রাজধানীতে ঝটিকা মিছিলে অংশ নেওয়ায় চলতি বছরের গত ১০ মাসে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন অঙ্গ–সহযোগী সংগঠনের প্রায় ৩ হাজার নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এসব মিছিলের অর্থদাতাসহ পেছনের হোতাদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে ডিএমপি।
আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এ তথ্য জানান।
আজ রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ঝটিকা মিছিল থেকে ৪৬ জনকে গ্রেপ্তার উপলক্ষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শেরেবাংলা নগর, বনানী, তেজগাঁও, উত্তরা, খিলক্ষেত ও বাড্ডা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
বিকেলে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির মুখপাত্র ও মিডিয়া শাখার উপকমিশনার (ডিসি) তালেবুর রহমান জানান, দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে বিভিন্ন জেলা থেকে রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ঢাকায় আসছেন এবং ঝটিকা মিছিলের চেষ্টা করছেন। মিছিল থেকে ককটেল বিস্ফোরণও করছেন। পরে সেগুলো ফেসবুকে দিয়ে জানান দিচ্ছেন।
ডিসি তালেবুর বলেন, জেলা জেলা থেকে আসার সময় এই নেতা-কর্মীরা যাতায়াত ও খরচের জন্য টাকাও নিচ্ছেন। এই অর্থদাতাসহ এর পেছনে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
তালেবুর রহমান জানান, ডিএমপির বিভিন্ন ইউনিট ও থানার যৌথ অভিযানে শেরেবাংলা নগর থানা ১৮, কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ১৩, খিলক্ষেত থানা ৪, উত্তরা থানা ২, বাড্ডা থানা ৩, বনানী থানা ৩ এবং তেজগাঁও থানা ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সরকারবিরোধী ঝটিকা মিছিলের প্রস্তুতি নিচ্ছিল বলে জানান তিনি। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট থানাগুলো অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে।
খিলক্ষেত থানা সূত্রে জানা যায়, সকালে ৩০০ ফিট পুরোনো মস্তুল চেকপোস্টের সামনে নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ব্যানারে মিছিলের প্রস্তুতি চলছিল। পুলিশ উপস্থিত হলে নেতা-কর্মীরা পালানোর চেষ্টা করেন। সেখান থেকে হাতেনাতে আনিসুজ্জামান রনি, মুন্না মিয়া, জাকির হোসেন ও কামরুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়।
উত্তরা পশ্চিম থানা জানায়, সকালে উত্তরা ৯ নম্বর সেক্টরের আকাশ টাওয়ারের সামনে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের ব্যানারে মিছিলের প্রস্তুতিকালে ব্যানারসহ মোমিনুল হাসান ও রকিবুল হাসানকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়।
বাড্ডা থানা জানায়, সকাল ৭টার দিকে প্রগতি সরণি মেইন রোডে ঝটিকা মিছিলের প্রস্তুতিকালে ইয়াসিন আরাফাত শুভ, তাসরীপ হোসেন ও মো. খালেদ বিন কাওসারকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়।
কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) সূত্রে জানা যায়, বিজয়নগর এলাকায় অভিযান চালিয়ে রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের সদস্যদের ঝটিকা মিছিলের প্রস্তুতিকালে রফিকুল ইসলাম বাঁধন, সুমন হোসেন, মেজবাউল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম সাইফ, মোস্তাফিজুর রহমান জনি, শেখ রাশেদুজ্জামান, মামুন শেখ পরশ, মামুন সেখ, রাজু, শফিউল আলম, কুদ্দুস সরদার ও মিঠুন দেবনাথসহ মোট ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
শেরেবাংলা নগর থানা জানায়, ভোরে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের প্রায় ৯০-১০০ জন নেতা-কর্মী মিছিল করার সময় পুলিশ অভিযানে নামে। এ সময় বজলুর রহমান বাঁধন, নুর আলম সিদ্দিক ও মহিউদ্দিন আহমেদ দোলনসহ ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বনানী থানার তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বনানী ঢাকা গেট এলাকার সামনে ঝটিকা মিছিলে অংশ নেওয়া জিয়াদ মাহমুদ, মো. জিয়াদ ও মো. আসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তেজগাঁও থানা জানায়, বিজয় সরণি এলাকায় নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিলের সময় মো. রিফাত ইসলাম, মো. মিল্লাত বাবু ও মো. স্বপন মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। ডিএমপি জানিয়েছে, গ্রেপ্তার ৪৬ জনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন।