সময়টা ১৯৬৯ ইংরেজি। ওই সময় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সিলেটে এক ঝটিকা সফরে বের হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। পথে শ্রীমঙ্গল রামকৃষ্ণ মিশন রোডের ডা. আলীর বাসায় ওঠেন। মৌলভীবাজার শ্রীমঙ্গল উপজেলার ওই বাসায় আজও বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত কাটা চামচ, বেতের সোফা ও চাঁদর যত্নে রেখেছেন আখলাতুন নাহার। এ নিয়ে কথা হয় আখলাতুন নাহারের সঙ্গে।
প্রয়াত ডা. আলীর স্ত্রী আখলাতুন নাহার। ওই দিন সকাল বেলা স্বামীর কাছ থেকে প্রথম জানলেন রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁদের বাসায় আসবেন। শুনেই চমকে ওঠেন আখলাতুন নাহার। মনের মধ্যে অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করতে লাগল তাঁর। শোনার পর তিনি আর বসে নেই। শুরু হয় ঘর গোছানো। পই পই করে মেয়েকে নিয়ে ঘর সাজান। বঙ্গবন্ধু যদি বিশ্রাম নেন এ জন্য একটি বিছানা চাঁদর কিনে আনেন। এ সময় নাশতার জন্য এক সেট কাটা চামচও আনেন। এর পর শুরু হয় অপেক্ষা। সময় কাটে না কখন আসবেন বঙ্গবন্ধু। সন্ধ্যা রাত পার করে এক সময় গভীর রাতে আসেন বঙ্গবন্ধু। সঙ্গে সৈয়দ তাজ উদ্দিনসহ আরও অনেক নেতা। বঙ্গবন্ধু বাসায় ঢুকছেন দেখেই তিনি চলে যান রান্না ঘরে নাশতা তৈরিতে।
আখলাতুন নাহার জানান, বঙ্গবন্ধু তাঁদের ঘরে যে সোফায় বসেছিলেন এটি ছিল বেতের সোফা। এই সোফাসেটটি ছিল তাঁদের শখের সোফা। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁরা বাসা ছেড়ে চলে গেলে তাঁদের সোফাগুলো লুট হয়ে যায়। স্বাধীনতার পর বাসায় এসে বিভিন্ন জায়গায় সোফাসেটের খোঁজ করে সন্ধান পান হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জের শাহজীর বাজারে একজনের কাছে আছে এই সোফা।
পরে গাড়ি ভাড়া করে সেখান থেকে ওই সোফাসেটটি উদ্ধার করে আনেন নাহার। আজেও যত্নে রেখেছেন ওই সোফা। শুধু সোফা নয় বঙ্গবন্ধুর ব্যবহার করা সেই কাটা চামচগুলোও লুট হয়ে যায়। ছোট একটি ট্যাংকের মধ্যে কাটা চামচসহ অন্যান্য জিনিসপত্র ছিল। লুটেরারা অন্যান্য মালামাল লুট করে নিয়ে যাওয়ার সময় ওই ট্রাঙ্কটি বাড়ির সামনে ফেলে যায়। পাশের বাড়ির মানুষ ট্রাংটি পেয়ে তাঁদের বাসায় নিয়ে রাখেন। পরে তাঁদের কাছ থেকে ট্রাংক এনে এর ভেতরে চামচ গুলো পান তিনি। তবে বঙ্গবন্ধুর জন্য বিছানা চাঁদর আনলেও বঙ্গবন্ধু বিশ্রাম নেন নি। সেই বিছানা চাদরও তিনি যত্নে রেখেছেন।
কবি দ্বীপেন্দ্র ভট্টাচার্য জানান, ওই সময় মোহাম্মদ ইলিয়াছ কিছু একটা বলার পর বঙ্গবন্ধু একটু জোড়ে বলে ওঠেন “শেখ মুজিব মুখে যা বলে কাজেও তা করে।”