প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই স্কুলের মাঠ দখল করে নওগাঁয় মাসব্যাপী শীতবস্ত্র ও শিল্পপণ্যের মেলা শুরু হয়েছে। এ দিকে পাশাপাশি দুটি বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা চলমান থাকা সত্ত্বেও আবাসিক এলাকায় মেলা বসানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয়রা। মেলার কাজে পুলিশের নাম ব্যবহার করা হলেও কিছুই জানে না বলে দাবি পুলিশ প্রশাসনের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২৭ নভেম্বর জেলা প্রশাসনের কাছে মেলার অনুমতির জন্য আবেদন করে রাজশাহী সিল্ক অ্যান্ড বেনারসি জামদানি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি। এরপর প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো অনুমতি না পেলেও গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে শহরের হাট-নওগাঁ উচ্চবিদ্যালয় মাঠে এই মেলার কার্যক্রম শুরু হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, মাঠজুড়ে মেলায় বসেছে বস্ত্র বিপণিসহ বিভিন্ন রকম দোকান। রয়েছে নানা রকম রাইডও। নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ নারী-পুরুষ মেলায় আসছে। স্কুলের শিক্ষার্থীরাও ঘোরাঘুরি করছে সেখানে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছে, মেলা শুরু হওয়ার ১৫ দিন আগে থেকে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু হয়। স্কুলের পুরো মাঠ টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়। ফলে বন্ধ হয়ে যায় প্রতিষ্ঠানটির প্রধান ফটক। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিকল্প গেট ব্যবহার করতে হচ্ছে। বন্ধ হয়ে গেছে মাঠে খেলাধুলাও। এদিকে চলমান বার্ষিক পরীক্ষার সময় বাড়তি শব্দ ও ভিড়ের কারণে শিক্ষার্থীরা মনোযোগ হারাচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা সাইদুর রহমান বলেন, পরীক্ষা চলাকালে স্কুলের মাঠে মেলা বসানো ঠিক হয়নি। এতে বাচ্চাদের মনোযোগ নষ্ট হচ্ছে। রাতের বেলা সাউন্ড সিস্টেমে গান বাজলে এলাকায় শান্তি বিঘ্নিত হবে।
হাট-নওগাঁ উচ্চবিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক নাজমুল হাসান বলেন, মাঠ স্কুলের হলেও কোনো ভাড়া নেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, ‘এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির অনুরোধে মৌখিকভাবে মাঠ ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছি। লিখিত অনুমতি দেওয়া হয়নি।’
হাট-নওগাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, পরীক্ষায় তেমন সমস্যা হয়নি। তবে অবকাঠামো নির্মাণের সময় কিছু অসুবিধা হয়েছে।
এ বিষয়ে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির স্বত্বাধিকারী রহিদুল ইসলাম বলেন, এখনো আনুষ্ঠানিক অনুমতি মেলেনি। ১২ ডিসেম্বর পরীক্ষার পর মেলা পুরোপুরি চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।
হাট-নওগাঁ উচ্চবিদ্যালয়ের সভাপতি ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জান্নাত আরা তিথি বলেন, ‘স্কুলের মাঠে মেলা চালানোর অনুমতি প্রধান শিক্ষক দিতে পারেন না। প্রধান শিক্ষক এ বিষয়ে আমাকে কোনো কিছু অবগত করেননি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।’
জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম বলেন, শিল্প এবং বাণিজ্যিক মেলার সঙ্গে জেলা পুলিশের কোনো সম্পর্ক নেই। এই মেলায় জেলা পুলিশ অথবা পুলিশ নারী কল্যাণ সংঘের কোনো সংশ্লিষ্টতা নাই। কতিপয় মহল বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
নওগাঁর জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, মেলার বিষয়ে একটি আবেদন এসেছে। তবে অনুমোদনের প্রক্রিয়া চলছে।