গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার সূর্যনারায়ণপুর গ্রামের কাওলারটেক এলাকায় কৃষক গিয়াস উদ্দিন (৪০) ও এক শিয়ালের মধ্যে গড়ে উঠেছে এক অনন্য বন্ধুত্বের সম্পর্ক। মানুষ ও বন্য প্রাণীর পারস্পরিক ভয়ের দেয়াল পেরিয়ে বিশ্বাসের এই ব্যতিক্রমী বন্ধন এখন এলাকায় আলোড়ন তুলেছে।
পেশায় কৃষক গিয়াস উদ্দিন স্ত্রী-সন্তানদের থেকে আলাদা নির্জন পরিবেশে বসবাস করেন। গরু, ছাগল, মুরগি, ভেড়ার পাশাপাশি তাঁর বিশেষ সঙ্গী এখন একটি শিয়াল, যার নাম তিনি দিয়েছেন ‘লালু’। প্রায় এক বছর আগে গিয়াস উদ্দিনের এক বন্ধু বনের ভেতর থেকে একটি সদ্য চোখ ফোটা শিয়াল ছানাটি পরিত্যক্ত অবস্থায় খুঁজে পান। সেই ছানাটিকে বাড়িতে এনে লালনপালনের দায়িত্ব নেন গিয়াস উদ্দিন। এর পর থেকেই লালু তাঁর জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠে।
এখন লালুর বয়স এক বছরের বেশি। সে রান্না করা ভাত, তরকারি, মাংস, পাউরুটি, বিস্কুট—সবই খেতে পারে। দিনের অধিকাংশ সময় লালু থাকে গিয়াস উদ্দিনের বাড়ির উঠানে কিংবা ঘরের ভেতরে। মাঝে মাঝে বনে চলে গেলেও গিয়াস উদ্দিনের ডাক শুনলেই ছুটে ফিরে আসে।
গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘লালুকে ছোট থেকে লালন করছি। তার প্রতি মায়া জন্মেছে। মনে হয়, যেন সে আমার বন্ধু। ফসলের খেতে কাজ করতে গেলে সে পাশে বসে থাকে। আমি যেখানেই যাই, সে আমাকে খুঁজে বের করে সেখানে হাজির হয়।’
প্রতিবেশী মো. আজিজুল বলেন, ‘দৃশ্যটা সত্যিই অসাধারণ। মানুষের এত কাছে এসে বন্য প্রাণীর এমন আচরণ বিরল। শিয়ালটি গিয়াস উদ্দিনকে বিশ্বাস করে বলেই সে মানুষের সঙ্গেই থাকে।’
তবে বন্য প্রাণীকে এত কাছাকাছি রাখা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ রয়েছে। কাপাসিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এ কে এম আতিকুর রহমান বলেন, ‘শিয়াল রেবিস ভাইরাস বহন করতে পারে, যা জলাতঙ্কের মতো মারাত্মক রোগ সৃষ্টি করতে পারে। তাই এ ধরনের প্রাণীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বিপজ্জনক। এ ছাড়া বন্য প্রাণী সংরক্ষণের দিক থেকেও বন বিভাগকে বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত।’
প্রকৃতি ও মানবতার এই অদ্ভুত সহাবস্থান এখন সূর্যনারায়ণপুর গ্রামে কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে। কেউ একে দেখছেন এক অসাধারণ বন্ধুত্বের গল্প হিসেবে, কেউবা ভাবছেন এর সম্ভাব্য ঝুঁকি নিয়ে।