বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার দুই বছর পেরিয়ে গেলেও যুক্তিতর্ক শুনানি এখনো শেষ হয়নি। সাক্ষ্যগ্রহণ গত ২৩ আগস্ট শেষ হলেও এখনো উভয় পক্ষের শুনানি চলছে। বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্নের লক্ষ্যে গত বছরের ১৫ মার্চ মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এ স্থানান্তর করা হলেও করোনা পরিস্থিতিসহ আরও নানা কারণে এখনো এর শুনানি শেষ হয়নি।
আজ বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপক্ষে বিশেষ পিপি আবু আবদুল্লাহ ভূঁইয়া শুনানি শেষ করেন। কিন্তু আরেক বিশেষ পিপি মোশারফ হোসেন কাজল রাষ্ট্রপক্ষে আরও শুনানি শুরু করেন। তাঁর শুনানি শেষ না হওয়ায় ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান আগামী ২৫ অক্টোবর আরও শুনানির দিন ধার্য করেন।
ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেওয়ার জেরে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে ডেকে নিয়ে যায় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী। এর পর রাত ৩টার দিকে শেরে বাংলা হলের নিচতলা ও দোতলার সিঁড়ির করিডর থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পুরো ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঢেউ ওঠে। এ ঘটনায় ফাহাদের বাবা মো. বরকত উল্লাহ ১৯ জনকে আসামি করে চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
আবরার হত্যার প্রতিবাদে দেশজুড়ে আন্দোলন তীব্র হয়। এতে বুয়েটের বর্তমান, সাবেকসহ সব শিক্ষার্থী অংশ নেন। তীব্র আন্দোলনের মুখে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তারে তৎপর হয়।
২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর আবরার হত্যা মামলায় ২৫ জনকে আসামি করে চার্জশিট দেওয়া হয়েছিল। চার্জশিটভুক্ত সব আসামি বুয়েটের ছাত্র ও ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। মামলার তদন্ত চলাকালে যে ২১ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়, তাঁরা হলেন—মেহেদী হাসান রাসেল, মো. অনিক সরকার, ইফতি মোশাররফ সকাল, মেহেদী হাসান রবিন, মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, মুনতাসির আলম জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির, মো. মুজাহিদুর রহমান, মুহতাসিম ফুয়াদ, মনিরুজ্জামান মনির, মো. আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মাজেদুর রহমান, শামীম বিল্লাহ, মোয়াজ আবু হুরায়রা, এ এস এম নাজমুস সাদাত, ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা, মো. মিজানুর রহমান ওরফে মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত ও এস এম মাহমুদ সেতু। পরে গত বছরের ১২ জানুয়ারি অমর্ত্য ইসলাম ওরফে মোর্শেদ নামে একজন আত্মসমর্পণ করেন। তাঁরা সবাই কারাগারে আছেন।
মামলার তিন আসামি এখনো পলাতক। তাঁরা হলেন—মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ। এর মধ্যে প্রথম দুজন এজাহারভুক্ত ও শেষেরজন এজাহারবহির্ভূত আসামি।
২০১৯ সালেই এ মামলায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আট আসামি। তাঁরা হলেন ইফতি মোশাররফ হোসেন সকাল, বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন, মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, অনিক সরকার, মো. মুজাহিদুর রহমান, মনিরুজ্জামান মনির, এ এস এম নাজমুস শাদাত ও তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর। কিন্তু এত কিছুর পরও বিচারকাজ এগোচ্ছিল না।
গত ২৩ আগস্ট এই মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। ২৯ আগস্ট আসামিরা আত্মপক্ষ সমর্থন করে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। পরে ৮ সেপ্টেম্বর আবার অভিযোগ গঠন করায় যুক্তিতর্ক শুনানি পিছিয়ে দেওয়া হয়। এর পর গত ১৪ সেপ্টেম্বর যুক্তিতর্ক শুনানি শুরু হয়। গত ২০ সেপ্টেম্বর বিচারক করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর আবার শুনানি পিছিয়ে দেওয়া হয়। আজ আবার সরকার পক্ষের আইনজীবী শুনানি শেষ না করায় আগামী ২৫ অক্টোবর নতুন করে শুনানির দিন ধার্য করেন বিচারক। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর এবং ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ হাতে থাকার পরও বিচারকাজে এই দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে।