হোম > সারা দেশ > নারায়ণগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী মাসুদের ভোট না করার ঘোষণায় ক্ষুব্ধ দল

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন পেতে দেশব্যাপী নেতাদের মধ্যে তুমুল প্রতিযোগিতা চললেও অবাক করা উল্টো কাণ্ড ঘটেছে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে। আসনটিতে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন পেলেও হঠাৎ করে ভোট না করার ঘোষণা দিয়েছেন কিছুদিন আগে বিএনপিতে যোগদান করা ব্যবসায়ী নেতা মাসুদুজ্জামান মাসুদ।

গতকাল মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় হাজির হয়ে ভোট না করার ঘোষণা দেন মাসুদ। তাঁর এই ঘোষণায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন বিএনপির নেতারা।

মাসুদুজ্জামান মাসুদের ওই ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় সাবেক কাউন্সিলর ও মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ বলেন, ‘আমরা ঠিক বুঝতে পারছি না তিনি কেন এমন সিদ্ধান্ত নিলেন। আমরা জানার চেষ্টা করছি ঠিক কী কারণে সরে দাঁড়ালেন তিনি।’

নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আতাউর রহমান মুকুল বলেন, ‘এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে আমরা কিছুই জানতাম না। তিনি ব্যক্তিগতভাবে সিদ্ধান্ত গণমাধ্যমের সামনে জানিয়েছেন। আমরা এখন দলীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকব। দেখব দল কী সিদ্ধান্ত দেয়, দল যেই সিদ্ধান্ত দেবে, তা মেনে নেব। দিন শেষে আমরা ধানের শীষের পক্ষে কাজ করব।’

ক্ষোভ প্রকাশ করে একই কমিটির আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুস সবুর খান সেন্টু বলেন, ‘এটা হতাশাজনক। আমরা তাঁর জন্য মাঠ প্রস্তুত করেছি। নির্বাচনে অবশ্যই তিনি জয়লাভ করবেন ইনশা আল্লাহ। এমন গোছানো মাঠ ছেড়ে মাসুদুজ্জামান কেন বেরিয়ে যাচ্ছেন, আমরা জানি না। তাঁর সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবেন এই প্রত্যাশা করি।’

এদিকে মাসুদুজ্জামান মাসুদের মনোনয়নপ্রাপ্তির পরেও নির্বাচন না করার ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। গুঞ্জনের মধ্যে রয়েছে ৫ আসনে দলীয় প্রার্থী পরিবর্তন হতে যাচ্ছে, জোটের কাছে আসন হস্তান্তর করা হবে ও হুমকি-ধমকির কারণে নিরাপত্তাঝুঁকি ইত্যাদি।

গত ৩ নভেম্বর প্রথম ধাপে ঘোষণা করা ২৩৭ জন সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় মাসুদুজ্জামান মাসুদের নাম ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এই আসনে আরও একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। সদ্য বিএনপিতে যোগদান করা ব্যবসায়ী নেতা হিসেবে পরিচিত মাসুদুজ্জামানের মনোনয়ন ছিল বেশ অপ্রত্যাশিত। এর কারণ, ৫ আগস্টের আগেই তাঁর বিরুদ্ধে আন্দোলনে অর্থায়নের অভিযোগ তুলেছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। ৫ আগস্টের পর বিএনপির কার্যক্রমে সরাসরি যুক্ত হতে শুরু করেন তিনি। ধারাবাহিক প্রচার-প্রচারণা ও কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে নির্বাচনে মনোনয়ন চাওয়ার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করেন।

একই আসনে অন্যান্য প্রার্থীর মধ্যে রয়েছেন সাবেক এমপি আবুল কালাম, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান, সাবেক কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদসহ বেশ কয়েকজন। তবে মনোনয়ন ঘোষণার আগেই অধিকাংশ বিএনপির নেতাকে তাঁর পক্ষে নিয়ে আসতে সক্ষম হওয়ায় মনোনয়ন জোটে তাঁর ভাগ্যেই।

মনোনয়ন লাভের পরপরই তাঁর বিরুদ্ধে এককাট্টা হয়েছিলেন মনোনয়নবঞ্চিতরা। মাঠে আন্দোলনে না নামলেও ঘরোয়া বৈঠকে তাঁর বিরুদ্ধে বক্তব্য দেন। তাঁকে ওসমান পরিবারের দোসর আখ্যা দেন। যদিও বিরোধী সেই বলয় ভেঙে কয়েকজন যোগ দিয়েছেন মাসুদুজ্জামানের নির্বাচনী ক্যাম্পে। পুরো ৫ আসন যখন মাসুদুজ্জামানের প্রায় নিয়ন্ত্রণে, ঠিক তখনই নির্বাচন করবেন না বলে ঘোষণা দিয়ে বিস্ময় তৈরি করেছেন জেলাজুড়ে।

