হোম > সারা দেশ > ঢাকা

সোনিয়া বশির কবিরের প্রতারণার ফাঁদ

আমানুর রহমান রনি, ঢাকা 

সোনিয়া বশির কবির। ছবি: সংগৃহীত

আলোচিত-সমালোচিত ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠান ‘এসবিকে টেক ভেঞ্চারস লিমিটেড’-এর সিইও সোনিয়া বশির কবিরের বিরুদ্ধে দেশ-বিদেশের একাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অন্তত ৮০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। নিজের প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করার প্রস্তাব দিয়ে ও শেয়ার বিক্রির কথা বলে এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন তিনি।

ভুক্তভোগীরা দেশে ও বিদেশের বিভিন্ন আদালতে সোনিয়া কবির ও তাঁর প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করেছেন। এসব মামলার কিছু তদন্ত চলছে, আবার কয়েকটি মামলায় তাঁকে অভিযুক্ত করে আদালতে প্রতিবেদনও দিয়েছে পুলিশ।

গত জানুয়ারিতে মিসেস জেরিন চৌধুরী ও তানভীর ইসলাম নামে দুজন ব্যবসায়ী সোনিয়া কবিরের বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে চারটি মামলা করেন। মামলায় সাড়ে ৯ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেছেন তাঁরা। এর মধ্যে দুটি মামলা এনআই অ্যাক্টে করা। এসব মামলায় সোনিয়া কবিরের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।

জেরিন চৌধুরী গত ১২ জানুয়ারি আদালতে করা একটি মামলায় অভিযোগ করেছেন, সোনিয়া কবির ২০২১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত তাঁর কাছ থেকে হিসাব প্লাস ডটকম লিমিটেড ও এসবিকে টেক ভেঞ্চারস লিমিটেডের শেয়ার বিক্রি, কোম্পানিতে বিনিয়োগ ও লভ্যাংশ দেওয়ার কথা বলে ২ কোটি ৯ লাখ ৩৩ হাজার ৩০০ টাকা নিয়েছেন। এর মধ্যে ২০২১ সালের ৬ জুলাই এক্সিম ব্যাংকের মাধ্যমে ১৬ লাখ ৫০ হাজার, ২০২২ সালের ২৩ অক্টোবর আইএফআইসি ব্যাংকের মাধ্যমে ৪০ লাখ এবং একই বছরের ৫ জুন ৪৫ লাখ টাকা দেন জেরিন চৌধুরী। এ ছাড়া হিসাব প্লাস ডটকম লিমিটেডে বিনিয়োগ করেন ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এভাবে কয়েক দফায় দুটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বিক্রি ও লভ্যাংশের কথা বলে জেরিন চৌধুরীর কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন সোনিয়া কবির। তাঁর কাছে মূলধন ও লভ্যাংশসহ ২ কোটি ৯ লাখ ৩৩ হাজার টাকা পাওনা বলে দাবি করেছেন জেরিন চৌধুরী।

জেরিন চৌধুরীর করা মামলাটি তদন্ত করেছে পুলিশের বিশেষিত তদন্ত সংস্থা পিবিআই ঢাকা মেট্রো দক্ষিণ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক এস এম আশরাফুল আলম গত ১৬ সেপ্টেম্বর আদালতে সোনিয়া কবিরকে দায়ী করে প্রতিবেদন দেন। প্রতিবেদনে বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে সোনিয়া কবিরকে টাকা দেওয়ার প্রমাণের বিষয়টি তিনি উল্লেখ করেছেন। সেই সঙ্গে সোনিয়া কবিরকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আশরাফুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিনিয়োগের কথা বলে সোনিয়া কবির টাকা নিয়েছেন, তাঁর সত্যতা মিলছে। তাঁকে অভিযুক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। মামলাটি এখন বিচারাধীন রয়েছে।

সোনিয়া কবির আরও কয়েকজন উদ্যোক্তার কাছ থেকে তার প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের কথা বলে টাকা নিয়েছেন। কাউকে কোম্পানির শেয়ার দেওয়ার কথা বলেছেন, আবার কাউকে লভ্যাংশ দেওয়ার কথা বলে বিনিয়োগ করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তাঁদের মধ্যে তানভীর ইসলাম নামে এক ব্যবসায়ী রয়েছেন। তানভীর ইসলামও গত জানুয়ারিতে ঢাকার নিম্ন আদালতে একটি মামলা করেছেন। মামলায় তিনি সোনিয়া কবিরকে ঋণ বাবদ এবং তাঁর কোম্পানিতে বিনিয়োগের জন্য ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা দিয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন।

