয়ে বাংলাদেশে এসে পুলিশের হাতে আটক হয়েছে ভারতীয় এক তরুণী। ওই তরুণীর নাম খুসনামা (১৭)। ওই তরুণী ভারতের উত্তর দিনাজপুর জেলার গোয়ালপুকুর থানার হারিয়ানী গ্রামের ইসরাইল হোসেনের মেয়ে।
প্রেমিকের নাম আব্দুল লতিফ রাকিব (২১)। তিনি ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার রতন দিঘী গ্রামের ইসরাইলের ছেলে। দু’দেশের সীমান্ত আইনি জটিলতার কারণে মিলন হলো না তাদের।
জানা গেছে, গত বুধবার গভীর রাতে ভারতের মুড়িখাওয়া গ্রাম থেকে বাংলাদেশের উত্তরের সীমান্ত জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার সীমান্তঘেঁষা নদী মহানন্দা পার হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে খুসনামা। পরে স্থানীয় এক ব্যক্তির বাড়িতে ওঠে। প্রেমিকা খুসনামার বাংলাদেশে আসার খবরে প্রেমিক রাকিব দেখা করার জন্য রওনা হয়। কিন্তু তেঁতুলিয়ায় পৌঁছেই সে জানতে পারে পুলিশের হাতে আটক হয়েছে তার প্রিয়তমা।
রাকিবের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, কয়েক বছর আগে সীমান্ত পেরিয়ে রাকিব খুসনামার বাড়িতে যায়। সেখান থেকে খুসনামার ভাইয়ের সঙ্গে কেরালা প্রদেশের হাজি আলী নামের এক ব্যক্তির হোটেলে কাজ শুরু করে। ওই হোটেলে প্রায় ৮-১০ বছর কাজ করে রাকিব। পুজো পার্বণ বা ঈদের ছুটিতে খুসনামার বাড়িতে আসা যাওয়া করতেন রাকিব। গত দুই বছর আগে খুসনামার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত এক মাস আগে রাকিব বাংলাদেশে চলে আসে। কিন্তু মন পড়ে ছিল খুসনামার কাছে। তাদের মধ্যে মোবাইলে যোগাযোগ ছিল। একসময় তারা সিদ্ধান্ত নেয় বিয়ে করার। খুসনামা বাড়ি, পরিবার আর দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে চলে আসার কথা জানায় রাকিবকে। রাকিব তাকে আসতে বলে। বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে ছোট্ট সংসার গড়ে তোলার আশায় সীমান্তের ৪৪৪ মেইন সাব পিলার-২ অতিক্রম করে গভীর রাতে একাকী পায়ে হেঁটে খুসনামা ছুটে আসে বাংলাদেশে। কিন্তু এসেও তাদের জুটি বাঁধা হলো না।
ভারতীয় ওই তরুণী খুসনামা বলেন, ‘রাকিবকে ছাড়া আমি বাঁচব না। ওই আমার জীবন-মরণের সাথি।’
এ বিষয়ে মডেল থানার ওসি আবু ছায়েম মিয়া বলেন, ‘বুধবার রাতে সীমান্ত নদী মহানন্দা পেরিয়ে ভারতীয় তরুণী বাংলাদেশে প্রবেশের পর আমরা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে থানা হেফাজতে নিয়ে আসি। জানতে পেরেছি, তার সঙ্গে ছেলেটির বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু কোনো ডকুমেন্ট দেখাতে পারেনি। মেয়েটি যেহেতু বয়সে নাবালিকা, তাই আমরা মেয়েটির অভিভাবকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। সেই সঙ্গে বিষয়টির সাথে ভিন্ন কিছু জড়িয়ে আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে তেঁতুলিয়া সীমান্তের ৪৪৩ পিলারের কাছে পতাকা বৈঠকের আয়োজন করা হয়। ভারতীয় বিএসএফ তখন পর্যন্ত তরুণীর ঠিকানা নিশ্চিত হতে না পারায় কাল শুক্রবার আবার পতাকা বৈঠকে বসবে বলে পুলিশ ও বিজিবি জানিয়েছে।