হোম > অপরাধ > রাজশাহী

ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি চক্রের মূলে বুকিং সহকারী

রিমন রহমান, রাজশাহী

রাজশাহীতে ট্রেনের টিকিট চোখের পলকেই শেষ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি কয়েক দিন ধরেই আলোচনায়। অভিযোগ উঠেছে, রাজশাহী স্টেশন ঘিরে থাকা কালোবাজারি চক্রের অপতৎপরতায় সাধারণ যাত্রীদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে টিকিট। আর এই চক্রে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের প্রধান বুকিং সহকারী আবদুল মমিনের জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। 

টানা কয়েক দিন অনুসন্ধান চালিয়ে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। অভিযোগ রয়েছে, এই চক্রের পেছনে সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন মমিন ছাড়াও বেশ কয়েকজন বুকিং সহকারী। সম্প্রতি এই চক্রকে ধরতে বিভিন্ন মহল থেকে পশ্চিমাঞ্চল রেল কর্তৃপক্ষসহ প্রশাসনকে তাগাদা দেওয়া হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে সন্দেহভাজন কয়েকজন বুকিং সহকারী গা-বাঁচাতে ছুটি নিয়েছেন। ছুটিতে গেছেন প্রধান বুকিং সহকারীও। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজশাহী রেল স্টেশনের কাউন্টারের দায়িত্বে আছেন ২৬ জন বুকিং সহকারী। এদের মধ্যে প্রধান বুকিং সহকারী আবদুল মমিনসহ পাঁচজন এখন ছুটিতে। মমিন এই স্টেশনে বহু বছর ধরে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এর আগে অনিয়মের অভিযোগে তাঁকে রাজশাহী স্টেশনের বাইরে বদলি করা হলেও ৬ মাসের ব্যবধানে আবারও রাজশাহী স্টেশনে ফিরে আসেন। তিনি তাঁর দুজন সহযোগী (বুকিং সহকারী) নিয়ে টিকিট কালোবাজারি নেটওয়ার্ক গুছিয়ে রেখেছেন বলে নিশ্চিত করেছে একটি সূত্র। 
 
ছুটিতে যাওয়ার আগে পর্যন্ত মমিনকে স্টেশনের ৬ নম্বর কাউন্টারে থাকতে দেখা গেছে। এই কাউন্টারে টিকিট নিতে যাওয়া অনেককেই মমিনের কাছে গিয়ে ‘অমুক ভাই’ পাঠিয়েছেন বলতে দেখা গেছে। আর সঙ্গে সঙ্গেই মমিন বের করে দিয়েছেন টিকিট। তবে একই সময় লাইনে দাঁড়ানো অন্যদের টিকিট নেই বলে ফিরিয়ে দিতে দেখা গেছে। মমিন সারা দিন স্টেশনে না এলেও রোজ রাত ৮টা থেকে এই কাউন্টারে থাকেন। 

অভিযোগ প্রসঙ্গে কথা বলতে স্টেশনে গেলে জানা যায়, প্রধান বুকিং সহকারী আবদুল মমিন ছুটিতে গেছেন। সাক্ষাৎ না পেয়ে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরিচয় জানিয়ে এসএমএস দেওয়ার পরও ফোন ধরেননি; ম্যাসেজের উত্তরও দেননি। তাই অভিযোগের বিষয়ে তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি দেশে করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় ট্রেনের ধারণ ক্ষমতার চাইতে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে যাতায়াতের নির্দেশনা দেয় রেল কর্তৃপক্ষ। টিকিট নিয়ে সংকট বহুদিনের হলেও রেল কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তের পর তা প্রকট আকার ধারণ করে। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে টিকিট কালোবাজারি চক্র। ট্রেনের টিকিট যাত্রার ৫ দিন আগে অনলাইনে ও স্টেশন কাউন্টারে বিক্রি করা হয়। নির্ধারিত মোট আসনের ৫০ শতাংশ অনলাইনে এবং ৫০ শতাংশ কাউন্টারে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে টিকিট বিক্রি শুরুর কিছু সময়ের মধ্যেই তা ফুরিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকামুখী চারটি ট্রেনের ক্ষেত্রে টিকিট সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। অনলাইনে টিকিট নিতে যাত্রীর জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর প্রয়োজন পড়ে। আর কালোবাজারি চক্র নানাভাবে অন্যদের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর সংগ্রহ করে অনলাইন থেকে টিকিট নামিয়ে নিচ্ছে। আর ট্রেনে টিকিট যাচাইয়ের ব্যবস্থা থাকলেও জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর যাচাইয়ের ব্যবস্থা না থাকায় সেই সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে এই চক্র। 

রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন ঘিরে সক্রিয় স্থানীয় কয়েকজন টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে কথা হলে তাঁরা জানান, টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে রাজশাহী নগরীর কয়েকটি কম্পিউটারের দোকান, বিমানের টিকিট বিক্রির দোকানসহ শিরোইল, মঠপুকুর, শিরোইল কলোনি ও দড়িখরবোনা এলাকার কয়েকজন যুবক জড়িত। তাঁরা অন্যের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর সংগ্রহ করে অনলাইনে টিকিট সংগ্রহের পাশাপাশি রাজশাহী স্টেশনের প্রধান বুকিং সহকারীসহ আরও কয়েকজনের সহযোগিতায় খুব সহজেই চাহিদামত টিকিট পেয়ে যাচ্ছেন। 
 
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকা-রাজশাহী রুটে ৪টি ট্রেন নিয়মিত চলাচল করছে। এই ট্রেনগুলোতে শোভন চেয়ারের ভাড়া ৩৪০ থেকে ৩৭৫ টাকা, স্নিগ্ধা চেয়ারের ভাড়া ৬৫৬ থেকে ৭২৫ টাকা। তবে কাউন্টার থেকে বুকিং সহকারীর মাধ্যমে দালালদের হাতে পৌঁছে তা হয়ে যায় যথাক্রমে ৪২০ থেকে ৪৫০ টাকা এবং ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা। ৭৮২ থেকে ৮৬৫ টাকার কেবিনের ভাড়া হয়ে যায় ১ হাজার টাকা। বিশেষ দিন বা ঢাকায় সরকারি চাকরির পরীক্ষার তারিখ থাকলে কালোবাজারে এই টিকিটের দাম আরও বৃদ্ধি পায়। 
 
সম্প্রতি রাজশাহী স্টেশনে টিকিট সংকট নিয়ে স্থানীয়দের অসন্তোষ সামনে আসায় কালোবাজারি রোধে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ উদ্যোগী হয়ে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (জিএম), নগর পুলিশের কমিশনার ও র‍্যাব-৫ এর পরিচালক বরাবর লিখিত আবেদন দিয়েছেন। পশ্চিম রেলের জিএম অসীম কুমার তালুকদার রেলের টিকিট কালোবাজারি রোধে তৎপরতাও শুরু করেছেন। তিনি নিজেও ঢুঁ মারছেন স্টেশনে। এ অবস্থায় ছুটিতে চলে গেছেন সন্দেহভাজন বুকিং সহকারীরা। 

পশ্চিম রেলের জিএম অসীম কুমার তালুকদার বলেন, করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকারি নির্দেশনা মতো নির্ধারিত আসনের চাইতে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে ট্রেন চলাচল করছে। টিকিট কালোবাজারি রোধে রেল কর্তৃপক্ষ তৎপর রয়েছে। এই কাজে রেলের কেউ জড়িত থাকলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান পশ্চিম রেলের এই শীর্ষ কর্তা। 

শিশু সাজিদের মৃত্যু: মামলা করবে না পরিবার, ডিসি বললেন মামলা হবে

ব্যবসায়ীর দোকানে হামলা, মারধর করে টাকা লুটের অভিযোগ

স্কুলছাত্রীকে শ্লীলতাহানির মামলায় ছাত্রদল নেতা কারাগারে

বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় সমাবর্তন ২১ ডিসেম্বর

সিরাজগঞ্জে অডিটরিয়ামের ওয়াশরুম থেকে বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার

জয়পুরহাটে ট্রাক–ভ্যান সংঘর্ষে নিহত ১

সাজিদের মৃত্যুতে রাষ্ট্রের কাছে ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি

দুর্গাপুরে বধ্যভূমিতে শহীদদের স্মরণে শ্রদ্ধা ও মোনাজাত

রাকসুর জিএসকে ‘হত্যার হুমকি’ দিয়ে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতার ফেসবুক পোস্ট

বগুড়ায় ট্রাক-অটোরিকশার সংঘর্ষে চালক নিহত, আহত তিন