পাবনা পৌর সদরের উত্তর শালগাড়িয়া সরদারপাড়া এলাকায় ৯ বছরের শিশুশিক্ষার্থী হাফসা হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় আরও একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে মামলায় অভিযুক্তনামীয় তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হলো। পুলিশ বলছে, শিশু হাফসাকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে।
পাবনা সদর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) সঞ্জয় কুমার সাহা এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, নিহত হাফসার মা রিতু খাতুন বাদী হয়ে আজ সোমবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় তিনজন নামীয়সহ অজ্ঞাতনামা আরও অনেককে আসামি করা হয়েছে।
সঞ্জয় কুমার সাহা আরও জানান, এ ঘটনায় অভিযুক্ত পান্না সরদার (২৮) নামের আরও একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আজ দুপুরে পাবনা টেক্সটাইল কলেজ এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ নিয়ে মামলার প্রধান অভিযুক্তনামীয় তিন আসামিকেই গ্রেপ্তার করা হলো। এর আগে ঘটনার দিন রাতেই সাব্বির ও রমজান নামের দুই অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন পাবনা পৌর সদরের উত্তর শালগাড়িয়া সরদারপাড়া মহল্লার টিপু সরদারের ছেলে সাব্বির সরদার (২৬), ছবেদ আলীর ছেলে রমজান আলী (৩০) ও খালেক সরদারের ছেলে পান্না সরদার (২৮)। তাঁদের মধ্যে সাব্বির ও রমজানকে গতকাল রোববার আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়। আর পান্নাকে আজ বিকেলে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
এদিকে শিশু হাফসা হত্যার প্রতিবাদে ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী।
আজ সকালে উত্তর শালগাড়িয়া সরদারপাড়া থেকে বিক্ষোভ-মিছিলটি বের হয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন তাঁরা। সেখানে নিহত শিশুশিক্ষার্থী হাফসার স্বজন ও এলাকাবাসী বক্তব্য দেন।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে তাঁরা মিছিল নিয়ে শহরের প্রধান সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে জড়িত সব আসামিকে গ্রেপ্তারে থানা-পুলিশকে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন। তা না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা। এ সময় প্রায় এক ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ হয়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম ঘটনাস্থলে গিয়ে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেন বিক্ষোভকারীরা।
গত শনিবার (১৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে শিশু হাফসাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তার সন্ধান চেয়ে এলাকায় মাইকিং করা হয়। খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে প্রায় দুই ঘণ্টা পর রাত ৮টার দিকে বাড়ির পেছনের জঙ্গলের ভেতর পাটিতে মোড়ানো কাদা মাখানো হাফসার মরদেহ পাওয়া যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় রাতেই সন্দেহভাজন হিসেবে রমজান ও সাব্বির নামের দুজনকে আটক করা হয়।
নিহত হাফসা সদর উপজেলার মালঞ্চি ইউনিয়নের কামারগাঁও গ্রামের প্রবাসী হাফিজুর রহমানের মেয়ে এবং স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী ছিল।
হাফসার নানার বাড়ির পাশের বাগানটি দীর্ঘদিন ধরে বখাটে, মাদকসেবী ও জুয়াড়িদের আড্ডাস্থল ছিল বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।
পাবনা সদর থানার পরিদর্শক সঞ্জয় কুমার সাহা বলেন, ‘মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদনে শিশু হাফসাকে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। ধর্ষণের পর তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। এ ছাড়া পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট একজন চিকিৎসকও জানিয়েছেন, শিশুটিকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে।’