মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় এবার সারা দেশের মধ্যে প্রথম হয়েছে নরসিংদীর কৃতী সন্তান জাহাঙ্গীর আলম শান্ত। তার এই অসাধারণ সাফল্যে আনন্দে ভাসছে পরিবার, স্বজন ও এলাকাবাসী। তাকে একনজর দেখতে ভিড় করছেন লোকজন।
গত রোববার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে প্রকাশিত মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়, রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ কেন্দ্র থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে শান্ত ৯১.২৫ নম্বর পেয়ে সারা দেশে প্রথম স্থান অধিকার করেছে।
জাহাঙ্গীর আলম শান্ত নরসিংদীর বেলাবো উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের খামারের চর গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান ও গৃহিণী ফেরদৌসী বেগম দম্পতির সন্তান। তিন ভাই-বোনের মধ্যে শান্ত সবার বড়। তার দুই বোন স্থানীয় বিদ্যালয়ে নবম ও দশম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে শান্তদের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, লোকজনের ভিড়। তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও দোয়ার মধ্য দিয়ে বরণ করছেন এলাকাবাসী। আনন্দে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন বাবা-মা, স্বজন ও প্রতিবেশীরা।
এর আগে ফল প্রকাশের পরপরই ঢাকা থেকে মাইক্রোবাসে করে শান্তকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে ফেরেন পরিবারের সদস্যরা। পথে পথে তাকে একনজর দেখতে ভিড় করেন মানুষ।
স্বজন ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, জাহাঙ্গীর আলম শান্তর এই অর্জন শুধু তার পরিবারের নয়, বরং পুরো নরসিংদী জেলার জন্য এক বিরল গৌরব। তার সাফল্য আগামী দিনের শিক্ষার্থীদের জন্য অনুপ্রেরণার বাতিঘর হয়ে থাকবে।
স্বজনেরা জানান, শিক্ষাজীবনের শুরু থেকেই মেধাবী ছিল শান্ত। সে বেলাবো উপজেলার অক্সফোর্ড মডার্ন একাডেমি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং বারৈচা রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ অর্জন করে। পরে রাজধানীর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ লাভ করে। শিক্ষকদের সঠিক দিকনির্দেশনা, পরিবারের অনুপ্রেরণা এবং নিজের নিরলস পরিশ্রমই তাকে এই সাফল্যের শিখরে পৌঁছে দিয়েছে।
সাফল্যের অনুভূতি প্রকাশ করে জাহাঙ্গীর আলম শান্ত বলে, ‘এই অর্জনের পেছনে আমার মা-বাবা, শিক্ষক ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের অবদান সবচেয়ে বেশি। আজ মা-বাবার মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছি, এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন। ভবিষ্যতে একজন ভালো মানুষ ও মানবিক চিকিৎসক হয়ে দেশের মানুষের পাশে থাকতে চাই। ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা করার বড় ইচ্ছে।’
ছেলের সাফল্যে গর্বিত বাবা মিজানুর রহমান বলেন, ‘ফল প্রকাশের পরে ঢাকায় গিয়ে ছেলেকে নিয়ে বাড়িতে এসেছি। বাড়িতে আসার পর থেকেই মানুষ একের পর এক দেখতে আসছে, অভিনন্দন-শুভকামনা জানাচ্ছে, দোয়া করছে। বাবা হিসেবে এরচেয়ে বড় আনন্দ আর কী হতে পারে। সবার কাছে দোয়া চাই।’
মা ফেরদৌসী বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে মানুষের সেবা করবে—এই স্বপ্নই দেখতাম। আল্লাহ আজ আমাদের মুখে হাসি দিয়েছেন। আশা করি, স্বপ্ন পূরণ হবে। ছেলের জন্য দোয়া চাই।’
বারৈচা রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘শান্ত ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত মনোযোগী ও শৃঙ্খলাবান শিক্ষার্থী। আমরা প্রত্যাশা করি, ভবিষ্যতে সে একজন দক্ষ ও মানবিক চিকিৎসক হয়ে মানুষের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রাখবে।’