সংঘাত বন্ধে সালিসের মাধ্যমে সমঝোতা করা হয়। কিন্তু এর মাত্র ৯ দিন পর কুষ্টিয়ার কুমারখালীর সদকী ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামে আবারও দুই গ্রুপের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত চারজন গুরুতর আহত হয়েছেন। ভাঙচুর করা হয়েছে বেশ কিছু ফাঁকা ঘরবাড়ি।
আজ শনিবার সকাল ৬ টার দিকে গ্রামের রহমানের বাড়ি এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় আহতরা হলেন, গ্রামের মৃত শামছুদ্দিন শেখের ছেলে লিটন শেখ (২৫), মুহাম্মদের ছেলে মামুন আলী (৩৫), আহম্মদ আলীর ছেলে আসলাম (৪৫), মৃত ফয়েজ উদ্দিনের ছেলে আব্দুল কাশেম (৫০)। আহতরা কুষ্টিয়া সদরসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এর আগে গত ১১ আগস্ট সন্ধ্যায় সংঘাত বন্ধে চরপাড়ায় সালিসের আয়োজন করা হয়। এতে উভয় পক্ষ মারামারি, খুনোখুনি, হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট করবেন না এবং অন্যান্য গ্রামবাসীদের মতো শান্তিতে মিলেমিশে বসবাস করবেন বলে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে। অন্যদিকে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলে তাঁদের গ্রামছাড়া করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন স্থানীয় চেয়ারম্যান।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ৬ মে জমি সংক্রান্ত জেরে দুলাল মিস্ত্রির সমর্থক হুমায়ন মন্ডলকে (৪৪) কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষরা। এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই সাইদুল ইসলাম বাদী হয়ে ৩৬ জনের নামের একটি মামলা দায়ের করেন। এরপর গত ১ আগস্ট হুমায়ন হত্যা মামলার ৪ নম্বর আসামি ও আনসার আলী মেম্বরের সমর্থক সেলিমকে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষরা। এ ঘটনায়ও নিহত ভাই শাহীন আলী থানায় ২৯ জনকে আসামি করে মামলা করেন। ওই মামলায় হামলা ও গ্রেপ্তারের ভয়ে আসামিপক্ষরা পলাতক ছিলেন।
এ ঘটনার পরে সেলিম হত্যা মামলার আসামিরা জামিন নিয়ে প্রায় দুই শতাধিক সমর্থক নিয়ে আজ সকালে গ্রামে প্রবেশ করে এবং বাড়িতে ওঠেন। খবর পেয়ে বাদীপক্ষররা তাঁদের আসার বিষয়টি করতে তাদের বাড়িতে দেখতে যায়। এ সময় আসামিপক্ষের লোকজন বাদীপক্ষের ওপর হাসুয়া, রামদা, ঢাল, সড়কিসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করে। এতে বাদীপক্ষের মামুন, লিটন ও কাশেম গুরুতর আহত হন। এ সময় আসামিপক্ষের আসলামও গুরুতর আহত হন। আহতরা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ সময় স্থানীয়রা জানান, চরপাড়া গ্রামে প্রায় শতাধিক পরিবারে বসবাস। ২০২০ সালে জমির আইল নিয়ে বিরোধের পক্ষপাত শুরু হয়। আধিপত্য বিস্তারে এক পক্ষের নেতৃত্ব দেন গ্রামের দুলাল মিস্ত্রি। আর অন্য পক্ষের নেতা হলেন সাবেক ইউপি সদস্য আনসার আলী মেম্বর।
এ বিষয়ে আনসার আলী মেম্বর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রতিপক্ষরা জামিন নিয়ে গ্রামে ঢুকে দুলাল ও রেজাউলের নেতৃত্বে হামলা হামলা চালায়। আমার কয়েকজন গুরুতর জখম হয়েছে। পরে কথা বলছি।’
কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন লিটন শেখ, মামুন আলী ও আবুল কাশেমের স্বজনেরা বলেন, আসামিপক্ষরা গ্রামে ঢুকে হাসুয়া, দা, বল্লম, ঢাল, সড়কিসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করে। এতে লিটনের বুকের মধ্যে লোহার বল্লম ঢুকে গুরুতর আহত হয়। মামুন ও কাশের শরীরের একাধিক স্থানেও রক্তাক্ত জখমের চিহ্ন রয়েছে।
সদকী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিনহাজুল আবেদীন দ্বীপ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘শান্তি সমাবেশের মাত্র ৯ দিনপর তাঁরা আবার সংঘর্ষে জড়িয়েছে। তাঁরা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে। বিষয়টি দেখা হচ্ছে।’
কুমারখালী থানার ওসি কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, ‘সেলিম হত্যা মামলার আসামিরা সকালে পুলিশকে না জানিয়ে বাড়িতে ওঠে। এরপর দু-পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত চারজন গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’