প্রতারক ডা. ইশরাত রফিক ঈশিতা ও তাঁর সহযোগী শহিদুল ইসলাম দিদারকে দুই মামলায় ছয় দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। আজ সোমবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
বিকেলে ঈশিতা ও দিদারকে আদালতে হাজির করে রাজধানীর শাহ আলী থানা-পুলিশ। দুই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. মাসুদ রানা ফরাজী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় প্রত্যেককে পাঁচ দিন এবং জালিয়াতি ও প্রতারণার মামলায় প্রত্যেককে পাঁচ দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। অন্যদিকে দুই আসামির পক্ষে জামিনের আবেদন করেন তাঁদের আইনজীবীরা। মহানগর হাকিম আশেক ইমামের আদালতে শুনানি হয়। আদালত জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে প্রত্যেক মামলায় তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে গত রোববার সকালে র্যাব–৪–এর একটি দল মিরপুর–১ এলাকায় মুক্তবাংলা মার্কেটের সামনে ফুটওভারব্রিজের নিচ থেকে এই দুজনকে আটক করে। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে ৩০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, পাঁচ বোতল বিদেশি মদ এবং বিভিন্ন জাল নথি ও সনদপত্র উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় র্যাবের উপসহকারী পরিচালক (পুলিশ পরিদর্শক) আমির আলী শাহ আলী থানায় পৃথক দুটি মামলা করেন।
মামলায় বলা হয়, ডাক্তার ঈশিতা ও তাঁর সহযোগী দিদার ইয়াবা ও বিদেশি মদ বেচাকেনার কথা স্বীকার করেছেন। কখনো সরকারি কর্মচারী, কখনো চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞ, কখনো বিভিন্ন সংগঠনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, কখনো সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলে পরিচয় দেওয়া এবং জালিয়াতি করে দেশি ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সনদ তৈরি করে প্রতারণার মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার কথাও তাঁরা স্বীকার করেছেন।
রিমান্ড আবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, আসামি ইশরাত রফিক ঈশিতা একজন চিকিৎসক। কিন্তু তিনি নামের পাশে অনেক ভুয়া ডিগ্রি লাগিয়ে মানুষকে প্রতারিত করে আসছিলেন। নিজেকে ‘বিজ্ঞানী’ বলে পরিচয় দিতেন। তাঁর কথিত ‘আন্তর্জাতিক পুরস্কার’ পাওয়ার খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমেও এসেছে। তিনি নামের আগে লিখতেন ‘ব্রিগেডিয়ার জেনারেল’, ইন্টারপোলের সঙ্গেও সংশ্লিষ্টতার রয়েছে দাবি করে তা ফলাও করে কার্ডে লিখতেন। ক্যানসার বিশেষজ্ঞ বলেও পরিচয় দিতেন। ঈশিতা বিভিন্ন সেমিনার আয়োজন করতেন, চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার নাম করে অনলাইনে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। সম্প্রতি অনিবন্ধিত ‘ইয়ং ওয়ার্ল্ড লিডারস ফর হিউম্যানিটি’ নাম দিয়ে একটি সেমিনার আয়োজন করেন ঈশিতা। সেখানে ৬০ জন চিকিৎসককে প্রশিক্ষণ দেন এবং নিবন্ধন ফি হিসেবে ৩ হাজার টাকা করে নেন।
এই সংগঠনের নাম দিয়ে ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র, ওমান, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে অর্থের বিনিময়ে প্রতিনিধি নিয়োগ দিয়েছেন ঈশিতা।
করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার সনদ দেওয়ার নামে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ৩ / ৪ হাজার টাকা করে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। ঈশিতাকে এসব কাজে সহযোগিতা করতেন শহিদুল ইসলাম দিদার। তিনি নিজেও বিভিন্ন ভুয়া পদবি ব্যবহার করতেন। নিজেকে মেজর জেনারেল হিসেবে পরিচয় দিতেন।
আসামি দুজনই সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র এবং সংঘবদ্ধ মাদক কারবারি চক্রের সদস্য। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে এই চক্রের আরও অনেকের নাম জানা যাবে।