কে এই মাসুদুজ্জামান

মাসুদুজ্জামান মাসুদ শিল্পপতি হিসেবে পরিচিত। মডেল ডি ক্যাপিটাল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনি। ছিলেন ব্যবসায়ীদের সংগঠন নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি এবং বিকেএমইএর পরিচালক। এ ছাড়া বেসরকারি সিটিজেনস ব্যাংকের পরিচালক তিনি। তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ফিফার তালিকাভুক্ত একটি প্রতিষ্ঠান। গত বিশ্বকাপ ফুটবলে তাঁর প্রতিষ্ঠান থেকে বিপুলসংখ্যক জার্সি ও লোগো সরবরাহ করা হয়েছিল।

ব্যবসার বাইরে ক্রীড়াজগতেও বিচরণ রয়েছে মাসুদুজ্জামানের। তিনি মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ক্রিকেট কমিটির চেয়ারম্যান। সম্প্রতি বিসিবি নির্বাচনে তাঁর অংশ নেওয়ার কথা ছিল। তবে শেষ সময়ে সরে দাঁড়ান। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্যও মাসুদ।

যেসব কারণ বললেন মাসুদুজ্জামান

নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কারণ হিসেবে নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন মাসুদুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘আমি নির্বাচনটা করব না, আমি মনোনয়ন ফরম কিনব না। পারিবারিক কারণে এবং নিরাপত্তাসহ একাধিক কারণে এই নির্বাচন থেকে সরে যাচ্ছি। সব কথা হয়তো এখানে বলা যাবে না। কিন্তু আমি বাধ্য হয়েছি। আমি আমার নেতা-কর্মী ও আমার শহর-বন্দরের বাসিন্দাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। এই আসনে যিনিই নির্বাচন করবেন, তাঁর পক্ষে আমার সমর্থন থাকবে।’ এ সময় সংবাদকর্মীরা কারণ জানার জন্য একাধিক প্রশ্ন করলেও তিনি কৌশলী উত্তর দেন।

মাসুদুজ্জামান বলেন, ‘আমি জানি, আমার এই সিদ্ধান্তে নেতা-কর্মীরা সবাই কষ্ট পাবে। কিন্তু আমার সিকিউরিটি কনসার্ন হচ্ছে আমার পরিবার। আমার পরিবারের সাথে এই জায়গায় নেগোসিয়েশন করতে পারছি না। তবে বিষয়টা এমন না যে সরকার নিরাপত্তা দিতে পারছে না সেই কারণে সরে যাচ্ছি। এখানে ব্যক্তিগত বিষয় আছে, যা বলতে পারছি না।’

মনোনয়ন পাওয়ার কয়েক সপ্তাহ আগে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি বলেছিলেন, ‘আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে। নারায়ণগঞ্জের একটি ঐতিহ্যবাহী পরিবার আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে আমার ইমেজ নষ্ট করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এর জন্য মোটা অঙ্কের বাজেট প্রস্তুত করেছে তারা। আমি আমার দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে বিষয়টি অবগত করেছি।’

তবে মাসুদের সেই সংবাদ সম্মেলনের পরে এমন কোনো মামলা হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।

নারায়ণগঞ্জে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার গাড়ি আটকে ছাত্রসংগঠনের বিক্ষোভ

নির্বাচন কে করবে আর করবে না—সেটা যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সেলিম ওসমানকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ

সোনারগাঁয়ে অনুমতি ছাড়াই বসানো হয়েছে মেলা, অবৈধ কর্মকাণ্ডের অভিযোগ

বুড়িগঙ্গা নদীতে যাত্রীবাহী লঞ্চের ধাক্কায় ডুবে গেছে বাল্কহেড

নারায়ণগঞ্জে এনসিপির ৩ কর্মীকে ছুরিকাঘাত

ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত ১৮ ভবন খালি করার নির্দেশ

নারায়ণগঞ্জে ঘুরতে নিয়ে তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ

রূপগঞ্জে ফেসবুক মন্তব্যকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধসহ আহত ৫

নারায়ণগঞ্জ শহরের সুগন্ধা প্লাস রেস্তোরাঁয় বাসি খাবার, লাখ টাকা জরিমানা