হাইকোর্টসংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ মাঠের সামনে প্লাস্টিকের ড্রামে ভরা খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় মামলা হয়েছে। নিহত আশরাফুল হকের বোন আনজিনা বেগম আজ শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) সকালে শাহবাগ থানায় মামলাটি করেন। মামলায় আশরাফুলের বন্ধু জরেজ মিয়াকে প্রধান আসামি ও অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতীয় ঈদগাহের গেটের কাছে নীল রঙের প্লাস্টিকের ড্রামটি দেখে পথচারীদের সন্দেহ হলে পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ ড্রাম থেকে টুকরা করা মরদেহ উদ্ধার করে। তাৎক্ষণিকভাবে পরিচয় নিশ্চিত করা না গেলেও পরে ফিঙ্গারপ্রিন্টের মাধ্যমে জানা যায়, নিহত ব্যক্তি রংপুরের বদরগঞ্জের গোপালপাড়ার মো. আশরাফুল হক (৪২)। তিনি পেশায় একজন ব্যবসায়ী ছিলেন; ভারত ও মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ ও আলু আমদানি করতেন, এ-সংক্রান্ত সরকারি লাইসেন্সও ছিল তাঁর।
আজ সকালে আশরাফুলের পরিবার মর্গে এসে পরিচয় শনাক্ত করে। তাঁর বোন জানান, আশরাফুলের কারও সঙ্গে শত্রুতা ছিল না। তিন দিন আগে তিনি বন্ধু জরেজের সঙ্গে ঢাকায় এসেছিলেন। এর পর থেকে তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। গত বুধবার রাত ৯টার পর আর পরিবারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ ছিল না।
পুলিশ বলছে, আশরাফুল বাড়ি থেকে ঢাকায় আসার পর থেকে তিনি নিখোঁজ হন। তাঁর মরদেহ ২৬ টুকরা করে ড্রামে ভরে ফেলে যাওয়া হয়। হত্যাকাণ্ডটি পরিকল্পিতভাবে সংঘটিত হয়েছে বলে ধারণা করছেন তদন্তসংশ্লিষ্টরা।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুর বলেন, ব্যবসায়ী আশরাফুল হককে হত্যা করে মরদেহ ২৬ টুকরা করে ড্রামে ভরা হয়। তাঁর বোনের করা মামলায় আশরাফুলের বন্ধু জরেজ মিয়া প্রধান আসামি। এখনো কাউকে আটক করা যায়নি। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণসহ অন্য তথ্যের ভিত্তিতে হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্তে কাজ চলছে।
এদিকে, আজ বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে আশরাফুলের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ময়নাতদন্ত করেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক ডা. দীপিকা রায়। পরে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়।
এর আগে গতকাল আশরাফুল হকের শ্যালক আব্দুল মজিদ বদরগঞ্জ থানার সামনে জানান, আশরাফুল তাঁর বাবাকে রংপুরে একটি হাসপাতালে রেখে গত মঙ্গলবার মালয়েশিয়াফেরত বন্ধু জরেজের সঙ্গে ঢাকায় যান। বুধবার বিকেল ৫টার দিকে আশরাফুল তাঁর স্ত্রী লাকী বেগমের সঙ্গে শেষ কথা বলেন। এরপর আর যোগাযোগ হয়নি। এর পর থেকে স্ত্রী লাকী বেগম আশরাফুলকে ফোন করলে তাঁর বন্ধু জরেজ ফোন রিসিভ করতেন। আশরাফুলের খোঁজ করলে তিনি বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত আছেন বলে জানাতেন। স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে গতকাল বিকেলে ভাইয়ের সঙ্গে বদরগঞ্জ থানায় যান লাকী বেগম। সেখানে জানতে পারেন, ঢাকায় স্বামী আশরাফুল হকের খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার হয়েছে।