তানভীর ইসলামের মামলাটি তদন্ত করেছেন পিবিআইর পরিদর্শক তরিকুল ইসলাম। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, মামলায় সোনিয়া কবিরের প্রতারণার বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে মামলার বাদী তানভীর ইসলাম বলেন, বিনিয়োগের কথা বলে টাকা নিয়ে সোনিয়া কবির মূলধন বা লভ্যাংশ কোনো কিছুই ফেরত দেননি। উল্টো তিনি ভয়ভীতি দেখাতেন, পারলে টাকা ফেরত নিয়ো—এমন হুমকি দিতেন।

এসবিকে টেক ভেঞ্চারসের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে। এক সাবেক সেনা কর্মকর্তার কাছ থেকে নেওয়া ১৫ কোটি টাকা এবং ফাইবার হোম লিমিটেডের কাছ থেকে নেওয়া ১২ কোটি টাকা ফেরত দেয়নি প্রতিষ্ঠানটি।

এসবিকে টেক ভেঞ্চারস লিমিটেড মূলত সরকার ও বেসরকারিভাবে ‘মূলধন বা ক্যাপিটাল’ তৈরি করে এরপর তা ছোট ছোট স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান বা উদ্যোক্তাদের মাঝে বিনিয়োগ করত। একপর্যায়ে বিনিয়োগ বা ঋণ না দিয়ে উল্টো প্রতারণা করত বলে অভিযোগ ওঠে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। গত অক্টোবরে সোনিয়া কবির ও তাঁর প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ করেছে স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান মার্কোপোলো, ফসল, যাত্রী, ১০ মিনিট স্কুল, অরোগা ও সোলশেয়ার।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এসবিকে টেকের সিইও সোনিয়া কবির কেবল দেশের স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতারণা করেননি, তিনি সিঙ্গাপুরের দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও প্রতারণা করেছেন। সিঙ্গাপুরের ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্ম ডি ইনভেস্টমেন্ট ভেঞ্চার ক্যাপিটাল (ডিআইভিসি)-এর সঙ্গে ১৫ লাখ ডলারের শেয়ার বিক্রির চুক্তি করেছিল সোনিয়া কবিরের প্রতিষ্ঠান এসবিকে টেক ভেঞ্চারস লিমিটেড। তাদের টাকা আত্মসাৎ করায় সোনিয়ার বিরুদ্ধে সিঙ্গাপুরে ওই প্রতিষ্ঠানটি মামলা করেছে।

এসব বিষয়ে বক্তব্যের জন্য সোনিয়া কবিরের গুলশান ২ নম্বরের অফিসে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। এমনকি তাঁর বারিধারার বাসায়ও তিনি নেই বলে নিরাপত্তাকর্মীরা জানান। এরপর তাঁর মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন ও বার্তা দিলেও তিনি সাড়া দেননি। তাঁর অফিসের একজন সহকর্মী জানিয়েছেন, তিনি বর্তমানে দেশের বাইরে রয়েছেন।

সোনিয়া কবিরের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় এনআই অ্যাক্টের মামলার দুটি পরোয়ানা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

মাকে দেখতে মাঝরাতে হাসপাতালে তারেক রহমান

ভারতীয়দের ওয়ার্ক পারমিট বাতিলসহ ৪ দফা দাবি ঘোষণা করল ইনকিলাব মঞ্চ

পাকস্থলীতে হাজারখানেক ইয়াবাসহ বিমানযাত্রী গ্রেপ্তার

হাদি হত্যাকাণ্ড: ফয়সালের সহযোগী কবির রিমান্ড শেষে কারাগারে

কেরানীগঞ্জে মাদ্রাসায় বিস্ফোরণ: সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় রিমান্ডে ৬

বসুন্ধরা থেকে চীনা নাগরিকের মরদেহ উদ্ধার

কেরানীগঞ্জে মাদ্রাসায় বিস্ফোরণে এ পর্যন্ত ছয়জন গ্রেপ্তার

২৪৬৭ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে স্বাস্থ্যবিমার আওতায় আনল ডিএনসিসি

শাহবাগে ইনকিলাব মঞ্চের অবরোধ, বন্ধ যান চলাচল

ঋণখেলাপির তালিকায় নাম: চেম্বার আদালতে মান্নার আবেদনের শুনানি সোমবার পর্যন্ত মুলতবি