বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে এক নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করে প্রতারণার অভিযোগে গোপালগঞ্জের গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) এসআই মো. ফারুক আলমের বিরুদ্ধে মামলার পর এবার বাদীর আইনজীবীকে হাত-পা ভেঙে ফেলার হুমকি দেওয়ার অভিযোগে আরেকটি মামলা হয়েছে।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (২০০০)-এর সংশোধনী অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর ৯ (খ) ধারায় ফারুকের বিরুদ্ধে গোপালগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা হয় গত ২৩ নভেম্বর। গোপালগঞ্জের ২৮ বছর বয়সী এক নারী এই মামলা দায়ের করেন। ট্রাইব্যুনাল বাদীর অভিযোগ প্রাথমিকভাবে তদন্ত করে এজাহার হিসেবে গণ্য করার জন্য গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেন।
ামলার খবর জানার পরে এসআই মো. ফারুক তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা বাদীর ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে বিভিন্নভাবে হয়রানি করা শুরু করেন। বাদীর আইনজীবী নুর হোসেন দুলালকেও হাত-পা ভেঙে ফেলার হুমকি দেন এসআই ফারুক। এই অভিযোগে অ্যাডভোকেট নূর হোসেন দুলাল ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন গত ১ ডিসেম্বর।
আইনজীবীর মামলা:
আইনজীবী নূর হোসেন দুলাল মামলায় অভিযোগ করেন, তিনি ঢাকা আইনজীবীর সমিতির সদস্য এবং গোপালগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য। গত ২৩ নভেম্বর গোপালগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে এক নারীর পক্ষে তিনি এসআই ফারুক আলমের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ওই মামলায় বাদীর অভিযোগ তদন্তপূর্বক এজাহার হিসেবে গণ্য করার জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল নির্দেশ দেন। আইনজীবী মামলা দায়েরের পর ঢাকায় ফিরে আসেন। গত ৩০ নভেম্বর তিনি ঢাকা জেলা জজ আদালত ভবনে অবস্থান করার সময় আনুমানিক সকাল ১০টার দিকে গোপালগঞ্জের তেঁতুলিয়া গ্রামের এস এম খসরুল আলম বাবুল নামে একজন তাঁকে ফোন দেন। ফোনে তিনি হুমকি দিয়ে বলেন, ‘গোপালগঞ্জের ডিবির এসআই ফারুক আলমের বিরুদ্ধে এক নারীর পক্ষে আপনি মামলা করেছেন। দ্রুত গোপালগঞ্জ এসে মামলাটি প্রত্যাহার করে নেবেন। প্রত্যাহার করা না হলে গোপালগঞ্জ এলে আপনার হাত-পা ভেঙে ফেলা হবে। আবার গোপালগঞ্জের যত পেন্ডিং মামলা আছে সবগুলোতে গ্রেপ্তার করে আপনাকে কারাগারে পাঠানো হবে। ওই সব মামলা থেকে বাঁচতে হলে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদাও দিতে হবে।’
এরপর ফোনে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে ফোন কেটে দেওয়া হয়।
মামলায় আরও অভিযোগ করা হয়েছে, গোপালগঞ্জে দায়ের করা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলার বাদীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ইতিমধ্যে এলাকাছাড়া করা হয়েছে।
এই মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ডিবির এসআই ফারুক জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে পুলিশে চাকরি নিয়েছেন। তাঁর বাড়ি শরীয়তপুর জেলার গোসাইরহাট থানার টুমচর গ্রামে। অথচ তিনি পুলিশের চাকরি নিয়েছেন যশোরের কোতোয়ালি থানার ঠিকানা ব্যবহার করে। এসআই ফারুকের দু’টি জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে। দু’টি পরিচয়পত্রের ফটোকপি আইনজীবী মামলায় দাখিল করেছেন।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইসমাইল আইনজীবীর দায়ের করা এই মামলার অভিযোগ তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে আগামী ২৯ জানুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
আইনজীবী নুর হোসেন দুলাল মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গোপালগঞ্জে মামলা:
গোপালগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, বাদীর স্বামীর সঙ্গে পারিবারিক বিরোধ থাকায় মামলা চলছিল। ওই সময় জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে কর্মরত ডিবির এসআই ফারুকের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। স্বামীর বিরুদ্ধে করা মামলায় সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন ফারুক। এসআই ফারুক তখন বাদীর গ্রামের বাড়িতে যান। একপর্যায়ে ফারুক ওই নারীকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। বাদীকে ফুসলিয়ে স্বামীকে তালাক দিতে বাধ্য করেন। একপর্যায়ে গোপালগঞ্জ শহরে বাদীকে বাসা ভাড়া করে থাকতে বলেন এসআই ফারুক। বাদী বাসা ভাড়া নেন। এসআই ফারুক নিয়মিত ওই বাসায় যেতেন। তাঁর সঙ্গে শারীরিক মেলামেশা করতেন। বাদী একপর্যায়ে এসআই ফারুককে চাপ দিলে তিনি টালবাহানা শুরু করেন। সর্বশেষ গত ১০ নভেম্বর রাতে বাদীর ভাড়া বাসায় এসআই ফারুক যান। ওই রাতে বাদী শারীরিক মেলামেশায় অস্বীকৃতি জানালে এসআই ফারুক তাঁকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন। এরপর থেকে এসআই ফারুক আর ওই নারীর সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ বন্ধ করে দেন এবং জানিয়ে দেন তিনি বিয়ে করবেন না।
এসআই ফারুকের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরকারী ওই নারী আজকের পত্রিকাকে জানান, এসআই ফারুক তাঁর সঙ্গে শারীরিক মেলামেশার ভিডিও ধারণ করেছেন। এগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন এখন। আবার তাঁকে মিথ্যা মামলায় জড়ানোরও হুমকি দিচ্ছেন। তিনি থানায় মামলা করতে গেলে মামলা না নেওয়ায় নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছেন বলে জানান।