পাঁচ বছর আগে ব্যবহারযোগ্য পুরোনো স্কুল ভবন ভেঙে ফেলা হয়। নতুন ভবনের আশ্বাসে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান শুরু হয় প্রায় আধা কিলোমিটার দূরের পুকুরপাড়ের একটি টিনশেড ঘরে। সেই অস্থায়ী ঘরে কেটেছে পাঁচটি বছর। এখনো রোদ, বৃষ্টি আর ঝড়ের মধ্যে চলছে ক্লাস।
চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বারখাইন ইউনিয়নের দক্ষিণ তৈলারদ্বীপ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৪৭ শিক্ষার্থী ও ৬ শিক্ষকের এই দুর্ভোগ এখন নিত্যদিনের সঙ্গী। জায়গা না থাকায় নিয়মিত অ্যাসেম্বলিও হয় শ্রেণিকক্ষের ভেতর বা চলাচলের সড়কে।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন ভবনের কাজ ফেলে রেখেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন। পাইলিং করা লোহার দণ্ডে জং ধরেছে, পানিতে ডুবে আছে অসমাপ্ত পিলার। চারপাশে ছড়িয়ে আছে নির্মাণসামগ্রী। পুরোনো ভবনের শুধু ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কক্ষটি’ রাখা হয়েছে, বাকিটা ভেঙে ফেলা হয়েছে। এখন শিক্ষার্থীরা পুকুরপাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ টিনশেড ঘরে পাঠ নেয়। শ্রেণিকক্ষের সংকটে চার-পাঁচজন শিক্ষার্থীকে বসতে হয় এক বেঞ্চে।
অভিভাবক মোহাম্মদ ইদ্রিছ বলেন, বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের অবস্থা খুবই খারাপ। শিশুরা স্কুলে যেতে চায় না। নতুন ভবন না হলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা আরও কমবে। প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাতেমা জোহরা, ইমরান হোসাইন তানভীর ও পঞ্চম শ্রেণির ফারাবি রহমান রাব্বি বলে, ‘গরমের সময় টিনের চালার নিচে ক্লাস করা যায় না। মনে হয় শরীর পুড়ে যাচ্ছে। পুরোনো ভবনটাই অনেক ভালো ছিল।’
অভিভাবক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ঠিকাদার ও স্থানীয় একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠীর মধ্যে কাজের ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে নির্মাণকাজ থেমে আছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরও কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। ইতিমধ্যে লোহা ও অন্যান্য সামগ্রী চুরি হয়ে যাচ্ছে।
বিদ্যালয় সূত্র জানায়, ২০২১ সালে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে (এমডিএফপি প্রকল্প) প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। পুরোনো ভবন ভেঙে দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক টিনশেড ঘর ভাড়া নেওয়া হয়। কিন্তু ঠিকাদার কাজ ফেলে পালিয়ে গেলে প্রকল্প স্থবির হয়ে যায়। ফলে শিক্ষকদের হিমশিম খেতে হচ্ছে ক্লাস পরিচালনায়, কমেছে শিক্ষার্থীও।
স্থানীয় যুবক আমিনুল হক, মোহাম্মদ সাকিব, রিদোয়ান ও সায়মন বলেন, ‘ঠিকাদার পাঁচ বছর আগে পাইলিং শুরু করেছিল। সবাই ভেবেছিল ভবন দ্রুত হবে। কিন্তু এক বছর পরই কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এখন সামগ্রীগুলো নষ্ট হচ্ছে, দেখার কেউ নেই।’
জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জয়নাব বেগম বলেন, ‘ভবন না থাকায় শিক্ষার্থীদের পাঠদানে অনেক সমস্যা হচ্ছে। আগে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী ছিল, এখন আছে মাত্র ১৪৭ জন। মাল্টিমিডিয়া ক্লাসও বন্ধ। দামি জিনিস রাখা যায় না চুরির ভয়ে। এক বছরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা বলে ভবন ভেঙেছিল ঠিকাদার। কিন্তু পাঁচ বছরেও কাজ হয়নি। বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দিয়েও কোনো প্রতিকার পাইনি।’
এ বিষয়ে আনোয়ারা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সানাউল্লাহ কাউছার বলেন, এমডিএফপি প্রকল্পে ভবন বরাদ্দ ছিল, কিন্তু কাজ বন্ধ থাকায় শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এই অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে অস্থায়ী কক্ষ নির্মাণের জন্য সহায়তা চেয়ে আবেদন পাঠানো হয়েছে।
উপজেলা প্রকৌশলী জাহেদুল আলম চৌধুরী বলেন, ঠিকাদারের অবহেলার কারণে প্রকল্প বাতিল হয়েছে। বি-স্ট্রিম প্রকল্পের আওতায় নতুন করে ভবন নির্মাণ করা হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আক্তার বলেন, বিদ্যালয় ভবনের জন্য নতুন বরাদ্দের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।