জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের কাশিরা বাজারে এক ইউপি সদস্যের ব্যক্তিগত কার্যালয় থেকে সুজন মণ্ডল (মাইক্রোবাসচালক) নামের এক ব্যক্তির ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।
নিহত সুজন মণ্ডলের স্ত্রী মারুফা আক্তারের অভিযোগ, টাকা চুরির অভিযোগে ইউপি সদস্য সেলিম হোসেন তাঁর স্বামীকে রাতভর আটকে রেখে নির্যাতন করে হত্যা করেছেন। পরে ঘটনাটি আড়াল করতে গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যার নাটক সাজানো হয়েছে।
আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিন রেজা বলেন, ইউপি সদস্য সেলিম হোসেনের ব্যক্তিগত কার্যালয় থেকে সুজন মণ্ডলের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। লাশে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মাথায় ব্যান্ডেজ ও শরীরের পেছনের অংশে কালশিটে দাগ দেখা গেছে। প্রাথমিকভাবে মারধরের আলামত পাওয়া গেছে।
নিহত সুজন মণ্ডল উপজেলার কাশিরা পুকুরিয়া গ্রামের ওসমান মণ্ডলের ছেলে। তিনি পেশায় মাইক্রোবাসচালক ছিলেন। এলাকায় তাঁর বিরুদ্ধে মাদক সেবন ও চুরির অভিযোগ রয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গতকাল বুধবার পাকুরদাড়িয়া গ্রামে বিজয় দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ওই দিন বিকেলে সুজন মণ্ডল তাঁর খালাতো বোন সোনাভানের বাড়িতে গিয়ে দরজা ভেঙে ৭০ হাজার টাকা চুরি করেন বলে অভিযোগ ওঠে। পরে সন্ধ্যার দিকে ইউপি সদস্য সেলিম হোসেনের সহায়তায় তাঁকে আটক করা হয়। মারধরের একপর্যায়ে সুজন টাকা চুরির কথা স্বীকার করেন এবং চুরি হওয়া টাকার ৪৫ হাজার টাকা ফেরত দেন।
এরপর ইউপি সদস্য সেলিম হোসেন সুজন মণ্ডলকে কাশিরা বাজারে তাঁর ব্যক্তিগত কার্যালয়ে নিয়ে যান। তিনি থানায় খবর দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে শাস্তি দেওয়ার কথা জানান। তবে রাতে পুলিশ ঘটনাস্থলে না যাওয়ায় দুজন গ্রাম পুলিশ দিয়ে তাঁকে কার্যালয়ে আটকে রাখা হয়।
আজ সকালে সুজন মণ্ডল তাঁর স্ত্রী মারুফা আক্তারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন। কিছু সময় পর পাহারায় থাকা গ্রাম পুলিশরা তাঁর আত্মহত্যার খবর দেন। পরে স্বজনেরা গিয়ে দেখেন, কার্যালয়ের ফ্যানের হুকের সঙ্গে রশি প্যাঁচানো অবস্থায় সুজন মণ্ডলের লাশ ঝুলে আছে।
নিহতের স্ত্রী মারুফা আক্তার বলেন, ‘বুধবার সন্ধ্যায় ইউপি সদস্য সেলিম হোসেন আমার স্বামীকে ডেকে এনে রাতভর দফায় দফায় লাঠিপেটা করেছেন। তাঁর মাথায় ব্যান্ডেজ ছিল। নির্যাতনের কারণেই আমার স্বামীর মৃত্যু হয়েছে। থানা থাকতে কেন তাঁকে সারা রাত আটকে রাখা হলো? আমি জড়িত সবার বিচার চাই।’
তবে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি সদস্য সেলিম হোসেন বলেন, ‘সুজন টাকা চুরি করেছিল। গ্রামবাসী তাকে মারধর করেছে। পরে তাকে আমার কার্যালয়ে এনে রাত ১০টার পর পুলিশকে খবর দিই। পুলিশ রাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত হবে না জানালে দুজন গ্রাম পুলিশ পাহারায় রেখে আমি বাড়িতে চলে যাই। পাহারার দায়িত্বে থাকা গ্রাম পুলিশ প্রকৃতির ডাকে বাইরে গেলে সে আত্মহত্যা করে।’
গোপীনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ইউপি সদস্যের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে কাউকে আটকে রাখার বিষয়টি আমাকে জানানো হয়নি। ইউপি সদস্যের এমন ক্ষমতা নেই। ঘটনাস্থলে গিয়ে ঝুলন্ত মরদেহ দেখি।’
আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম রেজা বলেন, সকালে ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা মনে হলেও ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বলা যাচ্ছে না। অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।