শারদীয় দুর্গাপূজার ছুটি শুরু হয়েছে আজ বৃহস্পতিবার। এর সঙ্গে সাপ্তাহিক ছুটিগুলো যোগ হয়ে চার দিনের ছুটি পেয়েছে অনেকেই। এই লম্বা ছুটিতে অবকাশ যাপনে দেশের নানা প্রান্ত থেকে কক্সবাজার ছুটে আসছেন পর্যটকেরা। আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পর্যটকেরা শহরের সমুদ্রসৈকত ও আশপাশের পর্যটনকেন্দ্রে ভিড় করছেন।
পর্যটন শহর কক্সবাজার ও আশপাশের পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট, গেস্ট হাউস ও কটেজে ১ লাখ ৭০ হাজার পর্যটকের জন্য রাতযাপনের ব্যবস্থা রয়েছে। আগামীকাল শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত শতভাগ কক্ষ বুক হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। সে জন্য পর্যটকদের আগেভাগেই হোটেল বুকিংয়ের পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।
জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন, ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে সম্প্রতি দেশের প্রধান এই পর্যটনকেন্দ্র পর্যটক শূন্য হয়ে পড়েছিল। তবে গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে কক্সবাজারে পর্যটক আসা শুরু হয়। পর্যটন দিবস উপলক্ষে হোটেল কক্ষ ভাড়ায় ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিয়েও তেমন পর্যটক ঘুরতে আসেননি। তবে পর্যটকের চাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায়ীরা কক্ষ ভাড়ার ওপর ছাড় প্রত্যাহার করে নেন বলে জানা গেছে।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী সমুদ্রসৈকতে গিয়ে দেখা গেছে, সমুদ্রসৈকতে ভরপুর পর্যটক। দীর্ঘদিন নিষ্প্রাণ থাকা সৈকত তীর সেই পুরোনো রূপে ফিরেছে।
দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সৈকতের এই তিন স্পটে অন্তত ৫০ হাজার পর্যটক সমুদ্র দর্শনে নেমেছেন বলে জানান জেলা প্রশাসনের বিচকর্মীদের সুপারভাইজার বেলাল হোসেন। তিনি বলেন, কক্সবাজারে এখন লাখো পর্যটক অবস্থান করছেন।
সুগন্ধা পয়েন্টে দুই সন্তানের সঙ্গে আনন্দ-উচ্ছ্বাসের মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দী করছিলেন মাসুম সিদ্দিকী। তিনি রাজধানীর মালিবাগ থেকে এসেছেন। সরকারি চাকরিজীবী।
মাসুম সিদ্দিকী বলেন, ‘দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কাজে-কর্মে বেশ চাপের মধ্যে আছি। সবকিছু এখনো অস্বাভাবিক। চার দিনে ছুটি কক্সবাজার ও বান্দরবান কাটানোর পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু বান্দরবান যাওয়া হচ্ছে না।’
সিলেটের বিয়ানীবাজার থেকে সপরিবারে এসেছেন ব্যবসায়ী শাহাব উদ্দিনের পরিবার। শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘লম্বা ছুটি পেলেই পরিবার নিয়ে কক্সবাজার ছুটে আসি।’
বাস পরিবহন ব্যবসায়ীরা জানান, আগামী রোববার পর্যন্ত কক্সবাজারে ৮৫টি কোম্পানির ৮ হাজার বাস আসা-যাওয়া করবে। এসব বাসের বেশির ভাগই টিকিট অগ্রিম বুকিং রয়েছে। ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথে দুর্গাপূজা উপলক্ষে বিশেষ ট্রেনও চলবে। তবে সেখানেও আসন খালি নেই।
তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত তারকা ও মাঝারি মানের সব হোটেল-মোটেলে কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে। কিছু রিসোর্ট, গেস্ট হাউস ও কটেজে কক্ষ খালি থাকলেও তা আজ-কালের মধ্যে বুকিং হয়ে যাবে। ফলে পর্যটকেরা যাতে ভোগান্তির শিকার না হয়, তার জন্য অনলাইনে রুম বুকিংয়ে আমরা উৎসাহিত করছি।’
চলতি মৌসুমে এবারের ছুটিতে সর্বোচ্চ পর্যটক আসছেন বলে জানান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা এবং সৈকতের প্রতিমা বিসর্জন উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। পাশাপাশি পর্যটকদের হয়রানি রোধ ও সেবা নিশ্চিত করতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে নামানো হয়েছে।’