মিয়ানমারের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর ওপর দেশটির সামরিক বাহিনীর চালানো নিপীড়নকে প্রথমবারের মতো ‘গণহত্যা’ বলে বর্ণনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, তিনি নিশ্চিত যে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ২০১৬ এবং ২০১৭ সালে দেশের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে গণহত্যা এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে। আহ্বান
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন মন্তব্যকে রোহিঙ্গাদের পক্ষে ও মানবতা বিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে বাইডেন প্রশাসনের উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এরই মধ্যে ইউরোপিয়ান রোহিঙ্গা কাউন্সিল (ইআরসি) এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। অন্যদিকে প্রতিক্রিয়া জানাতে শুরু করেছে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন সামাজিক ও যুব সংগঠন।
রোহিঙ্গা যুবকদের সংগঠন রোহিঙ্গা ইয়ুথ অ্যাসোসিয়েশন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি দেশটিকে মিয়ানমারের গণহত্যার বিচার করতে ও দ্রুত প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক জনমত তৈরি করতে বিচারিক ট্রাইব্যুনাল গঠনের আহ্বান জানিয়ে প্রচার কার্যক্রম শুরু করেছে।
তাদের একটি পোস্টারে বলা হয়েছে, ‘রোহিঙ্গা গণহত্যাকে স্বীকৃতি দেওয়ায় আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি পাশাপাশি আমরা আহ্বান করছি তারা যেন দ্রুত বিচারিক ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়।’
এ প্রসঙ্গে সংগঠনটির মুখপাত্র উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা কিন মং আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা আশা করছি যুক্তরাষ্ট্র যদি দ্রুত গণহত্যার বিরুদ্ধে জাতিসংঘে একটি বিচারিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করে তাহলে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মিয়ানমার সরকার আমাদের প্রত্যাবাসন করবে। এক্ষেত্রে আমরা বাংলাদেশ সরকারের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতা চালানোর অনুরোধ জানাচ্ছি।’
এদিকে, জাতিসংঘে মার্কিন সিনেটের পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির সদস্য ও ডেমোক্র্যাট সিনেটর জেফ মার্কল এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ‘রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বরতাকে বাইডেন প্রশাসন শেষ পর্যন্ত গণহত্যা হিসেবে দেওয়া স্বীকৃতি প্রশংসার দাবিদার। একটি নিষ্ঠুর শাসকগোষ্ঠীকে জবাবদিহির আওতায় আনতে এটি একটি বিশেষভাবে গুরুত্ববহ পদক্ষেপ।’
যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই এ ক্ষেত্রে বিশ্বের সামনে নেতৃত্বে আসতে হবে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করেন মার্কল।
প্রসঙ্গত, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী অভ্যুত্থান করে দেশটির নির্বাচিত বেসামরিক সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার এক বছরেরও বেশি সময় পরে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে এমন ঘোষণা এল।
এর আগে, ২০১৮ সালের একটি প্রতিবেদনে দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর ‘মিয়ানমার সরকার সে দেশের উত্তরের রাখাইন রাজ্যে ভয়ানক, বিস্তৃত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সেখানকার জনগোষ্ঠীর মধ্যে ত্রাস সৃষ্টি করেছে এবং রোহিঙ্গাদের আবাস থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে’ উল্লেখ করে।