বছরের এ সময় এলেই মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া বনের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া ছড়াগুলো শুকিয়ে যায়। একই সঙ্গে বনের অনেক লতাপাতা মরে যায়। ফলে বনের প্রাণীরা পড়ে খাবার ও পানির সংকটে। খাবারের সন্ধানে বন্য প্রাণী তখন লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। সাম্প্রতিক সময়ে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের বুনো শূকর সন্ধ্যা নামতেই নেমে আসছে আশপাশের ফসলি জমিতে। এতে নষ্ট হচ্ছে ধান ও শীতকালীন সবজির খেত। ফসল বাঁচাতে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন কৃষকেরা।
স্থানীয় কৃষকেরা জানান, লাউয়াছড়া বনের অনেক প্রাণীই লোকালয়ে আসে খাবারের খোঁজে। তবে এ সময়টাতে বুনো শূকর রাতের অন্ধকারে পাকা ধান ও সবজির খেত চষে ফেলছে। এতে অনেক কৃষক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। বাধ্য হয়ে কৃষকেরা দল বেঁধে বাঁশ-টিন বাজিয়ে, লাঠিসোঁটা হাতে নিয়ে রাতভর পাহারা দিচ্ছেন।
জানা গেছে, লাউয়াছড়া বনের আশপাশের লংগুরপার, দক্ষিণ বালিগাঁও, বাঘমারা, সরইবাড়ি, ভেড়াছড়া, ছাতকছড়া গ্রামসহ আরও কয়েকটি গ্রামে সন্ধ্যার পরই শূকরের দল হানা দেয়। তারা পাকা আমন ধান খেয়ে নষ্ট করে ফেলে। কৃষকেরা নিরুপায় হয়ে এখন দিন-রাত পাহারা দিচ্ছেন।
বন বিভাগ বলছে, বছরের নির্দিষ্ট সময় বুনো শূকর বনের বাইরে এসে ফসল খায়। বন্য প্রাণী হওয়ায় তাদের নির্দিষ্ট সীমানায় রাখা সম্ভব নয়। সারা দিনের পরিশ্রমের পর আবার রাতভর পাহারা দিতে হয়। শুধু শূকর নয়, শিম্পাঞ্জির মতো আচরণ করা বানরের দলও মাঠে নেমে ফসল খেয়ে যায়। অনেকেই কয়েক ফুট উঁচুতে বাঁশের মাচা তৈরি করে রাত জাগছেন।
কৃষক কনাই মিয়া ও আবুল মিয়া বলেন, ‘আমন কাটা শুরুর আগেই শূকরের দল পাকা ধান খেয়ে নষ্ট করে দেয়। তাই ফসল ঘরে তোলা পর্যন্ত আমরা পাহারা দিচ্ছি।’
এ বিষয়ে বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, মৌলভীবাজারের সহকারী বন সংরক্ষক জামিল মোহাম্মদ খান বলেন, ‘লাউয়াছড়া বনের প্রাণীরা খাবারের জন্য লোকালয়ে যাচ্ছে। বন্য প্রাণীর তো নির্দিষ্ট কোনো সীমানা নেই। লাউয়াছড়ায় আগের তুলনায় এখন শূকর ও বানরের সংখ্যা বেড়েছে। প্রাণীগুলোর প্রতি সবাইকে আন্তরিক হতে হবে। কেউ যেন ইচ্ছে করে কোনো প্রাণীর ক্ষতি না করে।’