লালমনিরহাট সদর ও আদিতমারী উপজেলায় তিনটি ইটভাটার গ্যাসে পার্শ্ববর্তী অনেক আবাদি জমির ফসল পুড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ইটভাটার গ্যাসের কারণে এই কৃষকদের এই ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তা।
এ নিয়ে আজ রোববার সকালে কৃষকেরা তাঁদের ফসলের ক্ষতি পূরণের দাবিতে মোগলহাট-লালমনিরহাট মহাসড়ক অবরোধ করেন। এতে স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা অংশগ্রহণ করেন এবং ২ ঘণ্টাব্যাপী সড়ক অবরোধ করে রাখেন।
এর আগে গতকাল শনিবার রাতে উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের জিরামপুর গ্রামের ‘টুস্টার’ ইটভাটায় গ্যাস দিয়ে ইট পোড়ানোর সময় উক্ত গ্যাস বাতাসের কারণে উত্তর দিকে প্রবাহিত হওয়ায় কৃষকের অনেক আবাদি জমির ধান ও ভুট্টার ব্যাপক ক্ষতি হয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী কৃষক ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা রোববার সকালে উক্ত আবাদি জমির ফসলের ক্ষতিপূরণের দাবিতে লালমনিরহাট-মোগলহাট সড়কের জিরামপুর এলাকায় ব্যারিকেড দেয়। এ সময় প্রায় ২ শতাধিক কৃষক ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
গত তিন দিন আগে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার পর্ব দৈলজোর গ্রামে ‘ওয়ান স্টার ব্রীকস’ নামের একটি ভাটার গ্যাসের মাধ্যমে প্রায় দেড় শ বিঘার জমির ধান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ভাটার মালিক এন্তাজুর রহমান এসব জমির মালিককে ধানের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েও না দেওয়ার কারণে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে ওই এলাকার কৃষকেরা।
এ নিয়ে ভুক্তভোগী কৃষক মেহের আলী বলেন, ‘আমার ৫ সদস্যের পরিবার। আমি এক একর জমির ধান দিয়ে সারা বছর খাবার জোগাই। এটাই আমার একমাত্র আয়ের জায়গা। এখন আমি কি করব! আমার স্বপ্ন খেতেই পুড়ে গেল। শুধু আমি নই এই এলাকার শতাধিক কৃষকের স্বপ্নের ফসল এই ভাটার গ্যাসে নষ্ট হয়ে গেছে।’
এ ছাড়া কৃষক মিরাজ, কৃষক আবু বক্কর সিদ্দিক, কৃষক ফজলু, কৃষক ফজলার রহমানসহ শতাধিক কৃষকদের ফসলের ক্ষতি হয়েছে। তাঁদের দাবি দ্রুত পুড়ে যাওয়া ফসলের ক্ষতিপূরণ ও পরবর্তীতে এমনটা যেন আর ঘটে তার স্থায়ী সমাধান করা হোক।
জমির ধান পুড়ে যাওয়ার বিষয়ে ‘ওয়ান স্টার ব্রীকস’ ভাটার ম্যানেজার মো. মনজু মিয়া বলেন, ‘জমির ধান গ্যাসের কারণে পোড়া যেতে পারে। কয়লার আগুনের কার্বনের কারণে পোড়া যায়। আবহাওয়া ও চিবনীতে যেসব গ্যাস বাহির হয় সেগুলার কারণে পোড়া যায়। আমরা কৃষকদের নিয়ে বসে এসব ক্ষতিপূরণ কীভাবে দেওয়া যায়, সে বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করতেছি।’
এ নিয়ে লালমনিরহাট সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মারুফা ইফতেখার সিদ্দিকা বলেন, ‘এই সময় ধান থোর পর্যায়ে আছে। কিছুদিন পরেই ধান পাকা শুরু হবে। এই সময়টা ধানের খেতের জন্য সেনসিটিভ পর্যায়ের। এখন একটু বেশি বাতাস হলেই ধানের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ভাটার গ্যাসের কারণে আবাদি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। আমরা কৃষকদের পাশে আছি।’
এদিকে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও মোগলহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে ইটভাটার বর্তমান কার্যক্রম বন্ধ এবং কৃষকের আবাদি জমির ক্ষয়ক্ষতির ক্ষতিপূরণের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে কৃষকেরা অবরোধ প্রত্যাহার করেন। বর্তমান সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
এ বিষয়ে লালমনিরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদা মাসুম বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতি পূরণের ব্যবস্থা করা হবে। ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। ওই ইটভাটার কাউকে খুঁজে পাইনি। আমরা দ্রুত ভাটার সকল কাগজপত্র নিয়ে ডেকেছি। ভাটাটি অবৈধ হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’