পাবনার ঈশ্বরদী ইপিজেডে অর্ধশতাধিক নারী শ্রমিক শ্বাসকষ্টে আক্রান্তের পর কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। আজ শনিবার ঈশ্বরদী ইপিজেডে বাংলাদেশ হাইজিংটন হেয়ার প্রোডাক্ট কোম্পানি লিমিটেড কারখানায় এ ঘটনা ঘটে।
আক্রান্ত ৫৮ জনের মধ্যে ৩৪ জনকে ইপিজেড মেডিকেল সেন্টার থেকে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়। এর মধ্যে ১৫ জনকে ভর্তি রাখা হয়েছে হাসপাতালে। বাকিরা ছাড়পত্র নিয়ে বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
চিকিৎসক ও ইপিজেড কর্তৃপক্ষ বলছে, সবাই গণ হিস্টিরিয়া রোগে আক্রান্ত। ঘটনার আকস্মিকতায় একজনের অসুস্থতা দেখে অন্যরা ‘শ্বাসকষ্ট এবং বমি’র লক্ষ্মণ নিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
শ্রমিকেরা জানান, ইপিজেডে পরচুলা তৈরির ওই চায়না কারখানার অধিকাংশই নারী শ্রমিক। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কারখানার চতুর্থ তলায় হঠাৎ এক নারী শ্রমিকের প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট শুরু হয় এবং তিনি বমির ভাব নিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। সহকর্মীরা তাঁকে সুস্থ করতে এগিয়ে আসার কিছু সময়ের মধ্যে একে একে আরও নারী শ্রমিক লুটিয়ে পড়েন। কিছুক্ষণ পর কারখানার তৃতীয় তলায়ও আক্রান্ত হন শ্রমিকেরা। পরে তাঁদের ইপিজেড মেডিকেল সেন্টার ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
দুজন শ্রমিক অভিযোগ করেন, পরচুলার কাজ করার সময় কারখানার চারতলায় এসি বন্ধ ছিল। এ সময় অনেকের শ্বাসকষ্ট শুরু হয় ও মাথা ঘুরে মেঝেতে পড়ে যান। অসুস্থ হয়ে পড়লেও প্রথম দিকে তাঁদের কারখানার বাইরে যেতে দেওয়া হচ্ছিল না। কিন্তু তৃতীয় তলায় আক্রান্ত শুরু হলে তাঁদের একে একে ইপিজেড মেডিকেল সেন্টারে পাঠানো হয়।
ইপিজেড মেডিকেল সেন্টারের ইনচার্জ ফয়সাল আহমেদ জানান, কারখানা থেকে ইপিজেড মেডিকেল সেন্টারে আসা ৫০ নারী শ্রমিককে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে তাঁদের ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়। এ ছাড়া অনেকে সরাসরি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান।
ফয়সাল আহমেদ আরও জানান, রোগের ধরন দেখে মনে হয়েছে রোগীরা গণ হিস্টিরিয়ায় আক্রান্ত। একজনের আতঙ্ক দেখে অন্যরা একে একে আক্রান্ত হয়েছেন। এটা মূলত হিস্টিরিয়া রোগ।
ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. আলী এহসান জানান, তিনি হাসপাতালে ৩৪ জনকে চিকিৎসা দেওয়ার কথা শুনেছেন কর্তব্যরত চিকিৎসকের কাছ থেকে। এঁদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি ১৫ জনের বর্তমানে চিকিৎসা চলছে।
এ বিষয়ে ঈশ্বরদী ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক এ বি এম শহিদুল ইসলাম বলেন, খবর পাওয়ার পরপরই তিনি ওই কারখানাটি পরিদর্শন করেন এবং আক্রান্ত রোগীদের সেবাশুশ্রূষার জন্য কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন। পরে কর্তৃপক্ষ কারখানার তৃতীয় ও চতুর্থ তলা বন্ধ ঘোষণা করে শ্রমিকদের ছুটি দিয়েছেন।