ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা নিয়ে তাঁর বোন মাছুমা বেগম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তিন বছর আগে ওসমান হাদিকে বলেছিলাম, তোকেও কিন্তু ভারতের “র” বাঁচতে দেবে না। আবরারকে যেভাবে মেরে ফেলেছে, তোকেও সেভাবে মেরে ফেলবে। দেশপ্রেমিক মানুষকে তারা বাঁচতে দেয় না।’
হাদি ভারতবিরোধী লেখা লিখত, বাংলাদেশপন্থী লেখালেখি করত উল্লেখ করে মাছুমা বলেন, তার রক্তের প্রতিটি বিন্দুতে ছিল দেশপ্রেম। তার জীবনের প্রতিটি শিরা-উপশিরায় ছিল দেশের প্রতি ভালোবাসা। তার জীবন দেশের জন্যই ব্যয় হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে ‘র’ আছে, আওয়ামী লীগ আছে—আবার এখন মির্জা আব্বাসের বিপরীতে ঢাকা-৮ আসনে দাঁড়িয়েছে—এখন তার শত্রুর অভাব নেই। এ দেশে জিয়াউর রহমানকেও বাঁচতে দেয়নি।
হাদির ভগ্নিপতি আমীর হোসেন হাওলাদার বলেন, ‘ওসমান হাদি এমন একজন মানুষ, যার পা থেকে মাথা পর্যন্ত সবটাই দেশপ্রেমে ভরা। রাস্তায়, শাহবাগ মোড়ে—যেখানেই থাকুক—স্ত্রী, মা ও ভাইয়ের সঙ্গে একই কথা বলে। বাংলাদেশে এত সৎ মানুষ রাজনীতি করে না—এটা আমরা আগে থেকেই তাকে বলতাম। কিন্তু সে বলত, “না, কেউ না কেউকে তো শুরু করতেই হবে।” মূলত সে-ই সে শুরুটা করেছে।’
আমীর হোসেন আরও বলেন, ‘আমরা জানতাম, তার ওপর এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে, কারণ সে ছিল ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে। সে বাংলাদেশের প্রতিটি অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলত। তাই আমরা তাকে ব্যালেন্স করে চলতে বলতাম, কারণ ব্যালেন্স ছাড়া এ দেশে টিকে থাকা যায় না। কিন্তু সে বলত, “হ্যাঁ, আমি করব। হয়তো আমি একদিন থাকব না, কিন্তু আমার দেখাদেখি হাজারো-লাখো হাদির জন্ম হবে।’”
ঝালকাঠির নলছিটির বাড়িতে হাদির বোন ও ভগ্নিপতি বসবাস করেন। হাদির জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়ে ভগ্নিপতি আমীর জানান, হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁরা ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। হাদির মাকে এক সপ্তাহ আগে ঢাকায় হাদির বাসায় রেখে এসেছিলেন বলে তিনি জানান।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, হাদির বাবা প্রয়াত মাওলানা আব্দুল হাদি ছিলেন নলছিটি সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার সাবেক উপাধ্যক্ষ ও খাসমহল জামে মসজিদের ইমাম। মা তাসলিমা হাদি গৃহিণী। ছয় ভাইবোনের মধ্যে হাদি পঞ্চম। হাদির স্ত্রী রাবেয়া ইসলাম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে অনার্স সম্পন্ন করেছেন। এই দম্পতির একটি সন্তান রয়েছে।
হাদির বাল্যবন্ধু ইসমাইল মুসাফির বলেন, ওসমান হাদি ঝালকাঠি এনএস কামিল মাদ্রাসার ছাত্র ছিল। শৈশব থেকেই সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড—বিশেষ করে কবিতা আবৃত্তি ও বক্তৃতায়—সে ছিল অত্যন্ত দক্ষ। এ কারণে সে বারবার জেলা ও জাতীয় পর্যায়ে স্বর্ণপদক পেয়েছে। তার কোনো রাজনৈতিক পরিচয় ছিল না; ব্যক্তি হিসেবেই সে সব সময় রাজনৈতিকভাবে সচেতন ছিল।