রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় মধ্যযুগীয় কায়দায় ভ্যানচালক ওমর ফারুক (৩৮) হত্যা মামলায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে নাটোর সদর উপজেলার বনবেলঘড়িয়া পশ্চিম বাইপাস রোডে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কে চেকপোস্ট বসিয়ে একটি যাত্রীবাহী বাস থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। আসামিরা বাসে চড়ে পালিয়ে যাচ্ছিলেন বলে জানিয়েছে র্যাব।
গ্রেপ্তার ছয়জন হলেন বাগমারার ভবানীগঞ্জ সিএনজিচালিত অটোরিকশা মালিক সমিতির সভাপতি উপজেলার দেউলিয়া গ্রামের বাসিন্দা রেজাউল করিম (৪৭), সাধারণ সম্পাদক মাকিগ্রামের আব্দুল মতিন (৪০), সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক দরগামাড়িয়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম ওরফে রফিক (৪০), হেজাতিপাড়া গ্রামের আসাদুল ইসলাম (৩৬), দেউলিয়া গ্রামের হাবিবুর রহমান (৫৫) ও আব্দুল হান্নান (৩৮)।
র্যাব-৫-এর সদর কোম্পানি ও নাটোরের সিপিসি-২-এর যৌথ দল চেকপোস্ট বসিয়ে আসামিদের গ্রেপ্তার করে। আজ বুধবার সকালে র্যাব-৫-এর এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। নিহত ভ্যানচালক ওমর ফারুকের বাড়ি চাঁনপাড়া গ্রামে। তাঁর বাবার নাম মোসলেম সরদার। ছেলে হত্যার ঘটনায় তিনিই মামলা করেছিলেন।
র্যাবের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ১৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ভবানীগঞ্জ সিএনজি স্ট্যান্ডে নিজের ব্যবহৃত ভ্যানগাড়ি রেখে প্রস্রাব করতে যান ওমর ফারুক। কিছুক্ষণ পর ফিরে এলে সিএনজিচালিত অটোরিকশা মালিক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশে সেখানে উপস্থিত অন্য আসামিরা তাঁকে চোর সন্দেহে আটক করেন। এরপর ২০ থেকে ২৫ জন সংঘবদ্ধভাবে ওমর ফারুককে দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে নির্মমভাবে মারধর করেন। নির্যাতনের একপর্যায়ে তাঁকে উলঙ্গ করে দেয়ালের সঙ্গে দাঁড় করিয়ে তাঁর দুই হাত ও দুই পায়ে প্রায় দুই ইঞ্চি লোহার পেরেক ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। মারধরের সময় ওমর ফারুক বারবার পানি চাইলে তাঁকে পানি পর্যন্ত দেওয়া হয়নি।
অত্যাচারে ফারুকের অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে পড়লে আসামিরা ঘটনা ভিন্ন খাতে নেওয়ার উদ্দেশ্যে তাঁকে মিথ্যা মাদক সেবনকারী হিসেবে উপস্থাপন করে পুলিশে খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে ফারুককে নিতে অস্বীকৃতি জানালে সেখানে উপস্থিত হন বাগমারা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম ভুঞা। তিনি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে এক পুরিয়া গাঁজা রাখার অভিযোগে ওমর ফারুককে সাত দিনের কারাদণ্ড দেন।
পরে আহত অবস্থায় ওমর ফারুককে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার গুরুতর আহত অবস্থায়ই তাঁকে কারাগারে গ্রহণ করেন। পরদিন ১৮ ডিসেম্বর তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০ ডিসেম্বর ফারুকের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে বিষয়টি নিয়ে তুমুল আলোচনা শুরু হয়। এরপরই ফারুক হত্যার ঘটনায় মামলা নেয় বাগমারা থানা-পুলিশ।