গান, কবিতা, আবৃত্তি আর আলোচনায় উদ্যাপিত হলো বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর ৫৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন। অনুষ্ঠানে বারবার জয় পেয়ে হাতছাড়া না করার আহ্বান জানানো হয়।
আজ শুক্রবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিকেল সাড়ে ৪টায় জাতীয় সংগীত ও সংগঠন সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা ও উদীচীর পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সমাপনী দিনের আয়োজন। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহমুদ সেলিম এবং সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে।
মাহমুদ সেলিমের সভাপতিত্বে আলোচনা পর্বে বক্তারা বলেন, বর্তমান বাংলাদেশে পশ্চাৎপদতা ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তির উত্থানের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সহস্রাধিক ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগ এবং আরও অসংখ্য মানুষের পঙ্গুত্ববরণের মধ্য দিয়ে দেশ থেকে ফ্যাসিবাদী অপশাসনকে দূর করা গেছে। কিন্তু বর্তমানে যাঁরা ক্ষমতায় আছেন, তাঁরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না।
আলোচনায় বলা হয়, চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের হাতে ইজারা দেওয়া, মানবিক করিডরের নামে দেশকে বহিঃশত্রুর আক্রমণের ঝুঁকিতে ফেলা থেকে শুরু করে নানা সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্ত চলছে। এসব কিছুই দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতাকে হুমকিতে ফেলবে।
আলোচকদের ভাষ্য, মানুষ বারবার আন্দোলন করে আত্মাহুতি দিয়ে অপশক্তির হাত থেকে রক্ষা পেলেও বারবারই সে জয় হাতছাড়া হয়ে যায়। এবার যেন জয় হাতছাড়া না হয়, সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
স্বাগত বক্তব্য দেন উদীচীর সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে। আরও বক্তব্য দেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সহসভাপতি শিক্ষাবিদ অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারী, সাবেক সহসভাপতি মোফাখখারুল ইসলাম জাপান ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম সিদ্দিক রানা। সঞ্চালনায় ছিলেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহসাধারণ সম্পাদক সংগীতা ইমাম।
সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় শুরুতে নৃত্য পরিবেশন করে উদীচী বাড্ডা শাখার শিশুশিল্পী আলিফা। এরপর উদীচীর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহমুদ সেলিম রচিত ও নির্দেশিত গীতি-নাট্যালেখ্য ‘শিরোনামহীন মানুষ’ পরিবেশিত হয়। যেখানে কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের জীবনসংগ্রামের নানা কাহিনি তুলে ধরা হয়।
এতে অংশ নেন কেন্দ্রীয় সংসদের সদস্য তুষার চন্দন, কেন্দ্রীয় সংগীত বিভাগের শিল্পী জয়া সেন গুপ্তা, শাওন কুমার রায়, বাড্ডা শাখার শিল্পী অরুণিমা আহমেদ প্রথমা ও মীর হেদায়েতুল ইসলাম বাকী। সমবেত সংগীত পরিবেশন করে উদীচী বাড্ডা শাখা। একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহসভাপতি বেলায়েত হোসেন, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শিখা সেন গুপ্তা, মোহাম্মদপুর শাখার শিল্পী আতিকুজ্জামান মির্জা।
বেলায়েত হোসেনের গ্রন্থনায় বৃন্দ আবৃত্তি পরিবেশন করেন উদীচী কেন্দ্রীয় আবৃত্তি বিভাগের বাচিক শিল্পীরা। পর্বটি সঞ্চালনা করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সংগঠনবিষয়ক সম্পাদক শেখ আনিসুর রহমান।
‘ঘোর আঁধারে পথ দেখাবে আগুনের নিশান’—এই স্লোগান নিয়ে উদীচীর ৫৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপনের তিন দিনব্যাপী আয়োজন শুরু হয় ২৯ অক্টোবর। সেদিন বিকেল ৫টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় সেমিনার। দেশে ও বিদেশে উদীচীর সাড়ে তিন শতাধিক জেলা ও শাখা সংসদ এবার একযোগে উদ্যাপন করেছে উদীচীর ৫৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।